মিছিলপুরের ইতিহাসে ডিসেম্বর গণ-অভ্যুত্থান এক বিস্ময়কর ঘটনা। রাজপথ উত্তাল হয়েছিল, ব্যানার উড়েছিল, পোস্টারে পোস্টারে নেতা-কর্মীদের অমর বাণী ছাপা হয়েছিল। আর আজ, ছয় মাস পর, সবার মধ্যে চলছে এক মহা তর্ক—কে ছিল আসল বিপ্লবী?
প্রথমেই হাজির হলেন নেতা শমসের আলী। তিনি দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, “আমি যদি ফেসবুকে সেই প্রথম পোস্ট না দিতাম, ‘গণজাগরণ দরকার’, তাহলে কেউ রাস্তায় নামত না। আমি-ই আসল বিপ্লবের নায়ক!”
এ কথা শুনে পাশের নেতা রাজীব ভাই নাক সিঁটকালেন, “এই যে শমসের ভাই, পোস্ট দিলেই বিপ্লব হয়? আমি ছিলাম মাঠে, প্রথম মিছিলে আমার গলাই সবচেয়ে বেশি চিড়েছিল! আমার কণ্ঠস্বর না থাকলে কি আন্দোলন এতদূর যেত?”
রাজীব ভাইয়ের কথা শুনে তরুণ নেতা অরুণ ভাই হেসে বললেন, “আপনারা তো বুড়োরা শুধু মিটিং-মিছিল করেছেন! আসল বিপ্লব তো আমরা অনলাইনে করেছি! প্যারিসে বসে, আমেরিকায় বসে। মাস্টারমাইন্ড আমরাই। আমি ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ না চালালে আন্তর্জাতিক মিডিয়া কভার করত?”
বিপ্লবী কৃতিত্বের দৌড়ে বাদ পড়লেন না বুড়ো কুদ্দুস চাচাও। তিনি বাঁশের লাঠি উঁচিয়ে বললেন, “তোমরা কেউ জানো না, ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে আমি একটা প্ল্যাকার্ড ধরেছিলাম! সেই অভিজ্ঞতা দিয়েই আমি তোমাদের পথ দেখিয়েছি। আসলে আমিই আদি বিপ্লবী!”
এতসব কথার মাঝে হঠাৎ কেউ একজন ফিসফিস করে বলল, “আচ্ছা, ওই যে রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানের মালিক রহিম চাচা, উনিই তো প্রথম দিন আন্দোলনকারীদের চা খাইয়েছিলেন! উনার অবদান কি কম?”
শুনে সবাই থ মেরে গেলো। শেষমেশ সিদ্ধান্ত হলো, যেহেতু আন্দোলনের সব নেতা-কর্মী কেউই নিজের কৃতিত্ব ছাড়তে রাজি নয়, তাই সবাই মিলে নিজ নিজ এলাকায় ব্যানার ছাপিয়ে লিখবে—“ডিসেম্বর বিপ্লবের প্রকৃত নায়ক—আমি!”
এভাবেই মিছিলপুরের ইতিহাস একমাত্র গণ-অভ্যুত্থান পেল, যার নেতা ছিল শত শত, আর যার আসল কৃতিত্ব পায়নি কেউই!