Posts

গল্প

বিয়ের এলান

February 18, 2025

নয়ন ইসলাম

Original Author নয়ন ইসলাম

156
View

ফজর নামাজ পরা শুরু করেছি আজ দের মাস হল । মুয়াজ্জিন এর সাথে ও পরিচয় হয়ে গিয়েছে এমনকি এলাকার মুরুব্বীদের সাথেও জানাশোনা হয়ে গেছে এই দের মাসের মাথায় । আজ পবিত্র  দিন, জুমুয়ার দিন । তাই ঠিক করলাম, আজকেই পরিকল্পনাটা বাস্তবায়ন করতে হবে । মুয়াজ্জিন সাহেবের সাথে পরামর্শ করতে চলে গেলাম, ‘ভাই জুমুয়ার নামাজ শেষে হুজুরকে আমার জন্যে দোয়া করে দিতে বলতে পারবেন?’ - সে বলল ‘ কেন পারবো না ভাই? কি দোয়া করতে হবে ভাই? বিয়ের জন্যে দোয়া করতে বলবেন নাকি? আমাদের হুজুর এমনিতেই তো দোয়া  করে সকল যুবক যুবতির জন্যে । অন্য কোন দোয়া করতে হলে, আগে এসে সামনে বসে দোয়া পড়ার সময়ে হুজুরের হাতে চিরকুট ধরিয়ে দিয়েন । আশা করি সে পড়ে আপনার জন্যে দোয়া করে দিবে ।’ ধন্যবাদ ভাই । মুসাফা করে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসলাম ।

বন্ধুদেরকেও জানানোর সাহস পর্যন্ত করিনি যা করতে চলেছি । চিরকুট লিখছিলাম অনেকটা সাহস নিয়ে । চিরকুটে লিখে ছিলাম, ‘ একটি বিয়ের এলান - জনাব শ্রদ্ধেয় রাইসুল সাহেব আগামী শুক্রবার বাদ আসর  সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে আমাদের মসজিদেই রাইসুল সাহেবের এক মাত্র ছেলে রুহেল এর বিয়ে দিবেন রাদিয়া নামক কন্যার সাথে । আগামী শুক্রবার বাদ আসর আপনাদের উপস্থিতি আশা করছি । ‘ কয়েকটা ভাজ করে পাঞ্জাবির পকেটে রেখে দিলাম । মনে মনে ভাবতে লাগলাম বাবা কি কি করতে পারে? আমারতো ভয় লাগছিলই কিন্তু মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ভয়ের দিক পরিবর্তন হয়ে গেল। বন্ধু তমালের কল এসেছে । কল কেটে দিয়ে মোবাইল সাইলেন্ট করে গোসল করে নামাজে যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে লাগলাম । 

আজকে বাবার আগেই চলে গেলাম মসজিদে, বাসার সবাই অনেকটা অবাক । প্রথম রাকাতে নামাজ আদায় করলাম । দোয়া পড়ার সময়ে হুজুরের হাতে চিরকুটটা দিয়ে দিলাম তিনি যথাক্রমে এলান ও করে দিলেন । আমারতো ভয়াবহ অবস্থা । মাথায় কাজ করছিল বাসায় গিয়ে বাবার কি অনুভূতি হবে আর আমার উপর দিয়ে কি যাবে? দোয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমি বেরিয়ে গেলাম জুতো নিয়ে । বের হয়েই বন্ধু তমালের সাথে দেখা, - ‘কিরে বন্ধু, বিয়ে তাহলে করেই ফেলছিস, আলহামদুলিল্লাহ ।’ তমালকে বললাম, ‘বন্ধু আগে এই এরিয়া ছেড়ে ভাগতে হবে । বাবা এই বিষয়ে কিছুই জানেনা, তাকে না জানিয়েই আমি হুজুরকে দিয়ে এই এলান দিয়েছি । মসজিদের এরিয়া থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালাম তমালকে নিয়ে । বাবার চেহারা দেখতে হবে, তাই লুকিয়া রইলাম । বাবা বের হল মসজিদ থেকে, বেরিয়ে বাসার পথে হাঁটা লাগিয়েছে । হঠাৎ তার বন্ধু তাকে পিছন থেকে ডাক দিল । বাবা তো বলতে লাগল - ‘আরে ভাই বিশ্বাস কর আমি নিজেই তো জানিনা, তোদেরকে কি জানাব?’ বাসায় যেতে যেতে সবাইকেই এই কথা বলতে বলতে গেল । মেজাজ গরম করে বাসায় চলে গেল । 

কিছুক্ষণ পরে আমার মোবাইলে কল আসল রাদিয়ার । ওর বাবা নাকি বাসায় গিয়ে ওকে বলল, ওর নামের সাথে মিলে এমন এক পাত্রীর বিয়ে হবে আগামী সপ্তাহে রুহেল নামক এক ছেলের সাথে মসজিদে । এইটা শুনে তো রাদিয়াও অবাক । আমি সেই রুহেল কিনা নিশ্চিত হইতে কল দিল, আমি বললাম - তৈরি থেক আগামী সপ্তাহে বিয়ে করার জন্যে । আমি এই বিয়ের এলানটাকেই বেছে নিয়েছি আমাদের বিয়ের কথা আমাদের পরিবারকে জানানোর জন্যে । বাবা একটু আগে বাসায় গেল মেজাজ গরম করে, আমি আজকে বাসায় জাচ্ছি না । তুমিও সাবধানে থেক ।’ এই শুনে রাদিয়াও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল । বলল - ‘করলেটা কি এটা ? এখন কি হবে?’

আমি বললাম, ‘যা হওয়ার দেখা যাবে ।’ এই বলে কলটা কেটে দিলাম । আমাকে কলের পরে কল দিতে লাগল বাসা থেকে । আমিতো মোবাইল অফ করে দিয়ে বিন্দাস তমালের সাথে ঘুরতে লাগলাম আর ওর বাসাতেই দুই দিন থাকব, মনে মনে ভেবেও নিলাম ।

দুদিন পরে বাসায় ফিরে বাবার মুখমুখি হলাম । বাবাকে বললাম, বিয়ের কথা তোমাদেরকে অনেকবার বলেছি শুনোনি, এলাকার সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি এবার তুমি বুঝে নাও বাকিটা । বিয়ে না হলে তুমি বুঝবে সবাইকে বিয়ে না হওয়ার কারণও বলে বেরাতে হবে তোমার । এর চেয়ে আমার বিয়েটা দিয়েই দাও, তোমারও কথার দাম থাকল, আমারও বিয়েটা হয়ে গেল । 

অবশেষে বাপ আমার মেনে নিল, পাত্রীর বাসায় গিয়েও কথাবার্তা সব ঠিকঠাক করে ফেলল ।

Comments

    Please login to post comment. Login