Posts

গল্প

তুরস্কের ইতিহাস

February 19, 2025

আফরোজ মেহরুবা

14
View


ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে প্রাচীন রোমের একটি অঙ্গোরাজ্যের নিকটে মুঘলদের সাথে সুলতান কায়কোবাদের যুদ্ধ চলছিল। শত্রুপক্ষ জয়লাভ করবে করবে ঠিক সেই মুহূর্তে কোথা থেকে যেন একদল অশ্বারোহী এসে তাদের উপর চড়াও হল। ফলে যুদ্ধের গতিই পরিবর্তিত হয়ে গেল।

সুলতানের সাথে অর্-তুগ্রুলের পরিচয় ছিল না। শুধু বীরের শৌর্য প্রদর্শন ও দূর্বলের প্রতি একজন যোদ্ধার স্বাভাবিক সহানুভূতির বশবর্তী হয়েই তিনি এ সাহায্য করেন। সুলতান সোলাইমান শাহ্ ছিল তার বাবা। সিরিয়া যাত্রাকালে ইউফ্রেটিস বা, ফোরাত নদীতে ডুবে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর তাদের গোত্রের লোকেরা নানান দিকে ছড়িয়ে পড়ে। যখন তাদেরই একাংশ আশ্রয় লাভের জন্য আনাতোলিয়া গমন করছিল, পথিমধ্যে তারা এক যুদ্ধের সম্মুখীন হয়। এবং শৌর্য প্রদর্শনের মাধ্যমে যে এক বিরাট সাম্রাজ্যের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হবে তা কিন্তু অর্-তুগ্রুলের নিকট মনে হয় নি।

রোমের সুলতান কিন্তু অকৃতজ্ঞ ছিলেন না। নবাগতদের ন্যায় তিনিও ছিলেন তুর্কি। পারস্যের বিখ্যাত সেলজুক সুলতানেরা ছিলেন তার পূর্বপুরুষ। আর তাই আর-তুগ্রুল কায়কোবাদের রাজ্যে আশ্রয় পেলেন। নদী তীরবর্তী একটি সুগঠিত নগরে তার বাসস্থান নির্দিষ্ট হল। দলে দলে সাহসী তুর্কিরা এসে তার সাথে যোগদান করতে লাগল। যেহেতু সেখানকার সুলতান আলাউদ্দীনের পতাকা ছিল অর্ধচন্দ্র, অর্-তুগ্রুলও তাই গ্রহণ করলেন। শত শত বৎসর পর্যন্ত তা খ্রিষ্টান ভীতির কারণ ছিল। 


এরূপ একজন স্বজাতীয় রাজভক্ত সর্দারকে আশ্রয় দান করায় সেলজুক সুলতানের শক্তিবৃদ্ধি হল। ব্রুসার নিকটে ক্রমাগত তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত সুলতানের প্রতিনিধিরূপে গ্রীক ও মুঘলদের সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এই সৌভাগ্যবান বীর-পুরুষ অচিরে তাঁর সুনাম আরও ছড়িয়ে দিলেন। তাঁর কৌশল ছিল অস্ত্রধারী অনিয়মিত অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে শত্রু পক্ষকে হয়রান করে তোলা। ফলে মূল বাহিনী সতেজ থাকল। শেষে তিনি তাদের সাহায্যে বিপক্ষ বাহিনীকে বিতাড়িত করে দিলেন। বহুকাল পর্যন্ত তাঁহার বংশধরেরা এই কৌশলের অনুসরণ করে সুফল লাভ করেন। 

সাহসী বিজয়-বার্তা জেনে সুলতান তাকে কায়েমী স্বত্বে এস্কি শহর জেলা ছেড়ে দিলেন। এখন হতে এটির নাম হল সুলতানানি বা, 'সুলতানের সম্মুখ'।


বহু সংখ্যক গ্রাম ব্যতীত লেফকে, সৈয়দগড়ি, সুগুত, এস্কি শহর প্রভৃতি নগর ও ইনানি, বিলেজিক প্রভৃতি দুর্গ এই রাজ্যে অবস্থিত ছিল। এর সীমানা প্রায় 'প্রাচীন ফিজিয়া এপিক্টেটোসের অনুরূপ। উল্লিখিত ১৯ ও নগরের অধিকাংশ সদ্দারই সুলতানের হস্তান্তরকে আদৌ গ্রাহ্য করতেন না। কাজেই অর্-তুগ্রুলকে বহুদিন পর্যন্ত যুদ্ধ করে প্রভু-প্রদত্ত রাজ্য দখলে আনতে হল। 


১২৫৮ খৃষ্টাব্দে অর্-তুগ্রুলের  পুত্র ওসমানের জন্ম হয়। তাঁর নাম হতেই তুরস্কের সম্রাটেরা ওসমানিয়া সুলতান নামে পরিচিত হন। ইউরোপীয় ওটোম্যান কথাটি এই ওসস্মানলি শব্দেরই অপভ্রংশ।


এক স্বপ্নের মধ্যে, যেন ওসমান নিজের ও মাল হাতুনের বংশধরদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখতে পেলেন। যুবকের প্রেমের স্থিরতা ও গভীরতা দৃষ্টে অর্-তুগ্রুলের মন নরম হল। কাজেই তিনি আর আপত্তি করলেন না। তার শিষ্য দরবেশ তুরুদ ছিলেন এই শুভ বিবাহের মোল্লা। ওসমান রাজা হয়ে তাকে একটি আশ্রয় এবং জমি দান করেন। এগুলি বহু শতাব্দী পর্য্যন্ত তাঁর বংশধরদের অধিকারে ছিল।


মাল হাতুনের সহিত এই অতি-আকাঙ্ক্ষিত বিবাহের ফলে ১২৮৮ সালে অর্হানের জন্ম হয়। অর্-তুগ্রুল সে বছরই মারা গেলেন।


অর্-তুগ্রুলের বংশধরেরা তিন শত বৎসর পর্যন্ত অপ্রতিহত প্রভাবে এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার বৃহৎ শের শাসন-দণ্ড পরিচালনা করেন। পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য তাঁদের হস্তগত হয়, তাঁরা পবিত্র রোমান সম্রাটের গৃহ-দ্বারে হানা দেন। তাঁদের ভয়ে কোন খ্রিষ্টান জাহাজ বহু বছর পর্যন্ত ভূ-মধ্য সাগরে দাড় টানতে সাহস করত না।

বিগত সাড়ে ছয় শত বৎসরের মধ্যে বহু সুসমৃদ্ধ জনপদ তুরস্কের হস্তচ্যুত হয়ে গেছে; এর পরেও আজ পর্যন্ত বিভিন্ন জাতির বিভিন্ন ভাষাভাষী লোক এর প্রাধান্য স্বীকার করছে।
 

Comments

    Please login to post comment. Login