Posts

গল্প

স্মৃতির বাগান।

February 17, 2025

Chondrokotha

119
View

স্মৃতির বাগান।

রান্নাঘরের জানালা দিয়ে পশ্চিম আকাশে ঈদের চাঁদ চিকন সুতোর মতো দূশ্যমান হলো। শিফা খুশিতে তার মেয়েদের কে ডেকে চাঁদ দেখালো!  চাঁদ দেখার দোয়া পড়ালো মুখে মুখে।মেয়েরা খুশিতে উচ্ছ্বসিত! প্রতি মাসেই আকাশে চাঁদ উঠে কিন্তু ঈদের চাঁদ নিজের চোখে দেখার আনন্দ তুলনাহীন।
  
নিজের অজান্তেই শিফার মন খারাপ হয়ে গেলো। ২৪ টা বছর মাকে ছাড়া, ১৩ বছর বাবাকে ছাড়া ঈদ কেটেছে... 
এর মধ্যে জীবন তার নিয়মে চলছে, কত পরিবর্তন এলো গেলো!

৭/৮ বছর বয়সে মাকে হারায় শিফা, মায়ের সাথে কাটানো ঈদের কোন স্মৃতি তেমন একটা মনে করতে পারেনা,হয়ত অনেক আনন্দের ছিলো, প্রাণবন্ত, উৎসবমুখর ছিলো।।

ইফতার ও নামাজ সেরে মেয়েদের আবদারে মেহেদী লাগাতে বসলো। দুজনেই মায়ের কাছে আবদার করলো ছোটবেলার ঈদের গল্প বলতে হবে। একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনের আনাচে কানাচে ঘাপটি মেরে বসে থাকা একটা স্মৃতি তুলে আনলো শিফা।

মেহেদী লাগাতে লাগাতে বললো তোমাদের মতো  যখন আমারও বয়স ৬/৭ ছিলো তখন আমি ও মেহেদী লাগাতাম তবে সেটা ছিলো গাছের পাতা। এখনকার মতো এসব ক্যামিকেল যুক্ত টিউব মেহেদী  না।দুই হাত ভরে মেহেদী লাগিয়ে ঘুমিয়ে যেতাম, সকালে উঠেই হাত টকটকে লাল হয়েছে কিনা দেখতাম,মেহেদীর ঘ্রাণ নিতাম। কি যে মিষ্টি ছিলো সেই মূহুর্ত টা! এই বলে একটু থেমে শিফা আবার বলতে শুরু করলো,-

আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখনকার এক ঈদের কথা-
আমি  গাছ, ফুল কতো ভালোবাসি সেটাতো তোমরা জানোই,তো আমাদের বাসার দরজার বাইরে বারান্দা ছিলো আমি সেখানে অনেক গাছ লাগাতাম, পানি দিতাম, ফুল ফুটলে সে কি আনন্দ আমার! আমার আব্বু গোলাপ ফুল আনতো আমার জন্য আমি
সেটা একটা গ্লাসের মধ্যে পানি দিয়ে জিইয়ে রাখতাম। আম্মু আমাকে মিষ্টি কুমড়ার বীজ দিতো আমি সেগুলো মাটিতে রোপন করতাম, প্রতিদিন চেক করতাম উঠেছে কিনা,   যখনি একটু কচি পাতা মাটির নিচ থেকে মাথা তুলতো তখন যেন আমি বিশ্বজয় করেছি!  এমন আনন্দ করতাম।

আমরা ঈদ করতে বাড়িতে যাবো তাই বেশি করে পানি দিয়েছি,গাছগুলো ফেলে আমার মন চাইছেনা যেতে  তবুও যেতে হলো ।
যথারীতি ঈদ শেষে বাসায় ফিরে দেখলাম আমার গাছগুলো উপড়ে ফেলে দিয়েছে কেউ! কোনটার ডাল ভাঙা কোনটার ফুল ছেঁড়া, টবও ভেঙে দিয়েছে।  আমার কান্না থামায় কে? খাওয়া দাওয়া ছেড়ে আমি অসুস্থ হয়ে গেলাম।আমার অবস্থা দেখে আম্মু আব্বুও অস্থির হয়ে গেলেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেলো জমিদারের দুষ্ট ছেলের কান্ড এটা। আম্মু আবার নিজ হাতে আমার বাগানটা ঠিক করে দিলো।  পরের দিন আরো গাছ কিনে এনে দিলো তারপর আমার মন শান্ত  হলো 
হাসি ফিরলো আমার মুখে।

মেয়েরা হতবাক হয়ে মায়ের মুখে এমন ঘটনা শুনে তাদের চোখেও পানি চলে এলো।শিফা তার মেয়েদের বুকে টেনে আদর করে বললো এই দেখো সেই ৬/৭ বছরের মেয়েটা এখন তোমাদের মা,
আর আমার মা সেই ঘটনার পরের বছর ইদের আগেই আল্লাহর মেহমান হয়ে গেলেন...!

দুই মেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো এখন থেকে আমরাই তোমার মা...

Comments

    Please login to post comment. Login