পোস্টস

নিউজ

ওমর খৈয়াম: প্রজ্ঞা দিয়ে বিশ্ব জয় করেছিলেন যিনি

১৯ মে ২০২৪

নিউজ ফ্যাক্টরি

Featured Image
৯৭৬ বছর আগে মে মাসের ১৮ তারিখ ইরানের পূর্বাঞ্চল নিশাপুরে জন্মেছিলেন মধ্যযুগের অন্যতম গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ, ইতিহাসবিদ, দার্শনিক এবং কবি ওমর খৈয়াম। সে সময় নিশাপুর শিল্পকলা, কারুশিল্প, দর্শন ও বাণিজ্যের একটি সমৃদ্ধ কেন্দ্র ছিল। শহরটি আজও তার খ্যাতি ধরে রেখেছে। আর এজন্য ওমর খৈয়াম নিশাপুরি বা ওমর খৈয়ামকে ধন্যবাদ দেয়া যেতে পারে।     

নিশাপুরে একটি বিশাল বাগানের কম্পাউন্ডের ভিতর সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি খৈয়ামের স্মৃতিসৌধ রয়েছে। এই স্মৃতিসৌধে তার কবিতার শিলালিপি রয়েছে। এটি শহরের অন্যতম সেরা পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানেই পারস্যের মরমী কবি আত্তার নিশাপুরি এবং ইমামজাদেহ মাহরুকের সমাধি রয়েছে। ইমামজাদেহ মাহরুক মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর বংশধর বলে বিশ্বাস করা হয়।

নাদের মোরাদি নামের একজন স্থানীয় দর্শনার্থী খৈয়াম গার্ডেনকে তার দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, প্রতিদিন এখানে তারা একত্রিত হয়ে কবিতা আবৃত্তি করেন, গান করেন। তিনি তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে বলেছেন, ‘খৈয়াম এই শহরের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। এটির ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছেন তিনি।'

বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানী আবুই মেহরিজি খোরমিজি বলেছেন, ‘গণিত এবং জ্যোতির্বিদ্যায় খৈয়ামের যুগান্তকারী কাজ তাকে প্রাচ্য এবং পশ্চিমে তার সমসাময়িকদের মধ্যে একটি উচ্চস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। অবশ্য খৈয়াম প্রাচ্যে প্রতিভাবান গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ এবং দার্শনিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও পাশ্চাত্যে কবিতার মাধ্যমেই খ্যাতি পেয়েছেন।'

ওমর খৈয়ামের হাত ধরেই রুবাইয়াৎ কাব্যের উত্থান ঘটেছে। ফারসি ভাষায় রুবাই শব্দটি একবচন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রুবাইয়াৎ হচ্ছে বহুবচন। রুবাই মূলত চতুষ্পদী কবিতা।  রুবাইয়াতের ছত্রে ছত্রে প্রেম, আনন্দ, বিষাদ এবং মানব হৃদয়ের আশা-আকাংখার প্রতিফলন দেখা যায়।  

ইংরেজ কবি এডওয়ার্ড ফিটজেরাল্ড সর্বপ্রথম খৈয়ামের রুবাইয়াৎ অনুবাদ করেছিলেন। ১৮৫৯ সালে তিনি ‘দ্য রুবাইয়াৎ অব ওমর খৈয়াম’ বইটি প্রকাশ করেন। এর ফলে ফারসি এই কবির সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের পরিচয় ঘটে।

১৮৬৩ সালে ইংরেজ লেখক জন রাস্কিন বলতে বাধ্য  হয়েছেন, এত ঐশ্বর্যময় কাব্য তিনি আর কখনো পড়েননি। এরপর কয়েক দশকের মধ্যেই ইউরোপের প্রধান শহরগুলোতে খৈয়াম ফ্যান ক্লাব গড়ে ওঠে। অক্সফোর্ড বুক অব কোটেশনে ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াৎ স্থান করে নেয়।  

এদিকে ফারসি সাহিত্যের গবেষক কাদির হাসান আসরার বলেছেন, ‘খৈয়ামের কবিতা মুহুর্তে বেঁচে থাকা এবং পূর্ণভাবে বেঁচে থাকার ধারণাকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। সম্ভবত এই বিষয়টিই পশ্চিমাদের বেশি আকৃষ্ট করেছে। ফার্সি সাহিত্যে তার কবিতা বহু শতাব্দী ধরেই প্রতিদ্বন্দ্বিহীন ছিল।'      

উল্লেখ্য, খৈয়াম ১০৪৮ সালের ১৮ মে জন্মেছিলেন। ১১৩১ সালের ৪ ডিসেম্বর অসাধারণ মেধাবী এই মানুষ মারা যান। মৃত্যুর ৮৯২ বছর পরেও তার জীবন এবং কর্ম ব্যাপকভাবে মানুষকে অনুপ্রাণিত করছে। ১৯৫৭ সালে ফারসি এই কবির জীবন কাহিনী নিয়ে ‘ওমর খৈয়াম’ নামে হলিউডে একটি সিনেমা বানানো হয়। এটির পরিচালক ছিলেন উইলিয়াম ডিটারলে।

সূত্র: ডেইলি সাবাহ