Posts

গল্প

ভালবাসা ফিরে এলো

February 21, 2025

Boros Marika

126
View

নীলু আর আদিত্যর দেখা হয়েছিল কোলকাতার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। নীলু ছিল প্রাণবন্ত, সদাহাস্য মেয়ে, যার চোখে ছিল হাজারো স্বপ্ন। আর আদিত্য ছিল গম্ভীর প্রকৃতির, বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকা এক যুবক।

সেদিন ছিল বর্ষার বিকেল, যখন ক্যাম্পাসের বিশাল গাছপালাগুলো ঝুম বৃষ্টিতে ভিজছিল। নীলু ছাতা ছাড়াই বৃষ্টিতে মেতে উঠেছিল, আর আদিত্য দূর থেকে দেখছিল তাকে।

“তুমি কি সবসময়ই এমন পাগলাটে?” হঠাৎ বলে উঠল আদিত্য।

নীলু হাসল, “বৃষ্টি ভালোবাসো না?”

“ভালোবাসি। তবে এতটা ভিজে অসুস্থ হয়ে পড়তে চাই না।”

নীলু তার দিকে তাকিয়ে বলল, “ভালোবাসা মানে তো ডুবে যাওয়া। ভয় কিসের?”

সেই প্রথম দেখা, প্রথম আলাপ। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে এক বন্ধুত্ব গড়ে উঠল, যা সময়ের সঙ্গে আরও গভীর হতে থাকে।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা একে অপরের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ল। প্রতিদিন ক্লাস শেষে একসঙ্গে চা খাওয়া, লেকের ধারে বসে গল্প করা, হাতে হাত রেখে পথ চলা—সবকিছুই তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে উঠল।

এক সন্ধ্যায়, ক্যাম্পাসের খোলা ছাদে তারা দুজন বসে ছিল। আকাশভরা তারা, আর ঠাণ্ডা বাতাস বইছে।

আদিত্য হঠাৎ নীলুর হাত ধরল, “তুমি জানো, আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না?”

নীলু মুচকি হেসে বলল, “তাহলে থেকো না। আমাকে ছেড়ে যেও না।”

আদিত্য ধীরে ধীরে তার কাছে এল, তার কপালে নরম চুমু দিল। সেই মুহূর্তে যেন পুরো পৃথিবী থমকে গিয়েছিল।

 

ভালোবাসার পথ কখনোই সহজ হয় না। নীলুর পরিবার চেয়েছিল সে বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা করুক। তারা কখনোই চাইত না যে সে আদিত্যর মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়াক।

নীলুর বাবা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, “তোমার ভবিষ্যৎ আছে, নীলু। এ ছেলেটা তোমার যোগ্য নয়।”

নীলু প্রতিবাদ করল, “ভালোবাসার যোগ্যতা কেউ ঠিক করে দেয় না, বাবা।”

কিন্তু সংসারের নিয়ম কঠোর। একদিন হঠাৎ করেই নীলুকে জানিয়ে দেওয়া হলো, তাকে বিদেশ পাঠানো হচ্ছে। সে চাইলেও কিছু করতে পারল না।

বিদেশ যাওয়ার পর, কিছুদিন যোগাযোগ থাকলেও ধীরে ধীরে নীলু দূরে সরে যেতে লাগল। একদিন, আদিত্যর কাছে একটি চিঠি এল।

_“আদিত্য, আমি জানি, তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করছ। কিন্তু আমি হয়তো ফিরতে পারব না। আমার শরীর ভালো নেই। ডাক্তার বলেছে, আমার বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। তোমাকে আর অপেক্ষায় রাখতে চাই না।

ভালো থেকো, তোমার নীলু।”_

আদিত্য চিঠি পড়ে ভেঙে পড়ল। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না যে তার নীলু আর নেই। সে স্থির করল, সারাজীবন একাই কাটিয়ে দেবে, নীলুর স্মৃতি নিয়েই বেঁচে থাকবে।

বছর কেটে গেল। একদিন, বন্ধুদের পরামর্শে আদিত্য ঠিক করল, সে লন্ডনে যাবে, নীলুর সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে শেষ বিদায় জানাবে।

লন্ডনে পৌঁছে নীলুর পুরোনো ঠিকানায় গিয়ে সে জানতে পারল এক চাঞ্চল্যকর সত্য। নীলু আসলে মারা যায়নি। সে তার পরিবারের পছন্দ করা এক ধনী যুবককে বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করেছে।

আদিত্য হতবাক হয়ে গেল। এতদিন যে কষ্ট, যে শূন্যতা বয়ে বেড়াচ্ছিল, তার সবটাই ছিল মিথ্যে।

সে দূর থেকে দেখল নীলুকে—সে হাসছে, হাত ধরে হাঁটছে তার স্বামীর সঙ্গে। আদিত্যর হৃদয় ফেটে যাচ্ছিল, কিন্তু সে কিচ্ছু বলল না। শুধু মৃদু হাসল।

তারপর একদিন, সে সব ছেড়ে বৃদ্ধাশ্রমে চলে গেল, যেখানে কেউ তাকে চেনে না, কেউ তাকে খুঁজে পায় না।

বিমানবন্দরে নামার পর, হঠাৎ তার দৃষ্টি আটকে গেল এক মেয়ের দিকে। মেয়েটি ছিল অসাধারণ সুন্দরী, তার মধ্যে একটা রহস্যময় আকর্ষণ ছিল। আদিত্য কিছুতেই তার দৃষ্টি সরাতে পারছিল না।

তার মনে হলো, যেন সময় থমকে গেছে। তার বুকের ভেতর অদ্ভুত এক অনুভূতি কাজ করতে লাগল। সে ভাবতে লাগল, “কি হচ্ছে আমার সঙ্গে?”

মেয়েটির নাম ছিল রুশনী। সে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে তার পাশে বসল।

“আপনি কি ঠিক আছেন?” রুশনীর কণ্ঠে ছিল অদ্ভুত এক উষ্ণতা।

আদিত্য চমকে উঠল। এতদিন পর, কেউ যেন সত্যিকার অর্থে তার অস্তিত্ব অনুভব করল।

এরপর থেকে রুশনী আদিত্যর জীবনে আস্তে আস্তে ঢুকে পড়ল। সে আদিত্যর যত্ন নিতে শুরু করল, তাকে হাসানোর জন্য ছোট ছোট পাগলামি করত, মাঝরাতে ফোন করে জিজ্ঞেস করত, “তুমি ঘুমিয়েছ?”

একদিন, রুশনী তাকে জোর করে বৃষ্টিতে টেনে নিয়ে গেল, বলল, “আবার ভালোবাসতে শেখো।”

আদিত্য প্রথমে দ্বিধায় ছিল, কিন্তু রুশনীর চোখের গভীর ভালোবাসা, তার যত্ন, তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেখে সে ধীরে ধীরে নিজেকে নতুনভাবে চিনতে শুরু করল।

একদিন, রুশনী হঠাৎ বলল, “আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারব না, তুমি যদি আমাকে আটকে না রাখো।”

আদিত্য গভীর চোখে তাকিয়ে রইল রুশনীর দিকে। তারপর ধীরে ধীরে বলল, “আমি তোমাকে যেতে দেব না।”

সে অনুভব করল, হয়তো আবারও ভালোবাসার সময় এসেছে…
রুশনী একদিন আদিত্যকে নিয়ে তার ছোট্ট গ্রামে গেল, যেখানে সন্ধ্যার আলোয় দুজনে নদীর ধারে বসে রইল, নিঃশব্দে একে অপরকে অনুভব করল। আর সেদিন, বহুদিন পর, আদিত্য অনুভব করল—ভালোবাসা শেষ হয় না, এটি নতুন রূপে ফিরে আসে।রুশনী আদিত্যর হাত শক্ত করে ধরে বলল, “তুমি কি আমায় ভালোবাসতে পারবে?”

আদিত্য ধীরে ধীরে তার হাতে হাত রাখল, “আমি তো আগেই ভালোবেসে ফেলেছি।”
 

রুশনী আদিত্যর জন্য এমন কিছু করছিল, যা নীলু কখনো করেনি। তার জন্য রান্না করত, তার মন খারাপ থাকলে সারারাত গল্প শোনাত, তার চোখের নিচের ক্লান্তির রেখাগুলোতে আলতো ছোঁয়া দিত। আদিত্য প্রথমে দ্বিধায় ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারল—রুশনী শুধু তাকে ভালোবাসে না, তাকে পূর্ণ করে।

এক রাতে, রুশনী তার দিকে তাকিয়ে বলল, “আমি চাই তুমি আমাকে নীলুর মতো নয়, রুশনী হিসেবে ভালোবাসো।”

আদিত্য কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল, তারপর তার হাত শক্ত করে ধরল, “তুমি যা, তাই ভালোবাসি।” 

তারপর এক গভীর রাতে, রুশনী আদিত্যর কাঁধে মাথা রেখে ফিসফিস করে বলল, “তুমি কি আমায় কোনোদিন ছেড়ে যাবে?”

আদিত্য তার কপালে চুমু খেয়ে বলল, “না, কখনো না।

এভাবে ধীরে ধীরে আদিত্য রুশনী কে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলল আর আদিত্যর মনে একটা ভয় কাজ করত যে রুশনী যদি নীলুর মত করে। আমাকে ছেড়ে চলে যায়।এই সব প্রায় সময় চিন্তা করতে লাগলো।

এভাবে রুশনী কে অনেক ভাবে বিরক্ত করতে লাগলো। কারো সাথে কথা বলতে দেখলে বা কোনো ছেলে বন্ধুর সাথে কথা বললে, ফোন করতে বা ধরতে দেরি হলে সব মিলায় রাগ হতো। 

কিন্তু রুশনী ব্যপারটা বুঝার চেষ্টা করতে লাগল। কারণ আদিত্যর আগের ভালোবাসার ধোঁকার কথা জানত রুশনী। এই জন্য রুশনী আরো শান্ত থেকে আদিত্য কে ঠিকমতো  সময় দিত আর ঠিক মত সব করার চেষ্টা করত। ধীরে ধীরে আমাদের ভালোবাসার উপর বিশ্বাস আসতে শুরু করলো। এভাবে ওদের ভালোবাসার জয় হলো।

Comments

    Please login to post comment. Login