নক্ষত্রের ঠিকানা
অধ্যায় ১: শুরুটা অন্যরকম
কৃষ্ণা নদীর তীরের ছোট্ট গ্রাম চন্দ্রপুর। সবুজে ঘেরা এই গ্রামে সন্ধ্যা নামে ধীরলয়ে, আর রাতের আকাশ ভরে ওঠে অসংখ্য নক্ষত্রের আলোয়। এই গ্রামেই জন্মেছিল অরুণ।
অরুণ ছিল বাকিদের চেয়ে আলাদা। ছেলেবেলা থেকেই সে কল্পনায় হারিয়ে যেত। মাঠে খেলতে গিয়ে যখন অন্যরা দৌড়াদৌড়ি করত, তখন অরুণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত, যেন তার মাঝে কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। তার দাদু, জগন্নাথ সান্যাল, ছিলেন গ্রামের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি। তিনিই প্রথম বুঝেছিলেন, অরুণ শুধু সাধারণ ছেলে নয়, তার মধ্যে লুকিয়ে আছে এক বিশেষ কিছু।
একদিন সন্ধ্যায়, দাদু তার সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন।
— "তোর কি মনে হয়, আকাশের ওই তারা কোথায় যায়?"
অরুণ চোখ বড় বড় করে বলল, "ওরা কি আমাদের মতোই কেউ?"
দাদু হেসে বললেন, "হতে পারে! কিন্তু তারার থেকেও বড় জিনিস আছে, জানিস?"
— "কি সেটা, দাদু?"
— "মানুষের স্বপ্ন।"
সেই কথাটা অরুণের মনে গেঁথে গেল।
অধ্যায় ২: অদ্ভুত সন্ধান
একদিন বিকেলে, নদীর ধারে একটা পুরনো কাঠের বাক্স খুঁজে পেল অরুণ। বাক্সটা এমনভাবে রাখা, যেন কেউ ইচ্ছে করেই এখানে ফেলে গেছে। খোলার পর ভেতরে পাওয়া গেল একখানা পুরনো চিঠি, যার অক্ষরগুলো প্রায় মুছে গেছে।
চিঠির শেষ অংশে লেখা ছিল—
"যদি কেউ এটা খুঁজে পায়, জেনে নিও, পৃথিবীর বাইরেও আমাদের ঠিকানা আছে।"
অরুণের শরীর শিহরিত হয়ে উঠল। এটা কি কোনো ইঙ্গিত? নাকি শুধুই কাকতালীয়?
সে দাদুর কাছে দৌড়ে গেল। কিন্তু দাদু চিঠিটা দেখে এক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন,
— "তোর ভাগ্যে যে কী লেখা আছে, তা তোকে একাই খুঁজে বের করতে হবে।"
অধ্যায় ৩: নক্ষত্রের ডাক
দিন যায়, বছর কেটে যায়। অরুণ বড় হতে থাকে, আর তার মনে সেই চিঠির রহস্য গাঁথা থাকে। শহরে পড়তে গিয়ে সে বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যার প্রতি তীব্র আগ্রহ অনুভব করে।
একদিন, সে জানতে পারে একটি রহস্যময় নক্ষত্রের কথা, যা শুধু প্রতি ১০০ বছরে একবার আকাশে দেখা যায়। আশ্চর্যের বিষয়, সেটি এই বছরই দৃশ্যমান হবে!
তখনই সে সিদ্ধান্ত নেয়, যে করেই হোক, এই নক্ষত্রের রহস্য উন্মোচন করতে হবে।
অধ্যায় ৪: মহাবিশ্বের বার্তা
একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে কাজ করার সময়, অরুণ সেই নক্ষত্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে। সে যা দেখে, তা অবিশ্বাস্য—একটি সংকেত ভেসে আসছে, যেন কেউ পৃথিবীতে কিছু পাঠাচ্ছে!
অরুণ নিশ্চিত হয়, এই সংকেত আর সেই পুরনো চিঠির মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে।
কিন্তু কারা পাঠাচ্ছে এই সংকেত? তারা কি বহির্জাগতিক কোনো সভ্যতা? নাকি এটা শুধুই প্রকৃতির খেলা?
অধ্যায় ৫: সত্যের সন্ধান
অরুণ তার গবেষণা নিয়ে গভীরে যেতে থাকে, কিন্তু অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করে। তার কম্পিউটার হ্যাক হয়ে যায়, কেউ তার কাজ থামানোর চেষ্টা করছে! যেন কেউ চায় না সে এই রহস্যের সমাধান করুক।
অবশেষে, একরাতে সে এক বিশেষ সিগন্যাল ডিকোড করতে সমর্থ হয়। তাতে মাত্র একটি লাইন লেখা—
"তুমি আমাদের উত্তরসূরি। সত্যের সন্ধানে এসো।"
এটা কি কোনো সভ্যতার শেষ বার্তা? নাকি অন্য কিছুর ইঙ্গিত?
অধ্যায় ৬: শেষ ঠিকানা
অরুণ সিদ্ধান্ত নেয়, সে তার জীবনের সব কিছু ছেড়ে দিয়ে সত্যের সন্ধানে বের হবে। চন্দ্রপুর ফিরে গিয়ে দাদুর পুরনো নোট খোঁজে। সেখানে লেখা—
"যদি কখনো মনে হয় তুমি একা নও, তবে আকাশের দিকে তাকিও। উত্তর সেখানেই আছে।"
অরুণ বুঝতে পারে, তার যাত্রা এখনই শুরু হলো।
একদিন, হয়তো সে সত্যিই খুঁজে পাবে—
নক্ষত্রের ঠিকানা।
শেষ কথা
এই গল্প শুধুমাত্র রহস্য আর বিজ্ঞানের নয়, এটি একজন মানুষের আত্ম-অন্বেষণের গল্প। আমাদের মধ্যে প্রতিটি মানুষের মধ্যেই আছে একটি স্বপ্ন, যা সত্যের সন্ধান করতে চায়।
তুমি কি প্রস্তুত সেই যাত্রার জন্য?
শেষ।