গ্রামের নাম কুঠিবাড়ি। এ গ্রামে রাত নামলেই সবাই দরজা-জানালা বন্ধ করে শুয়ে পড়ে। কারণ, এই গ্রামে রাতের বেলা অন্ধকারে কে যেন ডাকে। কেউ জানে না কে ডাকে, কিন্তু যে ডাক শুনেছে, সে আর ফেরেনি।
একদিন রাতের বেলা আকাশে কালো মেঘ জমে ছিল। বাতাসে গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ছিল। গ্রামের এক যুবক, রফিক, বাড়ি ফিরছিল। সে শহরে কাজ করে, আজ অনেক দিন পর বাড়ি আসছে। রাস্তায় আলো নেই, শুধু অন্ধকার। হঠাৎ সে শুনতে পেল কে যেন তার নাম ধরে ডাকছে—"রফিক... রফিক..."
ডাকটা যেন খুব কাছ থেকে আসছে, কিন্তু চারদিকে কেউ নেই। রফিকের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। সে দৌড়াতে শুরু করল। কিন্তু ডাকটা আরও জোরে আসতে লাগল—"রফিক... এদিকে আসো..."
রফিক দেখল, সামনে একটা পুরনো বাড়ি। বাড়িটা অনেক দিন পরিত্যক্ত। জানালা দিয়ে যেন কেউ তাকে ইশারা করছে। রফিকের মনে হলো, ডাকটা যেন এই বাড়ি থেকেই আসছে। সে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ির দরজায় গেল। দরজা নিজে থেকেই খুলে গেল।
ভেতরে অন্ধকার। রফিক টর্চ জ্বালালো। দেখল, ঘরের মাঝে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার মুখে হাসি, কিন্তু চোখ দুটো কালো, যেন দুটো গর্ত। মেয়েটা বলল, "তুমি এসে গেছো? আমি অনেক দিন ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।"
রফিক চিৎকার করে বলল, "তুমি কে? তুমি কি চাও?"
মেয়েটা হাসতে হাসতে বলল, "আমি তোমার বউ হব।"
রফিক পেছনে হটতে গেল, কিন্তু দরজা নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে গেল। মেয়েটা এগিয়ে এল। রফিক দেখল, মেয়েটার পা নেই। সে ভেসে আসছে। রফিকের টর্চ নিভে গেল। অন্ধকারে শুধু শুনতে পেল, "তুমি আমার... তুমি আমার..."
পরের দিন সকালে গ্রামের লোকেরা রফিকের লাশ পেল। তার মুখে ভয়ঙ্কর এক হাসি। চোখ দুটো যেন জ্বলজ্বল করছে।
এর পর থেকে গ্রামের লোকেরা বলে, রাতের বেলা সেই বাড়ি থেকে কেউ ডাকলে সাড়া দিও না। কারণ, যে ডাকে সাড়া দেয়, সে আর ফেরে না।
শেষ।