গাঁয়ের নাম শান্তিগঞ্জ। নাম শান্তিগঞ্জ হলেও, এখন আর শান্তির দেখা মেলে না। চোর, ডাকাত, তস্কর, বদমাইশ—সব মিলিয়ে যেন এক মহোৎসব চলছে।
আগে গ্রামে চুরি-ডাকাতি হতো মাঝেমধ্যে। কিন্তু এখন তো যেন উৎসব! রাত নেই, দিন নেই—চুরি হচ্ছে; পুকুরের মাছ চুরি, গোয়ালের গরু চুরি, ক্ষেতের ধান কাটা হয়ে যাচ্ছে রাতের আঁধারে।
শান্তিগঞ্জের সরল মানুষগুলো ভেবেছিল, "আচ্ছা, চোর ধরতে পাহারা বসাই!" কিন্তু গ্রামের মোড়ল বললেন, “পাহারা বসানোর দরকার নেই, আমরা সরকারকে বলি, ওনারাই ব্যবস্থা করবেন।”
সরকারি পাহারা এল। বিশাল বিশাল দাড়ি-গোঁফওয়ালা, কুচকুচে কালো চশমা পরা পাহারাদাররা গ্রামে ঘাঁটি গাড়ল। চোর ধরার বদলে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জানতে চাইল, “তোমাদের গরু চুরি হয়েছে তো? আগে গরুর মালিকানা প্রমাণ দাও!”
বেচারা মদন চাচা বললেন, “আমার গরু গতকাল রাতেই চুরি হলো।”
পাহারাদার বলল, “প্রমাণ কই?”
মদন চাচা হা করে তাকিয়ে রইলেন। জীবনে এমন কথা শুনেননি! নিজের গরুর মালিকানা প্রমাণ দিতে হবে!
অন্যদিকে, চোরদের ব্যাপারটা বেশ সুবিধাজনক হয়ে গেল। তারা এসে বলল, “আসলে গরুগুলো আমাদেরই ছিল, আমরা তো কেবল ফেরত নিয়েছি।”
পাহারাদারেরা বলল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, কাগজপত্র তো মিলছে না, চোরেরাই ঠিক।”
গ্রামের মানুষ বোঝার আগেই পাহারাদারেরা চোরদের সঙ্গে চা খেতে বসে গেল। তারপর রাতে পাহারাদারেরা নিজেরাই ধানক্ষেতে ঢুকে ধান কাটতে লাগল!
পরের দিন সকালবেলা মানুষজন দেখল, চোরেরা এখন পাহারাদারদের বন্ধু, পাহারাদাররা এখন জমির মালিক, আর গ্রামের মানুষ? তারা শুধু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
গ্রামের মোড়ল এবার বুদ্ধি করলেন। তিনি বললেন, “আমরা যদি চোরদের ‘সম্মানিত ব্যক্তি’ বলে মেনে নিই, তাহলে তারা তো চুরি করবে না!”
গ্রামের মানুষ হা করে রইল, কিন্তু কোনো উপায় না দেখে মোড়লের কথাই মেনে নিল। এখন শান্তিগঞ্জে চোরদের ‘সম্মানিত ব্যক্তি’ বলা হয়।
আর পাহারাদার? তারা এখন জমিদার হয়ে গেছে!
এদিকে মদন চাচা নিঃস্ব হয়ে একলা বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন, কারণ তিনিই ভুল করেছিলেন—গরুর মালিকানা প্রমাণ রাখতে পারেননি!