Posts

ফিকশন

”তাদের পৃথিবী”

February 15, 2025

Israt Jahan

Translated by Zara

28
View

২০৪৫ সাল। পৃথিবী এখন প্রযুক্তির চরম শিখরে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, এবং মহাকাশ ভ্রমণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু এই উন্নতির মাঝেও কিছু রহস্য রয়ে গেছে যা বিজ্ঞান আজও ব্যাখ্যা করতে পারেনি।

ড. আরিয়ান রহমান, একজন তরুণ পদার্থবিদ, কাজ করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডভান্সড রিসার্চ ল্যাবে। তিনি মহাকাশের একটি অদ্ভুত সিগন্যাল নিয়ে গবেষণা করছিলেন, যা গত কয়েক মাস ধরে পৃথিবীতে আসছে। সিগন্যালটি এতটাই জটিল ছিল যে তা ডিকোড করতে গিয়ে তার দল হিমশিম খাচ্ছিল।

একদিন রাতের বেলা, যখন ল্যাবে সবাই চলে গেছে, আরিয়ান একা কম্পিউটারের সামনে বসে ছিলেন। হঠাৎ তার স্ক্রিনে একটি অদ্ভুত কোড আসতে শুরু করে। এটি কোনো সাধারণ কোড নয়, মনে হচ্ছিল যেন এটি একটি বার্তা, একটি আহ্বান। আরিয়ান বিস্মিত হয়ে কোডটি ডিকোড করার চেষ্টা করলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি বুঝতে পারলেন, এটি একটি স্থান-কালের স্থানাঙ্ক, যা নির্দেশ করছে পৃথিবীর একটি নির্দিষ্ট স্থানের দিকে।

দ্বিতীয় অধ্যায়: রহস্যময় স্থান

স্থানাঙ্ক অনুসরণ করে আরিয়ান এবং তার দল বাংলাদেশের সুন্দরবনের গভীরে পৌঁছালেন। সেখানে তারা একটি প্রাচীন গুহার সন্ধান পেলেন, যা আগে কখনো আবিষ্কৃত হয়নি। গুহার ভিতরে প্রবেশ করতেই তারা দেখলেন, দেয়ালে অদ্ভুত সব চিহ্ন এবং প্রতীক আঁকা। এগুলো দেখে মনে হচ্ছিল যেন এটি কোনো উন্নত সভ্যতার তৈরি।

গুহার গভীরে তারা একটি ধাতব দরজা পেলেন, যা দেখতে সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তির মতো। দরজাটি খোলার চেষ্টা করতেই হঠাৎ একটি কৃত্রিম কণ্ঠস্বর শোনা গেল, "স্বাগতম, ড. আরিয়ান। আমরা তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।"

তৃতীয় অধ্যায়: অতীতের সাক্ষাৎ

দরজা খুলতেই আরিয়ান এবং তার দল একটি বিশাল কক্ষে প্রবেশ করলেন, যা দেখতে একেবারে ভিনগ্রহী প্রযুক্তির মতো। সেখানে একটি হোলোগ্রাম জ্বলজ্বল করে উঠল, এবং একটি মানুষের আকৃতির ছবি দেখা গেল। ছবিটি নিজেকে "এলিয়েনা" বলে পরিচয় দিল, যে এই পৃথিবীরই বাসিন্দা, কিন্তু হাজার বছর আগের।

এলিয়েনা ব্যাখ্যা করল, সে একটি উন্নত সভ্যতার অংশ ছিল, যা প্রাচীন পৃথিবীতে বসবাস করত। কিন্তু এক ভয়ানক দুর্যোগের কারণে তাদের সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায়। তারা এই গুহাটি তৈরি করেছিল ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা রেখে যাওয়ার জন্য। আরিয়ানের আবিষ্কৃত সিগন্যালটি ছিল সেই বার্তা, যা শুধুমাত্র একজন যোগ্য বিজ্ঞানীই ডিকোড করতে পারতেন।

চতুর্থ অধ্যায়: নতুন যাত্রা

এলিয়েনা আরিয়ানকে বলল, তাদের সভ্যতার শেষ আবিষ্কার ছিল "টাইম-স্পেস ব্রিজ", যা দিয়ে তারা ভিন্ন সময়ে ভ্রমণ করতে পারত। কিন্তু এই প্রযুক্তি ব্যবহারের আগেই তাদের সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায়। এলিয়েনা আরিয়ানকে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অতীতে ফিরে গিয়ে তাদের সভ্যতা বাঁচানোর অনুরোধ করল।

আরিয়ান এবং তার দল এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন। তারা টাইম-স্পেস ব্রিজ ব্যবহার করে হাজার বছর আগের পৃথিবীতে পৌঁছালেন, যেখানে এলিয়েনার সভ্যতা তাদের শেষ দিনগুলো কাটাচ্ছিল। সেখানে তারা দেখলেন, কীভাবে একটি মহাজাগতিক ঘটনা তাদের সভ্যতা ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

পঞ্চম অধ্যায়: শেষ সংগ্রাম

আরিয়ান এবং তার দল এলিয়েনার সভ্যতার বিজ্ঞানীদের সাথে মিলে সেই মহাজাগতিক ঘটনা ঠেকানোর চেষ্টা করলেন। তারা একটি পরিকল্পনা করলেন, যার মাধ্যমে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিবর্তন করে সেই বিপদ এড়ানো যাবে। কিন্তু এই কাজটি করতে গিয়ে তাদের নিজেদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ল।

শেষ মুহূর্তে, আরিয়ান এবং এলিয়েনা মিলে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করলেন। পৃথিবী রক্ষা পেল, কিন্তু আরিয়ান এবং তার দল আবার বর্তমান সময়ে ফিরে এলেন। গুহার ভিতরে তারা এলিয়েনার শেষ বার্তা শুনলেন, "তোমরা আমাদের সভ্যতার ইতিহাস বাঁচিয়েছ। এখন এই জ্ঞান তোমাদের হাতে।"

শেষ অধ্যায়: নতুন সূচনা

আরিয়ান এবং তার দল গুহা থেকে বেরিয়ে এলেন, কিন্তু তাদের মনে হাজার প্রশ্ন। তারা এলিয়েনার সভ্যতার জ্ঞান নিয়ে ফিরলেন, যা মানবসভ্যতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। কিন্তু সেই সাথে তারা বুঝতে পারলেন, মহাবিশ্বে আরও কত রহস্য লুকিয়ে আছে, যা এখনও অপেক্ষা করছে আবিষ্কারের জন্য।

আরিয়ান আকাশের দিকে তাকালেন। তার মনে হচ্ছিল, যেন এলিয়েনা তাকে বলছে, "এই যাত্রা শেষ নয়, এটি শুধু শুরু।"

Comments

    Please login to post comment. Login