চলমান বিশৃঙ্খলার শেষ কোথায়?
অভ্যুত্থানের পর বিশৃঙ্খলার শুরু হয়েছিলো "মব" থেকে , এই মব ছিল অনেকটা ফ্ল্যাশ মবের মতোই স্ক্রিপ্টেড। অনেকেই পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে বা কয়েকজন মিলে ছিনতাই বা ওইধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে এইটা যেমন সত্যি তেমনি এখন মবের সাথেও আরও বেশ কিছু স্ক্রিপ্টেড গ্রুপ সক্রিয় আছে বলেই মনে হয়। এই মনে হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ সরকারের হঠকারী আচরণ। তারা মুখে বলতেছে মব ভালো না, মব বন্ধ করতে হবে কিন্তু কাজে কর্মে এর কোনো নমুনা আমরা দেখতেছি না। আর অন্যান্য বিশৃঙ্খলা দমনের জন্য নামানো "অপারেশন ডেভিল হান্ট" ও আই ওয়াশ ছাড়া কিছুই না তার প্রমাণ প্রতিদিন ফেসবুকে বা সংবাদপত্রেই পাওয়া যায়। আজকের আর্মি প্রধানের বক্তব্য থেকে বুঝা যাচ্ছে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আর্মি মোটামুটি দর্শকের ভুমিকাতেই থাকবে। পুলিশ যেহেতু কাজ করতেছেনা তাই তাদের হিসাবের বাইরেই রাখতেছি। আর্মির কাজ করতে যেহেতু নির্বাচন লাগবে, আবার পরিস্থিতি ঠাণ্ডা না হইলে সরকার বলবে নির্বাচন দেওয়া সম্ভব না। তো এই ডেডলকের টাইমে বিশৃঙ্খলা চলতেই থাকবে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পরিবর্তন হলেও চলবে না হলেও চলবে। ক্ষমতাকে সন্দেহ করা ফরজ বলেই মনে করি, এমনকি সেটা ফেরেশতার হাতে থাকলেও। সেই সন্দেহ থেকেই এইটা ধরে নিচ্ছি সরকার আসলে বিশৃঙ্খলাই চাচ্ছে। সরকার বলতে বুঝাচ্ছি বর্তমান উপদেষ্টাগন, বৈষম্যবিরোধীরা, আর অন্যান্য পাওয়ার হাউজ যেমন আর্মি, পুলিশ, আমলা, গোয়েন্দাসংস্থা ইত্যাদি।
বিশৃঙ্খলা হইলে সরকারের কি লাভ?
বৈষম্যবিরোধীরা নতুন দল করবে, সেখানে ছাত্র উপদেষ্টারাও থাকবে এইটা এখন ওপেন সিক্রেট। রাজনৈতিক দলের মূল কাজই হল যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়া, ক্ষমতায় থাকা, আজীবন থাকার চেষ্টা করা। বৈষম্যবিরোধীরাদের দলও এর ব্যাতিক্রম কিছু হবে বলে মনে হয় না। তবে দ্রুত নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাদের পক্ষে ক্ষমতায় যাওয়া অসম্ভব, সেক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে বিএনপি। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বৈষম্যবিরোধী দলের মূল নেতাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো দূরের কথা দেশে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে। আবার পাওয়ার হাউজ গুলো যেহেতু ১৫ বছর বিএনপির লোকজনকে অত্যাচার করেছে তাই তাদের জন্যও বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়া সুখকর কিছু হবে না। জাতীয় নির্বাচন পিছানোর জন্য সরকার স্থানীয় নির্বাচন আগে দিতে চাইতে পারে, আর স্থানীয় নির্বাচন মানে শহরের বিশৃঙ্খলা পুরা দেশের আনাচে কানাচে দাবানলের মতো ছড়িয়ে দেওয়া। যত বেশি বিশৃঙ্খলা তত দেরীতে নির্বাচন। আর যত দেরীতে নির্বাচন ক্ষমতার সবকিছু কব্জায় নিতে তত সুবিধা। আবার বিশৃঙ্খলা অনেকে বেড়ে যাচ্ছে এই কথা বলে জাতীয় সরকার তৈরির চেষ্টাও হইতে পারে, এতে করে সবাই ক্ষমতার ভাগ পাবে আবার বৈষম্যবিরোধীরাও ক্ষমতায় থেকে নিজেদের দল গোছানোর সময় পাবে। জামাতের ইকুয়েশনও অনেকটা বৈষম্যবিরোধীদের মতো। মজার ব্যাপার হইলো এইসব ইকুয়েশন প্রকাশ্যে থাকার পরও ১৫ বছরের পাশবিক ক্ষুধার কাছে হেরে গিয়ে বিএনপির লোকজন মহানন্দে বিশৃঙ্খলায় অংশ নিচ্ছে। আর সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার হইলো বাংলাদেশের মানুষ আরও একবার অপরাজনীতির বলি হইতে যাচ্ছে কারণ এবারের বিশৃঙ্খলা ১-১১ এর মতো না, এবারেরটার প্রাইম ভিক্টিম হল সাধারণ জনগণ। তাই আমি চাই আমার এইসব আশঙ্কা যেন মিথ্যা হয়, সরকার যেন সত্যি সত্যি দেশের মানুষের ভালোর জন্য কাজ করে।