Posts

গল্প

"তোমার অপেক্ষায়..."

February 17, 2025

Boros Marika

143
View

প্রথম দেখা

শীতের শেষ রাত। তুষারপাত এখনও থেমে যায়নি। হাসপাতালের করিডোরে ধীর পায়ে হাঁটছিল এক যুবক—সেওকজিন। তার চোখে গভীর বিষণ্ণতা, দৃষ্টি যেন হারিয়ে গেছে কোথাও।

"রক্ত দিতে এসেছেন?" নার্সের কণ্ঠে ফিরে এলেন তিনি।
"হ্যাঁ…" কণ্ঠটা ভারী, ভাঙা।

একই সময়ে, অন্যপ্রান্তে বসে ছিল এক কিশোরী, নাম ইয়ুনা। ধবধবে সাদা হাসপাতালে তার ছোট্ট শরীরটা আরও ক্ষীণ লাগছিল। ডাক্তারদের কথাগুলো তার কানে বাজছিল—"তোমার হৃদরোগের অবস্থা খুব খারাপ, অপারেশন ছাড়া বাঁচার উপায় নেই…"

সে একবারও চোখের জল ফেলেনি, শুধু জানালার বাইরে তাকিয়ে থেকেছিল। কিন্তু যখন সে সেওকজিনকে দেখল, তার বুকের ভেতর অদ্ভুত এক অনুভূতি জাগল।

অদ্ভুতভাবে, সেওকজিনও অনুভব করল যে তার দিকে কেউ তাকিয়ে আছে। সে ঘুরে তাকিয়ে দেখল তাকে—একটা মেয়ের চোখ, যেটা গভীর সমুদ্রের মতো শান্ত অথচ ব্যথায় পরিপূর্ণ।

এই প্রথমবার তারা একে অপরকে দেখল, অথচ কেউ কথা বলল না। কিন্তু তাদের ভেতর যেন অদৃশ্য এক সুতো জড়িয়ে গেল।


---

কাছে আসা

ইয়ুনা প্রতিদিন হাসপাতালের জানালার পাশে বসে সেওকজিনকে দেখত। সে লক্ষ্য করেছিল, এই মানুষটা প্রতিদিন রক্ত দিতে আসে, প্রতিদিন একই জায়গায় বসে থাকে, আর কাউকে খুঁজতে থাকে।

একদিন সাহস করে সে জিজ্ঞেস করল, "আপনি কাকে খুঁজছেন?"

সেওকজিন একটু চমকে তাকাল, তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলল। "আমার স্ত্রী…"

ইয়ুনার বুকটা কেঁপে উঠল। "আপনার স্ত্রী…?"

"হ্যাঁ, সে এই হাসপাতালেই ছিল। কিন্তু বাঁচানো যায়নি।"

ইয়ুনা কিছু বলল না। শুধু অনুভব করল, তার মতোই এই মানুষটাও প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ছায়ায় বেঁচে আছে।

সে হাসল, "আপনার স্ত্রী যদি দেখতে পেতেন, তিনি আপনাকে আবার ভালোবাসতে বলতেন।"

সেওকজিন কিছু বলল না, শুধু প্রথমবারের মতো তাকিয়ে দেখল ইয়ুনাকে। এক অনাথ মেয়ে, যার নিজের জীবনও সময়ের সাথে ঝুলে আছে।


---

ভালোবাসার আর্তনাদ

দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল। সেওকজিন অনুভব করল, সে ধীরে ধীরে ইয়ুনার জন্য দুর্বল হয়ে পড়ছে। তার হাসি, তার সাহস, তার অবিনশ্বর আত্মা—সবকিছুই সেওকজিনের মন ছুঁয়ে যাচ্ছিল।

কিন্তু সেওকজিনের বয়স ইয়ুনার চেয়ে ১৫ বছর বেশি। সে নিজেকে শাসন করতে চাইত।

"আমরা একসঙ্গে থাকতে পারব না, ইয়ুনা।"

"কেন? আমি কি আপনাকে বোঝা মনে হয়?"

"না… আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আর আমি জানি, এই ভালোবাসার শেষ নেই।"

ইয়ুনা তার হাত ধরল। "আমি তো জানি আমার সময় কম। তাহলে এই অল্প সময়ের জন্য হলেও আমাকে ভালোবাসতে দাও।"

সেওকজিন কিছু বলল না, শুধু তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।


---

শেষ ভালোবাসা

ইয়ুনার অপারেশনের দিন এগিয়ে আসছিল। কিন্তু অপারেশনের সম্ভাবনা মাত্র ১০%।

সেওকজিন প্রার্থনা করেছিল, যদি কিছু বিসর্জন দিতেই হয়, তবে সে তার জীবন দেবে, কিন্তু ইয়ুনাকে না হারাতে চায় না।

অপারেশনের দিন, তুষারপাত হচ্ছিল। ইয়ুনা হেসে বলল, "আপনি জানেন? আমি স্বপ্ন দেখেছি, আমি সুস্থ হয়ে গেছি, আমরা পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছি। আপনি আমার হাত ধরে বলছেন, 'চলো, নতুন জীবন শুরু করি।'"

সেওকজিন কাঁদছিল, কিন্তু হাসল। "তাহলে সেই স্বপ্নকেই সত্যি করবো, ঠিক আছে?"


---

অপারেশনের পর… ডাক্তার বেরিয়ে এলেন। সেওকজিন ছুটে গেলেন।

"সেওকজিন-শি… আমরা চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু…"

সেওকজিন আর কিছু শুনতে পেল না।

তার চোখের সামনে একমাত্র মানুষটা হারিয়ে গেল।


---

তোমার অপেক্ষায়...

বছর পেরিয়ে গেছে। সেওকজিন এখনো হাসপাতালের সেই জানালার পাশে বসে থাকে, যেখানে ইয়ুনা বসত।

তুষারপাতের রাতে, সে আকাশের দিকে তাকায়। মনে হয়, ইয়ুনা এখনো তাকিয়ে আছে, তার জন্য অপেক্ষা করছে।

সে ফিসফিস করে বলে, "আমিও অপেক্ষা করব, ইয়ুনা। হয়তো অন্য কোথাও, অন্য কোনো জীবনে, আমরা আবার দেখা করব।"

তুষারের মাঝে তার চোখে নীরব অশ্রু ঝরে পড়ে…

Comments

    Please login to post comment. Login