আকাশে মেঘ জমেছে। হালকা বাতাস বইছে, যেন আসন্ন বৃষ্টির বার্তা নিয়ে এসেছে। শহরের ব্যস্ততার মাঝে, হাসপাতালের এককোণে বসে আছে আদনান। তার হাতে ধরা একটা চিঠি, কাঁপতে থাকা আঙুলে শক্ত করে ধরে আছে যেন এটিই তার জীবনের শেষ অবলম্বন।
চিঠির ওপরে প্রেরকের নাম—"তাওসিফ।"
আদনানের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। বন্ধুর শেষ চিঠি...
আদনান আর তাওসিফ—শৈশব থেকেই একে অপরের ছায়া। স্কুলের মাঠ থেকে শুরু করে কলেজের গলিগুলো, তাদের গল্পে ভরা। একে অপর ছাড়া কখনো কিছু কল্পনাও করেনি।
তাওসিফ ছিল সেই বন্ধু, যে জীবনের যেকোনো মুহূর্তে হাসি এনে দিতে পারত।
— "এই, দোস্ত! একদিন আমরা বড় হবো, সফল হবো, তারপর একটা বিশাল ট্যুর দেবো!"
আদনান হেসে বলত,
— "ঠিক আছে, কিন্তু খরচ তুই দিবি!"
তাওসিফ সবসময় বলত,
— "দোস্ত, আমি থাকলে তোকে কোনোদিন কষ্ট পেতে দেবো না!"
কিন্তু জীবন সবসময় আমাদের চাওয়া অনুযায়ী চলে না।
একদিন হঠাৎই তাওসিফ অসুস্থ হয়ে পড়ল। প্রথমে সাধারণ ক্লান্তি মনে হলেও, ডাক্তার জানালেন—সে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত।
আদনান কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিল না।
— "এইসব পাগলের কথা! তুই ঠিক হয়ে যাবি, দেখিস!"
তাওসিফ মুচকি হেসে বলল,
— "জানিস, আমি মরে গেলে তুই খুব কাঁদবি..."
আদনান ধমক দিয়ে বলল,
— "এইসব বাজে কথা বলবি না!"
কিন্তু তাওসিফ জানত, তার সময় বেশি নেই।
তারপর একদিন খবর এল—তাওসিফ আর নেই।
আদনানের পৃথিবী যেন থেমে গেল। বন্ধুর অনুপস্থিতি তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে নিঃস্ব করে দিল।
তাওসিফের মা একদিন এসে আদনানের হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিলেন,
— "এটা তোর জন্য রেখে গেছে।"
হাত কাঁপতে কাঁপতে চিঠিটা খুলল আদনান।
"দোস্ত,
যদি এটা পড়িস, তাহলে বুঝবি আমি চলে গেছি। কিন্তু আমি তোকে কাঁদতে দেখতে চাই না। তোকে একটা শেষ উপহার দিলাম—আমার স্মৃতিগুলো। তুই এগুলো নিয়ে বাঁচিস, তোর প্রতিটা হাসিতে আমার অস্তিত্ব খুঁজিস। আর সেই ট্যুরটা? করতেই হবে! তুই আর আমি সবসময় একসঙ্গে থাকব, অন্তত তোর মনে..."
— তোর তাওসিফ।
আকাশের মেঘ ভারী হয়ে এল। বৃষ্টি শুরু হলো।
আদনান চিঠিটা বুকে চেপে ধরল।
বন্ধুত্ব কখনো শেষ হয় না। হয়তো কেউ দূরে চলে যায়, কিন্তু স্মৃতির গভীরে সে চিরকাল বেঁচে থাকে...