প্রত্যাবর্তন
রাত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। ট্রেনের জানালার পাশে বসে থাকা তন্ময়ের চোখ ছুটে চলেছে অস্পষ্ট অন্ধকারের ভিতর দিয়ে। বাইরে সবকিছু যেন এক অদৃশ্য অন্ধকারে ঢেকে গেছে। দীর্ঘ বিশ বছর পর সে ফিরছে নিজের গ্রামে, যেখানে তার শৈশব কেটেছিল।
তন্ময়ের মনে পড়ে যাচ্ছে পুরোনো দিনের কথা। বাবার সাথে নদীর ধারে বসে মাছ ধরা, মায়ের হাতের গরম রুটি, মাঠে বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলা—সবকিছু যেন আজও তাজা মনে হয়। কিন্তু সময় বদলেছে। মা-বাবা কেউই আর বেঁচে নেই। তন্ময় শহরের চাকরি আর ব্যস্ত জীবনে নিজেকে এতোদিন গুটিয়ে রেখেছিল যে গ্রাম তার কাছে এক স্মৃতির পাতায় পরিণত হয়েছিল।
ট্রেন যখন স্টেশনে থামল, তখন রাত প্রায় শেষের দিকে। চারদিকে নিস্তব্ধতা, শুধু কয়েকটা জোনাকি আলো জ্বেলে পথ দেখাচ্ছে। তন্ময় ধীর পায়ে গ্রামের পথ ধরে হাঁটতে লাগল। চারদিকে নতুন-পুরোনো বাড়ির মিশ্রণ। তবে তার শৈশবের পরিচিত সেই আমগাছটা ঠিক আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে।
গেট খুলতেই তার সামনে দাঁড়িয়ে রইল একজন বয়স্ক মানুষ—গ্রামের পুরোনো চৌকিদার করিম চাচা। তিনি বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে বললেন, "তন্ময় বাবা! এতদিন পর ফিরলি?"
তন্ময় হাসল। "হ্যাঁ চাচা, ফিরলাম। অনেক দেরি হয়ে গেল, তাই না?"
করিম চাচা মাথা নাড়লেন। "এখনও কিছুই দেরি হয়নি বাবা। তোর বাবা-মায়ের আশীর্বাদ আছে তোর উপর। এই বাড়ি তোকে ফিরে পেতে চায়।"
তন্ময় বাড়ির উঠোনে পা রাখতেই যেন অনুভব করল, পুরোনো স্মৃতিগুলো তাকে জড়িয়ে ধরছে। বাতাসে এখনও মায়ের রান্নার গন্ধ ভাসছে, বাবার স্নেহমাখা কণ্ঠস্বর যেন কানে বাজছে। চোখ বুজে সে অনুভব করল—হ্যাঁ, সে সত্যিই ফিরে এসেছে।
সময় বদলে গেলেও, কিছু অনুভূতি কখনো পুরোনো হয় না।