Posts

গল্প

পোড়া বাড়ি

February 15, 2025

Md Eyamin

Original Author মো:ইয়ামিন

19
View

অনেকক্ষণ হয়ে গেল সাকিন বসে বসে রাতুল ও নিশাতের জন্য অপেক্ষা করছে। আজ সবার আবিল কাকার দোকানে দেখা করার কথা। সাকিন, রাতুল ও নিশাত আজ ওদের স্কুলের পেছনের পাহাড়ের পেছনের গ্রামটাতে ঘুরতে যাবে। ওই গ্রামটাতে একটা পোড়া বাড়ি আছে, ওই বাড়িটা দেখার জন্যই মূলত ওরা ওই গ্রামটাতে যাচ্ছে। ওই পোড়া বাড়ি সম্পর্কে ওরা ওদের দাদা-ঠাকুমার কাছে অনেক গল্প শুনেছে।

আধঘণ্টা হয়ে গিয়েছে, রাতুল এসেছে তবে নিশাতের এখনও কোনো খোঁজ নেই। তাই ওরা নিশাতকে ছাড়াই রওনা হয়েছে গ্রামটার উদ্দেশ্যে। গ্রামটাতে পৌঁছাতে হলে ওদের বিরাট বড় একটা পাহাড় পার হতে হবে। পাহাড়টা বেশ বড়, অনেক সময় লাগবে পার হতে।

দুই ঘণ্টা ধরে পাহাড়টাতে হাঁটার পর ওরা পাহাড়টা পার হতে পারল। অবশেষে গ্রামটাতে পৌঁছল ওরা। গ্রামটাকে প্রথম দেখছে ওরা, গ্রামটা বেশ সুন্দর। সবুজ গাছপালায় ভরা গ্রামটা বেশ নীরব।

পোড়া বাড়িটা কোন দিকে তা ওরা জানে না, তাই একজনকে জিজ্ঞেস করবে। সামনে এক চার দোকানের ওদের বয়সী এক ছেলেকে দেখতে পেল। ওই ছেলেকে জিজ্ঞেস করল, "পোড়া বাড়িটা কোন দিকে, একটু বলতে পারবে?"

ছেলেটা জবাবে বলল, "এখান থেকে সোজা গিয়ে বামে গেলেই একটা নদী, সেই নদীর ডান দিকের রাস্তাটা দিয়ে সোজা এগোলেই পোড়া বাড়ি।"

"আচ্ছা, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ," রাতুল বলল।

ছেলেটার বলা পথ অনুসারে হাঁটতে হাঁটতে ওরা নদীর কাছে পৌঁছে গেল। নদীটা বেশ বড়, অনেক জেলেরা নৌকা নিয়ে মাছ ধরছে। নদীর পানি একদম পরিষ্কার, কোনো দূষণ নেই।

নদীর কাছে এসে ওরা দুইটা রাস্তা দেখতে পেল, একটা রাস্তা বামে গেছে আর আরেকটা রাস্তা ডানে গেছে। ছেলেটা বলেছিল ডান দিকের রাস্তা ধরে সোজা এগোলেই পোড়া বাড়ি। তাই ওরা ডান দিকের রাস্তা ধরেই সোজা এগোতে শুরু করল।

হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে পোড়া বাড়িটার কাছে পৌঁছে গেল সাকিন ও রাতুল। বাড়িটা দোতলা। বাড়ির সামনে একটা বেঞ্চ দেখতে পেল ওরা। সেখানে বসে সাকিন ও রাতুল বাড়িটাকে দেখছে। তখন এক বৃদ্ধ লোক ওদের কাছে এসে বসল। বৃদ্ধ লোকটা রাতুল ও সাকিনকে জিজ্ঞেস করল, "তোমরা কী এখানে নতুন এসেছ?"

রাতুল বলল, "হ্যাঁ, আমরা এখানে নতুন।"

বৃদ্ধের প্রশ্ন, "এই বাড়িটার কাছে কেন এসেছ?"

সাকিন বলল, "এই বাড়িটা সম্পর্কে আমাদের দাদা-ঠাকুমার কাছে অনেক গল্প শুনেছি, তাই একবার দেখতে এসেছি।"

বৃদ্ধ বলল, "বাড়িটা সম্পর্কে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। এই বাড়িটা আসলে আমার ঠাকুরদার ছিল।"

রাতুল বৃদ্ধকে প্রশ্ন করল, "আপনার ঠাকুরদার বাড়ি পুড়ল কীভাবে?"

বৃদ্ধ জবাবে বলল, "এই বাড়িটা পোড়ার পেছনে অনেক বড় একটা কাহিনী আছে। তবে কেউ সেই কাহিনী বিশ্বাস করে না। তোমাদের বললে তোমরাও বিশ্বাস করবে না।"

সাকিন বলল, "আমরা বিশ্বাস করব, আপনি বলুন।"

বৃদ্ধ লোকটা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলতে শুরু করল, "আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা। এই পাহাড়ের কাছে একটি সুড়ঙ্গে অদ্ভুত এক প্রাণী বাস করত। এই প্রাণীকে কেউ কখনো দেখেনি। এই প্রাণীটা সেই সুড়ঙ্গের মধ্যে গ্রামবাসীদের রাতের অন্ধকারে টেনে নিয়ে যেত। যাদের একবার ধরে নিয়ে যেত, তারা আর কখনো ফিরে আসত না। এই প্রাণীটা তাদের কী করত, তা সঠিকভাবে জানা যায়নি।

প্রাণীটার উৎপাত দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিল। তাই গ্রামের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল এই প্রাণীটাকে যেভাবেই হোক মেরে ফেলতে হবে। যা ভাবা তাই কাজ। গ্রামের সকলে মিলে পরিকল্পনা করল, প্রাণীটা যেহেতু সেই সুড়ঙ্গে থাকে, সেই সুড়ঙ্গেই তারা আগুন ধরিয়ে দেবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এক রাতে গ্রামের সবাই প্রাণীটার সুড়ঙ্গে আগুন ধরিয়ে দিল। আগুনে সুড়ঙ্গটা পুড়ে গেল, সঙ্গে প্রাণীটাও। তবে সুড়ঙ্গের আগুন আস্তে আস্তে চারদিকে ছড়াতে শুরু করল। একপর্যায়ে আগুন ছড়াতে ছড়াতে গ্রামে পৌঁছে গেল। তারপর পুরো গ্রামটা পুড়ে গেল।

গ্রামবাসীদের মধ্যে অনেকেই মারা গেল সেই আগুনে। পরবর্তীতে গ্রামের বাড়িগুলো নতুন করে গড়ে তোলা হয়।"

রাতুল বলল, "আপনি কেন আপনার ঠাকুরদার বাড়ি পুনর্নির্মাণ করেননি?"

বৃদ্ধ জবাবে বলল, "আমিও আমার ঠাকুরদার বাড়ি পুনর্নির্মাণ করতে চেয়েছিলাম। তবে আমার তেমন সামর্থ্য নেই বলে পারিনি।"

বৃদ্ধ বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়াল। তারপর রাতুল ও সাকিনকে উদ্দেশ্য করে বলল, "এখানে বেশিক্ষণ থেকো না, বাড়ি চলে যাও।" তারপর বৃদ্ধ হাঁটতে হাঁটতে কোথায় যেন চলে গেল।সাকিন ও রাতুলও বেঞ্চ থেকে উঠে হাটতে শুরু করল।

যেই রাস্তা দিয়ে ওরা পোড়া বাড়িতে এসেছে, ঠিক সেই রাস্তা অনুসরণ করে হাঁটছে ওরা।পথে রাতুল সাকিনকে প্রশ্ন করল, "সাকিন, তোর কি ওই লোকটার কথা সত্যি মনে হয়?"

সাকিন জবাবে বলল, "লোকটার বলা কথাগুলো নিয়ে তুই কেনো এত ভাবছিস?"

রাতুল বলল, "লোকটার কথা আমার কাছে কেমন জানি অদ্ভুত আর রহস্যময় মনে হচ্ছে।"

সাকিন বলল, "তুই বেশি ভাবছিস। এত ভাবিস না, শুধু মন দিয়ে হাঁটতে থাক।"

হাঁটতে হাঁটতে রাতুল ও সাকিন সেই চার দোকানের কাছে চলে এল। যেই দোকানের ছেলেটাকে তারা জিজ্ঞেস করেছিল পোড়া বাড়িটার কথা। সাকিন ভাবল ছেলেটার কাছে গিয়ে ওর নাম জিজ্ঞেস করবে, কারণ ছেলেটা ওদের অনেক উপকার করেছে।

সাকিন কিছু বলার আগেই ছেলেটা বলে উঠল, "পোড়া বাড়িটা দেখে এসেছ?"

রাতুল জবাব দিল, "হ্যাঁ, পোড়া বাড়িটা দেখে এসেছি।"

ছেলেটা কিছু বলার আগেই সাকিন বলল, "তোমার নামটাই তো জানা হলো না। তোমার নাম কী?"

ছেলেটা বলল, "আমার নাম সৈকত। তোমাদের নাম কী?"

রাতুল বলল, "আমার নাম রাতুল আর ওর নাম সাকিন।"

সাকিন ছেলেটাকে বলল, "তোমার সঙ্গে পরিচিত হয়ে ভালো লাগল। আর তুমি কি এই চার দোকানেই কাজ করো?"

ছেলেটা বলল, "হ্যাঁ, আমি এই চার দোকানেই কাজ করি। তোমরা কি চা খাবে? চা দিই?"

সাকিন বলল, "না, আজ থাক। অন্য কোনোদিন আসব।"

রাতুল বলল, "আজ যাই। তাহলে অন্য কোনোদিন দেখা হবে। বিদায়।"

সৈকত মাথা নেড়ে বলল, "আচ্ছা, অন্য কোনোদিন দেখা হবে। বিদায়।"

সাকিন ও রাতুল সৈকতকে বিদায় জানিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিল।ওদের আবার এই বড় পাহাড়টা পার হতে হবে,বাড়ি যেতে হলে।

Comments

    Please login to post comment. Login