[ ] ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪,শুক্রবার,নস্ট্রাম হসপিটালের সামনে, উত্তরায় ঘটে যায় একটি অভিশপ্ত দূর্ঘটনা।আদৌও কি আমার দোষ ছিলো নাকি সবই ছিলো সৃষ্টিকর্তার পরিকল্পনা। কীভাবে ধ্বংস হয়ে যায় কয়েকটি জীবন,সাজানো - গোছানো ভবিষ্যৎটা।গল্পটা কারোর নয়,গল্পটা আমারই।কোনো মিথ্যা ঘটনা নয় একটি জীবন ধ্বংসকারী ঘটনা।২০২৪ সালে আমি এসএসসি পাশ করি।তো দেশের স্বনামধন্য কলেজ হলিক্রস কলেজে পড়ার জন্য প্রিপারেশন নিতে থাকি কিন্তু আমার প্রিপারেশন তেমন ভালো ছিলোনা তাই আমি সেখানে চান্স পায়নি।এরপর বর্তমানে দেশের শীর্ষকলেজ মাইলস্টোন কলেজে আমার চান্স হয়।আমার বাবা ছিলেন একজন প্রবাসী আর মেয়ে ব্যবসা ও শিক্ষকতার সাথে জড়িত ছিলো কিন্তু আমাকে মানুষ করতে গিয়ে সে সবকিছু ছেড়ে দেয়।আমার একজন কাজিন আছে ও আবার রাজউকে পড়ে তো ওর পরিবারের সাথে আমাদের পরিবারের অনেক মিল রয়েছে।তো ওর বাবার কথায় মূলত আমরা উত্তরায় আসি।আঙ্কেল বাসা খুঁজেন এবং আমাদের জন্য বাসা খুঁজেও পান ৮ নং রেলগেইটের ওখানে।আমাদের বাসাটা ছিলো ৬ তলায় আর আমার কাজিনরা ছিলো ৪ তলায়।আমরা ১৩ই জুলাই ঢাকায় আসি।তারপর প্রায় ১ মাসের মতো ঘরে বন্দী থাকি জুলাই অভ্যুথানের জন্য।আমারও না অনেক ইচ্ছা করতো আমার ভাই বোনদের পাশে দাড়াতে কিন্তু পারিনি বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান আমি।আমাকে যেতে দেয়নি।এরপর ৩০ই জুলাই আমার আব্বু হঠাৎ করেই বলে দেশে আসছি।আমার তখন থেকেই মনটা কেমন যেন খারাপ হয়ে যাচ্ছিল কেন যেন মনে হচ্ছিল কোনো বিপদ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। তো ৩ ই আগস্ট আন্দোলনের মধ্যেই আমার আব্বু আসে।আমার আব্বুকে নিতে যায় আমার কাজিন,তার বাবা ও আমার মা।এরপর আব্বু এসেই আমাকে সালাম দেয়।তো তার কয়েকদিন পরেই আমরা সিদ্ধান্ত নেয় যে আমরা জামালপুর চলে যাবো কারণ তখন আমার কলেজ বন্ধ ছিলো। এছাড়া আব্বুরও ভালো লাগবে।এরপর স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের জীবন চলছিলো।কলেজ শুরু হলো কলেজে ক্লাস করতে থাকলাম।আমি না পড়াশোনায় অনেক ফাঁকিবাজ ছিলাম এমনকি এখনও তাই সিদ্ধান্ত নেয় নতুন জায়গায় নতুন জীবনে নতুন করে সবকিছু শুরু করি কিন্তু তা কি হলো যদিও পড়াশোনায় সিরিয়াস হয়ে গিয়েছিলাম।কিন্তু আমার জীবনে এলো সেই খারাপ দিনটি।দিনটি ছিলো শুক্রবার। আচ্ছা শুক্রবার তো সবার জন্য ঈদের দিন তাহলে কেন আমার সেই সুখটা হলোনা। শুক্রবার সকাল ৬ টায় আমি ঘুম থেকে উঠি আইসিটি প্রাইভেটে যাওয়ার জন্য এরপর ১২ টা পর্যন্ত প্রাইভেটে পড়ে বাসায় এসে পড়ি।তো আমার পরিবারে জমি নিয়ে সমস্যা ছিল সে-সম্পর্কে আরকদিন বলবো।তো যেহেতু আমি মেয়ে তাই আমার পরিবার কখনই আমাকে সম্পদ দিতে চাইতো না। অথচ আমাদের প্রচুর সম্পদ।তো গ্রামের লোকদের ধারণা মেয়ে মানুষ বিয়ে হয়ে পরের বাড়ি চলে যাবে তো সম্পদ দিয়ে কি হবে।অথচ আমাদের ছিলো অভাব।আমার নিজের বাবার সম্পত্তি আমার রক্তের কাকারা দিতে চাইতোনা এমনকি এখনও না।মেয়ে হয়ে কি আমি অপরাধ করেছি।তো যেদিন আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যায় সেইদিন দুপুরে আমি আম্মুকে বলেছিলাম আমাদের বিপদে কেউ আাসবেনা কারণ আমার আব্বু সবসময় তার ভাইপোদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। রক্তের মানুষ বলে কথা। আর আমার তাতে আফসোস নেয় আফসোস ছিলো আমি আমার বাবার বাড়ি একটা রাতও শান্তি মতো থাকতে পারলামনা।তো বিকালে আমি যায় উদ্ভাসে পড়ার জন্য।এর আগে আমি প্রায় অনেকদিনই সেখানে যায়নি কারণ আমরা আবারও আমাদের বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম।তো উদ্ভাসে সেদিন আমাদের পদার্থের অন্য আরেকটা ভাইয়া পড়াচ্ছিলেন। তো সে সুন্দর ভাবেই পড়াচ্ছিলেন।আমি প্রথম ব্রেঞ্চেই বসেছিলাম।আমার সাথে আরো ২ জন বসেছিলো।তো ভাইয়াটা পদার্থের একটা টপিক পড়াতে গিয়ে আমাকে ও আমার পাশে বসা মেয়ে ২ টাকে দিয়ে উদাহরণ দেয়।মানে তিনি বল সম্পর্কে পড়াচ্ছিলেন।আমরা ছিলাম চিকন তাই আমাদের দিয়েই উদাহরণ দেয়।আমি খুব হেসেছিলাম সেদিন।জানতাম না সেদিনই আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে।হঠাৎ করেই বিকাল ঠিক ৪:৩০ এ আমার মনটা কেঁপে উঠলো কে যেন আমাকে বলে দিচ্ছে যে তোর জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল।আমি জানিনা কিন্তু কেন যে আমার ঐ অনুভূতিটা হয়েছিলো তা আজ বুঝতে পাচ্ছি।তো উদ্ভাসে আমাদের পড়ানোর পর পরীক্ষা নেয়।তো আমাদের ব্রাঞ্চে যে এগুলো দেখাশোনা করে সে আমাকে এসে বলছে যে তোমার পরীক্ষা দেওয়ার দরকার নেয়, তুমি চলে যাও।তো আমার সহপাঠীরা তো সেই আনন্দ আমাকে বলছে যে তোমার তো ভাগ্যই ভালো কারণ আমাদের পরীক্ষা ছাড়া যেতে দেয়না।তো আমাকে নিতে খালমনি এসেছিলো। আমি ভাবি যে হয়তোবা বাসায় তারা আমাদের দাওয়াত দিবে তাই নিতে এসেছে কারণ ২৯ শে সেপ্টেম্বর আমার বাবার বিদেশ যাওয়ার ডেট ছিলো। কিন্তু সে আমাকে বলে যে তোমার বাবার ছোট ১টা এক্সিডেন্ট হয়েছে।তো আমি প্রথমে ভাবি যে হয়তোবা পায়ে আঘাত পেয়েছে। পরে দেখি তার অবস্থা খারাপ।আমি ঢাকায় নতুন কিছু জানিনা কোথায় যেতে হয়।তো বাসাতেই ছিলাম।সবাই ফোন দিতো কিন্তু আমি ধরতামনা।২ টা দিনের মতো প্রায় আমি না খেয়ে ছিলাম মানে শুধু পানি খেয়েছি।যদিও আন্টি আমাকে খাবার দিয়েছিলো কিন্তু আমি খেতে পারিনি।সারাটা দিন কান্না করতাম।আমি আমার বাবার জন্য নয় মায়ের জন্য কান্না করতাম।তারপর শুনি সে বাংলাদেশ মেডিকেল হল থেকে শিফট হয়ে সবার শেষে গিয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়।আমি বলতে পাচ্ছি আমার জীবনের কষ্টের কথা।আমার বাবাই ছিলো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।সম্পদ থাকার পরও আমার রক্তের চাচারা আমাদের সাহায্য করেনি,আমার বড়লোক আত্মীয়রা আমাকে তাচ্ছিল্য করেছিলো।আমার আম্মু বলতে গেলে সবার ভিক্ষায় চেয়েছে যাতে করে আমাদের সম্পদটা শুধু দিয়ে দেক।যাতে আব্বুকে সুস্থ করতে পারি।তার মাথার অবস্থা এতটায় খারাপ যে চিকিৎসা না করালে সুস্থ হবেনা।ডাক্তার বলেছিলো যে তার কোমাতে চলে যাওয়ার কথা কিন্তু কিভাবে যে বাঁচল আল্লাহই জানে?এখনও সে সুস্থ হয়নি।যে মেয়েটা রাজরানীর মতো থেকেছে তার বাড়িতে আজ শুধুমাত্র টাকার জন্য মানুষের নিকট অপমানিত হতে হয়।বলতে হয় কিছু টাকা কম রাখলে আমি পড়তে পারতাম।যাই হোক।এখন আসি তার কথায় যে জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছে।না আমি ছেলেটাকে চিনি না সে আমাকে চেনে।নওয়াব হাবিবউল্লাহ কলেজের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী নাম যে তার হাসান এবং তার বন্ধরা মিলে বাইক চালাচ্ছিল।এমন অবস্থায় সেই নস্ট্রাম হসপিটালের সামনে যে রাস্তাটাতে আছে সেখানে তারা এত জোরেই বাইক চালাচ্ছিল যে সেই বাইকের সাথে এক্সিডেন্ট করে আমার আব্বু।আমার আব্বুর মাথার ওপরে দিয়ে সম্পূর্ণ বাইকটা যায় আমার আব্বু খাদে পড়ে যায়।কারণ তখন রাস্তার কাজ চলছিল।যদিও তারা প্রথমে আমার দুর্সম্পকের এক আত্মীয় নাম্বারে ফোন দেয় কারণ আব্বুর মোবাইলে তাদের নাম্বারটা ছিলো। তারা আবার আম্মুকে সংবাদটা দেয়।আম্মু যায় সেখানে এবং সেই অপরাধীদেরও দেখে দেখলামনা শুধু আমিই।আম্মু তাদের ক্ষমা করে দেয় কিন্তু আমি এখনও করতে পারি নাই।বড়লোকের ছেলেরা কীভাবে বুঝবে ১ টা মধ্যবিত্ত মেয়ের আর্তনাদ।হাসান।যদি কোনোদিনও আমার গল্পটা পড়ে থাকো তাহলে কেনোদিনও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে?তুমি কি আমার জীবনটা ফিরিয়ে দিতে পারব? সেই সাজানো-গোছানো জীবনটা?কখনই না।তোমাদের মতো ছেলেদের অল্প বয়সে দক্ষতা ছাড়াই বাইক চালানোয় ঢাকার মধ্যবিত্ত পরিবারদের জীবনে দুর্দশা নিয়ে আসে।আমার নিজের নামের ১ টা অংশও হাসান।আমার নাম তাহমিদ হাসান ছেলেদের নাম হলেও এটা মেয়ে হিসেবে আমার নাম।আমার নামের সেই হাসান নাম টুকু আমি ঘৃণা করি।হাসান তোমার উদ্দেশ্য আমার একটায় কথা তোমার নামটাতো নবি (সা:) এর নাতনির নাম তাহলে তোমার কাজটা কেন এমন।তুমি যদি জানতে যে তুমি ১ টা মানুষের নও ৩ টা মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছো।আপনারা ভাবছেন আমি কেন আমার ধংব্সকারীকে সম্মান দিয়ে কথা বলছি কারণ আমার মা আমাকে ভালে ব্যবহার শিখিয়েছে। চাইলেই তোমার বিরুদ্ধে আমি প্রতিশোধ নিতে পারতাম কিন্তু আমি নিবোনা।তুমি যেদিন তোমার চোখের সামনে নিজের বাবাকে আমার বাবার মতো করুণ অবস্থায় দেখবে,সবকিছু হারাতে দেখবে তখন আমার কষ্টটা বুঝবে।অভিশাপ দিচ্ছিনা তোমাকে কিন্ত বাস্তবে যে তুমি আমাকে ধ্বংস করে দিয়েছো।একটা কথায় বলতে চাই আমি তোমাকে ঘৃণা করি।যদি কোনোদিন এই শহরে তোমাকে দেখতে পায় কিংবা তোমাকে খুঁজে পায় ১ টা কথায় জিজ্ঞেস করবো বাইক তোমাকে কি দিয়েছে??আমি ঘৃণা লাগে আমরা একই ঢাকার উত্তরাতে শ্বাস -প্রশ্বাস নিচ্ছি।যদি কোনোদিনও ক্ষমতা হয় তবে আমার নামটা পরিবর্তন করবো যাতে সেই নামে আমার বাবার খুনি না থাকে।তুমি নিশ্চিন্তে থাকো আমি কোনে ক্ষতি করবোনা যেমনটা তুমি আমার বাবার সাথে করেছিলে?এই ঢাকার অভিজাত সন্তানদের নিকট আমার ১ টায় প্রশ্ন আর কতো হাসান তকি মতো একটি নিষ্পাপ মেয়ের জীবন ধ্বংস করবে বাইক চালিয়ে?আর কতো এক্সিডেন্ট হবে?আর কে তার বাবাকে হারাব?যেদিন তোমার জীবনে খারাপ জিনিসটা ঘটে যাবে সেদিন তোমরা বুঝবে বাইক চালানোর অপকারিতা।আমার লেখা যেই পড়বেন তাকে ১ টা কথায় বলতে চায় সন্তান ভালো রেজাল্ট করলেই তাকে সবকিছু দিবেননা।বাইক তো একদমই দিবেননা কারণ তারা অদক্ষ, অপটু।আর কারো জীবন ধ্বংস চাবি আপনার সন্তানকে দিবেননা।।।।।।।।কারণ আমার মতো মধ্যবিত্তরা অসহায়,নিরুপায়।