Posts

গল্প

রুপার কষ্টের দিন

February 17, 2025

mousumi akter mousumi

31
View

বাবা অসুস্থ হয়ে অচল অবস্তায় ঘরে সারাদিন পরে থাকে,,,,রুপা,মা মারা যাওয়া এক দুর্বাগা মেয়ে। বাবা ও পা ভেঙে অচল হয়ে গেছে। ঘরে আছে বড় ভাই এর বৌ।ততটা খারাপ ও নয় রুপার ভাবি।কিন্ত মা ছাড়া সব মেয়েরা অসহায়,, তাই রুপার জীবনে নেমে আসে খুবই অন্ধকার। রুপাদের বাড়িতে প্রতিবেশী হিসাবে তার চাচা সব সময় আসতো,, উনাকে কেউ কোন কিছু বলতো না রাতে দিনে সব সময় আসা-যাওয়া করতো,,,  ওই লোকটা ছিল দুষ্টু প্রকৃতির,,, প্রথম প্রথম এই জিনিসটা কেউ খেয়াল করেনি,,, ওই লোকটা রুপার ভাবির দিকে নজর দিয়েছিল। রুপার বাবা সেটা খেয়াল করে। রুপার ভাই ঢাকায় চাকরি করে এইজন্য বাড়িটা সব সময় খালি থাকে শুধু,, বাড়িতে শুধু রুপা আর রুপার ভাবি এবং রুপার বাবাই থাকতো। মাঝেমধ্যে রুপার সেই প্রতিবেশী চাচা বাড়িতে রাত্রেবেলা আসতো এবং রুপার বাবার সঙ্গে কথাবার্তা বলতো।। রুপার বাবা তো সারাদিন ঘরে পড়ে থাকে সেই জন্য কেউ তাকে কিছুই বলত না। রুপার ভাবী ভাবতো যে সেই লোকটা আসলে হয়তো তার শ্বশুরের ভালো লাগবে তাই তিনি করেননি। একদিন রুপার ভাবি ঘুমিয়ে আছে,,, আর রুপার সে প্রতিবেশী চাচা ঘরে বসে কথা বলছিল রুপার বাবার সাথে। রুপার বাবা খেয়াল করল লোকটা রুপার ভাবীর দিকে দিকে বারে বারে তাকাচ্ছে। রুপার বাবা খুব চালাক মানুষ ছিল সে বিষয়টা বুঝতে পারে,, তাছাড়া রুপার বাবা খুব রাগী মানুষও ছিল, রুপার বাবা নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারেনি ওই লোকটাকে হাতের কাছে একটা লাঠি ছিল সেটা দিয়ে একটা বাড়ি মারে। রুপার বাবা বলতে থাকে যে তুই আমার ঘরে এসে আমার বৌমার দিকে নজর দিচ্ছিস তোর পা ভেঙে গুড়ু করে দিতাম যদি আমি ভালো থাকতাম। এই মুহূর্তে আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা,,, লোকটা কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল,,, তারপর অনেকদিন হয়ে গেল লোকটা বাড়িতে তেমন একটা আসা-যাওয়া করে না। কিন্তু রুপার বাবার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়েছিল এবং সে মনে মনে ভেবেছিল যে তার কিভাবে ক্ষতি করা যায়। ওই দুষ্টু লোকটা রুপার পেছনে পড়ে গেল,,,, সে বুঝতে পারে যে রূপার ক্ষতি করলে রুপার বাবার  মান সম্মানের লাগবে। যেই ভাবা সেই কাজ শুরু করলো। প্রথম প্রথম রাস্তাঘাটে রুপার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করতে শুরু করলো।। একদিন হঠাৎ করে রুপার হাতে একটা ৫০০ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বলল খরচ করিস,, রুপা কোন কিছু বুঝতে পারার আগেই সেই লোকটা ওইখান থেকে চলে গেল। রুপা ভাবলো যে হয়তো সে অসহায় ভেবে করছে। কিন্তু  লোকটার ভিতরে যে অন্য কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে  সেটা রুপা বুঝতে পারেনি। আবার কিছুদিন পর রুপাকে রাস্তায় স্কুলে যাওয়ার সময় সে দাঁড় করালো এবং আবারও এভাবে কিছু টাকা হাতে দিল রুপা প্রথমে নিতে চাইনি,,, পরবর্তীতে খুব জোর করে টাকাটা দিল। রুপা ভয়ে কাউকে কিছুই বলল না। কিছুদিন পর হঠাৎ রাস্তায় লোকটা অন্যরকম একটা প্রস্তাব দিল,,, সেই লোকটা রুপাকে বলল আজকে আমি একজন কাস্টমার নিয়ে আসবো তুই তাকে খুশি করিস,,  রূপা তাকে জিজ্ঞেস করল আপনি কি বলছেন এগুলা আপনি কাকে বা নিয়ে আসবেন আর আমিই বা কি করতে পারি। তখন দুষ্টু লোকটা বলল কেন টাকা নেয়ার সময় কি তুই কিছু বুঝিস নাই আমি কি বলছিলাম,,, বলল আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যা নয়তো তোর সঙ্গে খুব খারাপ হবে। রুপা রাগের মাথায়  জুতা হাতে নিয়ে বলল আবার যদি আমাকে কিছু বল তাহলে আমি তোমাকে জুতাপিঠা করব। লোকটা চারদিকে তাকিয়ে দেখল কিছু মানুষ আসতেছে,, তাই সে বলল এর পরিণাম  খুব খারাপ হবে তুই দেখে নিস। রুপা এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলতে পারছিল না ভয়ে। কি করবে সেটাও ভেবে পাচ্ছি না,,, রুপার একটা ক্লাসমিট ছিল,,, বলতে গেলে রুপার ছেলে বন্ধু ছিল ওর সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল,,, ওরা দুজন একসঙ্গে বড় হয়েছে এবং একই স্কুল থেকে স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে।। সেই হিসেবে ছেলেটা রুপার খুব ভালো বন্ধু ছিল। পারিবারিক দিক দিয়ে ছেলেটা রুপার ভাতিজা হত। তাই তারা একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া আসা করতো। রুপা তাকে সবকিছু খুলে বলল সে বলল এ ব্যাপারে কোন চিন্তা করোনা, ওই লোকটা তোমার কিছুই করতে পারবে না। ওই লোকটা আস্তে আস্তে আবার রুপাদের বাড়িতে আসতে শুরু করলো রুপার বাবা ভাবল যে হয়তো সে তার ভুল বুঝতে পারছে তাই আর কিছু বলল না। হঠাৎ করে একদিন রুপার স্কুলের ড্রেস হারিয়ে গেল। সারা বাড়ি খুঁজেও রূপা তার স্কুলের ড্রেস খুঁজে পাচ্ছিল না,, রুপা পুকুর পাড় বিকেল বেলায় বসে ছিল, এমন সময় লোকটা আসলো। রুপা কে বলল কিরে তোর নাকি স্কুল ড্রেস হারিয়ে গেছে? রুপা অবাক হয়ে বলল আপনাকে কে বলছে? লোকটা বলল আমি নিজেই তো তোর ড্রেসটাকে নিয়েছি কে আবার বলবে। রুপা বলল আপনি এটা কেন করলেন, লোকটা বলল আজকে থেকে এভাবেই তোর ক্ষতি করব। রুপা বলল দেখেন আপনি এ ধরনের কাজ করলে কিন্তু খুব খারাপ হবে । আমি সবাইকে বলে দেবো আপনি আমার ক্ষতি করতে চাচ্ছেন,, লোকটা হেসে বললো তাতে আমার কিছু যায় আসে না, কোন প্রমাণ আছে আমি তোকে এই কথা বলছি। রুপা কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে চলে গেল। রুপার ভাবি ছিল খুবই সহজ সরল সে কোন বিষয়ে ততটা মাথা ঘামাত না। রোপা তাকে গিয়ে সব খুলে বলল কিন্তু তার ভাবি  তাকে পাত্তা দিল না এবং বলল তোর সঙ্গে এমনি মজা করছে হয়তো। কিছুদিন পর আবার রূপার বাংলা বই হারিয়ে ফেলল। রুপা তখন ঐ লোকটাকে সন্দেহ করল, ওই লোকটাকে সে যখন জিজ্ঞেস করল তখন লোকটা বলল, লোকটা বললো আমি কি জানি তোর বই কোথায় হারিয়ে গেছে। তখন গ্রীষ্মকালীন ছুটি ছিল, সেই কারণে রুপা তার বন্ধুর সঙ্গে  দেখা করতে পারছিল না। রুপা তার বন্ধুকে সব কিছু খুলে বলতে চাইছিল সেই জন্য ছোট ছেলেকে দিয়ে খবর পাঠাল।ছেলেটার নাম ছিল রাজু। ছেলেটা খবর পেয়ে রুপাদের বাড়ির সামনে  সামনে রাস্তায় আসে। রুপা আগে পিছে কিছু না ভেবে ছেলেটা সঙ্গে গিয়ে কথা বলে,, রুপা জানতো না যে দুষ্টু লোকটা সেই বিষয়টা  খেয়াল করে,, কিছু লোকদেরকে ডেকে এনে বলে,, দেখো রুপা আর রাজুর মধ্যে কি সম্পর্ক চলছে,,, এবং সেই লোকগুলা  ফোন দিয়ে বলে রুপাকে রাজুর সঙ্গে কথা বলতে না দেই,,, ওরা বলে রূপা আর রাজুর মধ্যে নাকি প্রেমের সম্পর্ক চলছে। রুপার ভাই রুপার ভাবীকে ফোন দিয়ে বলে আজ থেকে রুপার বাইরে যাওয়া বন্ধ, রুপার ভাবি এই বিষয়ে কিছুই জানতো না। রুপার ভাই রুপার ভাবীকে বলে এ রাজুর সঙ্গে  রুপা কথা বলতে না পারে সেদিকে খেয়াল রেখো। রুপার বাবি রূপাকে সবকিছু খুলে বলে, রুপা শুনে খুবই কষ্ট পায় কারণ রাজু ছাড়া  তার কোন বন্ধু ছিল না। কিছুদিন পর রুপাকে বাড়িতে আবার সেই লোকটা একা পেয়ে নানান কথা বলতে শুরু করে, রুপা কে বললো রাজু সঙ্গে তো খুব ভালই চলছে,, আরো বললো দেখলি তো কিভাবে আগুন লাগিয়ে দিলাম, এখন তোই আর তোর বাবা জল সে আগুনে। রুপা তখন শুধু কান্না করছিল কাউকে কিছু বলতে পারছিল না। রুপা তার ভাবিকে বলতে গেলে তার ভাবি বলে যে এখন নিজের দোষ অন্যের উপর চাপিয়ে দিচ্ছিস। রুপা বুঝতে পারে আজকে তার মা না থাকায় তার সঙ্গে এগুলো হচ্ছে। ওই লোকটা এখানেই থেমে থাকে নি,,, গ্রামের যত ফালতু ছেলেপেলে আছে সবাইকে রূপার পিছনে লাগিয়ে দেই। রাস্তাঘাটে ছেলেগুলা রুপাকে নানা ভাবে বিরক্ত করতে থাকে। এমনকি রাতের বেলায় বাড়িতে চালে ঢিল মারতে থাকে যাতে তারা শান্তিতে ঘুমাতে না পারে। তাছাড়া রুপার উপর নানা ভাবে বদনাম ছড়িয়ে দেয় সবাইকে বলে রুপার নাকি অনেকগুলা ছেলের  সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে। এমন ভাবে বানিয়ে বানিয়ে বলে সবাই বিশ্বাস করে নেয়।চারদিকে সবাই এখন শুধু রুপাকে নিয়ে নানান কথা বলতে শুরু করে। এদিকে রূপার ভাইয়ের কানেও এগুলা যায়,, রুপার ভাই রুপাকে ফোন দিয়ে অনেক ভাবে গালাগালি করে,,, শেষ পর্যন্ত রুপার পড়ালেখা বন্ধ হতে চলল। রুপার বাবা ছাড়া সবাই সবকিছুই বিশ্বাস করল।রুপার জন্য কোন ভালো জায়গা থেকে প্রস্তাব আসলে কুটনামি করে দিত দুষ্টু লোকটা। রুপা তো অসহায় তাই কিছু করতে পারছিল না এবং তার বাবাও কিছু করতে পারছিল না। লোকটা এতই খারাপ ছিল যে প্রায় সময় রুপাকে ভয় দেখাতো যে এসিড দিয়ে রূপাকে জ্বালিয়ে দেবে। সেই সময়ের রুপা স্কুলে যাওয়া ও বন্ধ করে দিল। রুপা খুব ভালো ছাত্রী  ছিল,, কিন্তু এই মানসিক চাপে রুপা পড়ালেখায় পিছিয়ে যেতে শুরু করল। দুঃসম্পর্কের আত্মীয় একটা ছেলে রুপাকে খুবই পছন্দ করত। সেই ছেলেটা সবকিছু জানার পরও রুপাকে ভুল বুঝিনি। কারন সে সব সময় রুপাকে ফলো করতো। দুষ্টু লোকটা সেই ছেলেটার কেউ বলতে শুরু করলো রুপা খুবই খারাপ মেয়ে। সেই ছেলেটা জানত যে লোকটা সবকিছু বানিয়ে বলছে। এই ভেবে ছেলেটা রুপাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু রুপার ভাই রাজি ছিলনা। মনে মনে রুপাও ছেলেটাকে পছন্দ করত। কিন্তু কেউ কাউকে কিছু বলেনি,,, এদিকে গ্রামে এতটাই রুপার সম্পর্কে বাজে কথা তোলা হলো যে সবাই রুপাকে ঘৃণার চোখে দেখতে শুরু করলো। রুপা সারাদিন কান্না করত রূপার ভাবিও রুপার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করল। রুপা কোনভাবেই নিজেকে বাঁচাতে পারছিল না। রুপার বাবা সবকিছু সহ্য করতে না পেরে হঠাৎ করে একদিন দুনিয়া থেকে চলে যায়। রুপা আরো অসহায় হয়ে পড়ল। পাষণ্ড দুষ্ট লোকটা তখন থেমে থাকেনি। তখনো রুপার নামে অনেকগুলা কথা চারদিকে ছড়িয়ে দিল। রুপা এতটাই অসহায় হয়ে পড়ল যে সে আত্মহত্যার পথ বাঁচতে শুরু করল। নানান ভাবে চেষ্টা করতে থাকলো মরে যাওয়ার জন্য। ওইদিকে পছন্দ করা ছেলেটা তার ভাইকে নানান ভাবেবুঝিয়ে  বিয়ে করার জন্য রাজি করল। রুপা কিছুটা সস্তি ফিরে পেল। আস্তে আস্তে কেটে গেল রুপার জীবন থেকে সেই দুর্বিসহ দিনগুলা। রুপা বিয়ের প্রস্তাব দেয়া ছেলেটা ছিল খুবি ভালো  এবং তার বাবা ও ছিল খুবি দাপটশালী। মানুষ নামের জানোয়ারটা অনেক চেষ্টা করেও বিয়ে ভাঙতে পারেনি,, রুপা বউ হয়ে চলে গেল তার পছন্দের মানুষের সাথে। সবকিছু ঠিক হয়ে গেল কিন্তু রুপার বন্ধুর আর তার সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গেল।তাছাড়া রুপার সম্মানহানী ও হয়ে গেল।

Comments

    Please login to post comment. Login