প্রথম অধ্যায়: পুরনো বাড়ি
গ্রামের শেষ প্রান্তে, ঘন জঙ্গলের ধারে, দাঁড়িয়ে ছিল এক পুরনো অট্টালিকা। বাড়িটির নাম ছিল "শ্যামলী ভবন"। বাড়িটি দেখতে সুন্দর হলেও এর পেছনে লুকিয়ে ছিল এক ভয়ঙ্কর ইতিহাস। স্থানীয়রা বলত, এই বাড়িতে কেউ থাকতে পারে না। রাত হলে বাড়িটিতে অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যায়, কান্না, চিৎকার, আর কখনও কখনও পায়ের শব্দ। কেউ কেউ বলত, বাড়িটিতে এক আত্মা বাস করে, যে কিনা রাত হলে মানুষের রূপ ধরে ঘুরে বেড়ায়।
একদিন, এক তরুণ দম্পতি, অরুণ এবং মালা, শহর থেকে গ্রামে চলে এলো। তারা শ্যামলী ভবন কিনে সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিল। স্থানীয়রা তাদের সতর্ক করল, কিন্তু তারা কেউ কিছু মানল না। তারা বলল, "আত্মা-প্রেত এসব কিছু হয় না, এগুলো শুধু কুসংস্কার।"
তারা বাড়িটি মেরামত করে সেখানে থাকতে শুরু করল। প্রথম কয়েক দিন সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু তারপরই শুরু হল অদ্ভুত ঘটনা।
দ্বিতীয় অধ্যায়: রাতের আওয়াজ
এক রাত, অরুণ এবং মালা ঘুমোচ্ছিল। হঠাৎ মালার ঘুম ভেঙে গেল। সে শুনতে পেল, কেউ যেন নিচের তলায় হাঁটছে। সে অরুণকে জাগালো। অরুণ বলল, "কিছু না, হয়তো বাতাসের শব্দ।" কিন্তু মালার মনে শান্তি পেল না। সে নিচে যেতে চাইল। অরুণ তাকে বাধা দিল, কিন্তু মালা জিদ ধরল।
তারা দুজন নিচে নেমে এলো। নিচের তলায় অন্ধকার। তারা টর্চ জ্বালালো। হঠাৎ মালা চিৎকার করে উঠল। টর্চের আলোয় সে দেখল, এক সাদা পোশাক পরা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটির মুখে কোন রক্ত নেই, চোখ দুটি কালো গর্তের মতো। মেয়েটি হাসছিল, কিন্তু তার হাসি ছিল ভয়ঙ্কর।
অরুণ এবং মালা দৌড়ে উপরে চলে গেল। তারা দরজা বন্ধ করে ভিতরে লুকালো। কিন্তু সেই রাত থেকে তাদের জীবন হয়ে উঠল এক বিভীষিকা।
তৃতীয় অধ্যায়: আত্মার আবির্ভাব
এরপর থেকে প্রতিদিন রাতেই অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে লাগল। বাড়ির ভিতরে পায়ের শব্দ, কান্না, চিৎকার, আর কখনও কখনও সেই সাদা পোশাক পরা মেয়েটির আবির্ভাব। মালার স্বাস্থ্য খারাপ হতে লাগল। সে রাতে ঘুমোতে পারত না, সব সময় ভয়ে কাঁপত।
একদিন রাত, অরুণ বাড়ির বাইরে গিয়েছিল। মালা একা বাড়িতে ছিল। হঠাৎ সে শুনতে পেল, কেউ যেন তার নাম ধরে ডাকছে। সে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘরের কোণে লুকালো। কিন্তু ডাকটা যেন আরও কাছে চলে আসছিল। মালা চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করতে লাগল। হঠাৎ সে অনুভব করল, কেউ তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। সে চোখ খুলে দেখল, সেই সাদা পোশাক পরা মেয়েটি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি হাসছিল, আর বলল, "তুমি আমার বাড়িতে কেন এসেছ?"
মালা চিৎকার করে উঠল। ঠিক তখন অরুণ ফিরে এলো। সে মালাকে জ্ঞান হারানো অবস্থায় পেল। মালাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল। ডাক্তাররা বলল, মালার অবস্থা খুবই খারাপ, সে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
চতুর্থ অধ্যায়: ইতিহাসের সত্য
অরুণ স্থানীয় এক বৃদ্ধের সাথে কথা বলল। বৃদ্ধ তাকে শ্যামলী ভবনের ইতিহাস বলল। অনেক বছর আগে, এই বাড়িতে এক ধনী পরিবার বাস করত। তাদের এক মেয়ে ছিল, নাম শ্যামলী। শ্যামলী খুব সুন্দরী ছিল, কিন্তু সে ছিল একাকী। একদিন, শ্যামলীর বাবা তাকে জোর করে এক বৃদ্ধ লোকের সাথে বিয়ে দিতে চাইল। শ্যামলী রাজি হল না। সে রাতে, শ্যামলী আত্মহত্যা করল। তারপর থেকে তার আত্মা এই বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়।
অরুণ বুঝতে পারল, শ্যামলীর আত্মা এখনও এই বাড়িতে বাস করে। সে মালাকে বাঁচাতে চাইল। সে স্থানীয় এক সাধুর কাছে গেল। সাধু তাকে বলল, শ্যামলীর আত্মা শান্তি পায়নি। তাকে শান্তি দিতে হবে।
পঞ্চম অধ্যায়: শেষ সমাধান
সাধুর পরামর্শে, অরুণ বাড়িতে একটি যজ্ঞের আয়োজন করল। যজ্ঞের সময়, বাড়িতে এক ভয়ঙ্কর ঝড় উঠল। সবাই ভয়ে কাঁপতে লাগল। হঠাৎ শ্যামলীর আত্মা আবির্ভূত হল। সে চিৎকার করে বলল, "আমাকে শান্তি দাও!"
সাধু মন্ত্র পড়তে লাগল। শ্যামলীর আত্মা ধীরে ধীরে শান্ত হতে লাগল। শেষে, সে বলল, "আমি এখন শান্তি পাব।" তারপর সে অদৃশ্য হয়ে গেল।
ঝড় থেমে গেল। বাড়িটি আবার শান্ত হয়ে গেল। মালা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠল। তারা বুঝতে পারল, শ্যামলীর আত্মা এখন শান্তি পেয়েছে।
শেষ অধ্যায়: নতুন শুরু
অরুণ এবং মালা বাড়িটি বিক্রি করে দিল। তারা গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে গেল। কিন্তু তারা কখনও ভুলতে পারল না সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোর কথা। শ্যামলী ভবন এখনও সেই গ্রামের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু এখন আর কেউ সেখানে যায় না। স্থানীয়রা বলে, এখনও কখনও কখনও রাতে বাড়িটিতে শ্যামলীর কান্না শোনা যায়।
শেষ।