Posts

উপন্যাস

পদ্মিনী

February 22, 2025

Ra Alam

Original Author মারগারিটা

83
View


হোসনে আরা বেগম প্রতিদিনের মতো ফজরের নামাজ আদায় করলেন।তারপর সূরা,দোয়া করে ভাবল যাই ছেলেটাকে একটু ফুঁ দিয়ে আসি।ওনার দুই মেয়ে ও এক ছেলে।বড় মেয়ে নাম মেরি,ছোট মেয়ে মুমু এবং ছেলের নাম রুশো। তবে মেরির বিয়ে হয়ে গেছে, ও বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। ওর একটি ছেলে আছে, ক্লাস এইট এ পড়ে।মুমু বিএ পরীক্ষা দিয়েছে।স্বামী, দুই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে হোসনে আরার সুখের সংসার। 
ছেলে রুশো ঘুমিয়ে আছে আরেক রুমে, হোসনে আরা সে রুমে গেল এবং যেয়ে ছেলের মাথায় হাত রেখে যেই ফুঁ দিতে গেল ছেলে লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসল এবং রক্ত চক্ষু করে মায়ের দিকে তাকালো বলল, "যাও,যাও এখান থেকে।"একটু দাঁড়াতেও দিলো না মাকে।
রুশোরা থাকে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে। ওরা যেখানটায় থাকে তাকে মফস্বল শহরও বলা যেতে পারে।ওদের বাসাটা ছিল দোতলা, এল প্যাটার্নের। বাড়ি সামনে ছিল বিশাল গেইট। সেই গেইট খুলে ঢুকলে গেইটের পাশে একটা বড় আমগাছ। সামনে বড় পাকা উঠান।উঠান পার হলেই টানা বারান্দা। বারান্দায় পড়ে আছে একটা ইজি চেয়ার।ইজি চেয়ারটি অবশ্য রান্নাঘরের দরজা দিয়ে বের হয়ে সামনের বারান্দায় রাখা আছে। মাঝে মাঝে হোসনে আরা বেগম ক্লান্তিবোধ করলে সেখানটায় বসেন।
আজ মনটা খুব খারাপ লাগছে হোসনে আরা বেগমের। ছেলের ব্যবহারে মনে মনে খুবই রেগে আছেন উনি।চেয়ারটায় বসে ভাবছেন, "আমার ছেলেটা খারাপ সঙ্গের সাথে মিশে নাতো?"কিছুক্ষণ পর ছেলে রুশো তার রুম থেকে বের হয়ে বারান্দা দিয়ে হেঁটে মায়ের দিকে না তাকিয়ে হন হন করে তাঁর সামনে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কাউকে কিছু না বলে শার্টটা গায়ে দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেল।পিছন থেকে বড় আপা মেরি রুশোকে ডেকে বলল,"নাস্তা করবি না, কোথায় যাচ্ছিস?এই সকাল বেলা।"রুশো শুধু একটি শব্দই বলল, "না।"
বেলা এগারোটা।এখনো হোসনে আরা বেগম বসে আছেন চেয়ারে। তিনি বুঝতে পারলেন একটা রিকশা এসে থেমেছে গেইটের ওপাশে।ওদের বাসাটা ছিল রাস্তার পাশে। বেশ কজন লোকের শব্দ শোনা যাচ্ছে।ওরা,একে অপরকে বলছে ধর ধর আরে সাবধানে।তারপর রাস্তার কেউ জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে ইত্যাদি। রুশোর দুই হাত ওর দুই বন্ধুর কাঁধে,ওর মাথাটা একজনের কাঁধে একবার, আবার আরেকজনের কাঁধে আরেকবার ঝুলিয়ে রাখছে চোখ দুটো লাল কিন্তু মুখে কিছু বলছে না। বুঝা যাচ্ছে ওরা ওকে জোর করে ধরে রেখেছে। বার বার ও পিছনের দিকে যেতে চাচ্ছে ওরা ওকে যেতে দিচ্ছে না।হোসনে আরা এই দৃশ্য দেখে ঘরের ভিতর চলে গেল রাগ করে এবং যেয়ে বড় মেয়েকে বলল, "দেখ,তোর ভাইয়ের অধঃপতন কেমন হয়েছে।নিশ্চয়ই সে মদটদ খেয়ে এসেছে মনে হয়। ভাবভঙ্গি ভালো দেখাচ্ছে না। "একথা শুনে মেরি বারান্দায় বের হয়ে এলো। সাথে সাথে মুমুও ছুটে এলো।এরই ভিতর বারান্দার চেয়ারটাতে ওর বন্ধুরা রুশোকে বসিয়ে দিয়েছে।ওর পাশে ওর বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে। রুশোর মাথাটা ও হাত দুটো নিচের দিকে ঝুলে আছে।মুমু এক প্রকার দৌড়ে ওর কাছে গেল এবং ওর মাথাটা তুলে ধরে বলল,"কিরে রুশো ভাই আমার, কি হয়েছে তোর?"রুশো ওর দিকে লাল লাল চোখ দিয়ে তাকিয়ে,"হুঁ....,কে আপনি?"মুমু তখন বন্ধু দিকে তাকিয়ে, "কিরে! ওতো আমাকে চিনছে না।""ভাই,তোর কি হয়েছে আমি তোর মুমু আপু।আম্মা..........(জোরে চিৎকার)।""মা,রুশো তো আমাকে চিনছে না।",কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।তখন সবাই দৌঁড়ে এলো। এতক্ষণ সবাই ওকে ভুল বুঝে রাগ করে ছিল।ওর বাবা ওর মাকে বলল, "তোমরা ওকে মাথায় পানি দাও। ওর মাথায় মনে হয় রক্ত উঠে গেছে। আমি ডাক্তার নিয়ে আসি।"ততক্ষণে হইচই উঠে গেছে। রুশো বসা থেকে পরে যাচ্ছে।ওর মা, বোন ও বন্ধুরা সবাই মিলে ওকে পাশের ওয়াশরুমে নিয়ে গেল।মাথায় পানি দিতে লাগল।ও সেখানেই হাত-পা টেনে শুয়ে পড়ল।এই অবস্থা দেখে বড় বোন মেরি চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল।ততক্ষণে ওপরের দোতলা থেকে লোকজন নেমে এসেছে।একজন জিজ্ঞেস করল,"খালাম্মা,কিতা অইচইন?মেরির চিল্লানি হুনলাম।" মেরির মা বলল,"দেখো বাবা,রোশো কেমন করছে।"ওই ভদ্রলোককে মেরিরা ভাই বলে ডাকত।
চলবে.....................

Comments

    Please login to post comment. Login