Posts

চিন্তা

রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতি ও ধ'র্ষণ: আমরা ভাষাহীন!

February 20, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

27
View

দেশে আইনশৃঙ্খলার অবনতির এক জঘন্য উদাহরণ হিসেবে রাজশাহীগামী একটি চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা সামনে এসেছে। তবে, যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে ঘটনাটি প্রচার পাচ্ছে না দেশি গণমাধ্যমে।

দেশে এখন খবর প্রকাশ করতে হয় অনেক হিসেবনিকেশ করে, অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো চাপা পড়ে যায়। এই বর্বরোচিত ঘটনাটি তারই এক উদাহরণ। বিগত সরকারের সময়েও গণমাধ্যমের এমন নড়বড়ে অবস্থা বিরাজমান ছিল। চলন্ত বাসে এক নারীর সম্ভ্রমহানির মতো ঘটনা আমাদের সমাজের চরম অবক্ষয়ের দিকটি স্পষ্ট করে তুলেছে।

আমরা জানি, এমন ঘটনা শুধু আমাদের দেশেই ঘটে না। পাশের দেশ ভারতেও এমন নারকীয় ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে। কিন্তু পার্থক্য হলো, সেখানে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল, রাষ্ট্র নড়ে বসেছিল। আর আমরা? আমরা নির্বিকার, নীরব ও নিস্তব্ধ! আমাদের এই নিস্ক্রিয়তাই আমাদের সরকারকেও নির্বিকার করে তুলেছে।

ওই নারীর বিভীষিকাময় রাত্রির ঘটনা বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বাসের এক যাত্রীর বর্ণনায়:
"এরপর চিকন করে একজন ছেলে আমাদের সামনেই ওই মহিলাকে টানতে টানতে জোর করে পেছনের সিটে নিয়ে চলে যায়। ওর স্বামী বাধা দিতে গেলে স্বামীকে অনেক মারধর করে।" এরপর তিনি বলেন-
"এরা যে পরিমাণ... উনি ধর্ষণেরও শিকার হয়েছেন। পিছে নিয়ে গেলে তিনি অনেক চিৎকার করছিলেন। ওদিকে আমাদের যেতে দিচ্ছিলো না। আমরা শুধু চিৎকারের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। জোরে জোরে কাঁদছিলেন। কিন্তু ওখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না।"

এ যেন সভ্যতার মুখে এক চরম চপেটাঘাত! একটি সমাজ বা রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, সম্ভ্রম রক্ষা করতে না পারে; তবে সে আর সভ্য সমাজ বলে গণ্য হতে পারে না।

দুঃখজনক সত্য হলো, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বাসের চালক ও সহযোগীদের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। এতে আমাদের বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা ও দায়িত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বিচারিক সক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

আমরা কি চাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এমন এক সমাজে বেড়ে উঠুক, যেখানে নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে? আমরা কি চাই যে, সভ্য বিশ্বের কাছে আমাদের দেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হোক? সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। আমাদের রুখে দাঁড়ানোর সময় এখনই!

সরকার ও জনগণের করণীয়: 
১. প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২. বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা কাটিয়ে দ্রুত বিচার কার্যক্রম চালু করতে হবে।

৩. সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা চালাতে হবে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

মানুষকে শিক্ষা দিতে হবে যে, 'মানুষ হয়ে মানুষের অপমান করা যায় না।' তা না হলে আমরা সভ্যতার অভিশাপ থেকে কেউই রেহাই পাবো না। আমাদের নীরবতা আর নির্বিকারতা আমাদের অস্তিত্বকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে।

লেখক: সাংবাদিক 
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login