Posts

ভ্রমণ

শেষ ভ্রমণ

February 24, 2025

Sunjida Islam

190
View

সকাল ৭টা: সবাই স্কুলে পৌঁছেছে, কিন্তু এশা আর নাশিতা একটু দেরি করে আসে। শিরোপা আর সাইয়ারা অ্যাসেম্বলি-র ভলান্টিয়ার, তাই তারা তাদের ডিউটিতে ব্যস্ত। ফারিহা অ্যাসেম্বলি-র লাইনে থাকবে, মানে সে ছাত্রদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবে। এ সেকশনের কিছু ফালতু মেয়ে তাদের নাম লেট লিস্টে ঢোকানোর চেষ্টা করে।

এশা (অবসন্ন গলায়): “তারা আবার কী শুরু করেছে? এ নাম ছাড়া আর কোনো কাজ নাই?”

নশিতা (গম্ভীরভাবে): কাজ নাই সারাদিন আমাদের

পিছে লেগে থাকার ধান্দা

এসময় শিরোপা আর সাইয়ারা ভলান্টিয়ার হিসেবে আসছে। তারা দেখে এশা আর নাশিতা ঝগড়া করতে যাচ্ছে। তারা একধাপ সামনে গিয়ে বলে—

শিরোপা: “তোমরা যাও, আমরা এই ব্যাপারটা দেখছি।”

এশা আর নাশিতা খুশি হয়ে গেল , এ সেকশনের মেয়েরা একসাথে করে ভাব ভঙ্গিতে হাসতে থাকে।

মেয়েগুলা (হেসে): “উফ, দেখো দেখো, এখন বন্ধু এসেছে বাঁচাতে আহারে, এমন সুন্দর একটা বন্ধুত্ব।”

শিরোপা কিছু বলতে গিয়েই সাইয়ারা তার হাত ধরে থামিয়ে দেয়।

সাইয়ারা (মৃদু কিন্তু দৃঢ়ভাবে): “থাক, ওরা যা ইচ্ছা বলুক এখন কথা বলে কোনো লাভ নেই।”

শিরোপা কিছু বলার চেষ্টা করলেও আবার চুপ হয়ে যায়। তার চোখে রাগ থাকলেও সাইয়ারা-র কথা শুনে সে কিছু বলছে না। মেয়েগুলা আবার হাসতে হাসতে চলে যায়।এশা আর নাশিতা মাঝে মাঝে ফিসফিসিয়ে কিছু বলে।


 

অ্যাসেম্বলি শেষ হয়ে গেল। ফারিহা এ সেকশনে, আর বাকি ৪ জন—সাইয়ারা, এশা, শিরোপা, আর নাশিতা—বি সেকশনে।

তারা নিজেদের ক্লাসে ঢুকে, আর সবার পছন্দের জায়গা—জানালার পাশে মাঝখানের বেঞ্চে গিয়ে বসলো। শিরোপা, সাইয়ারা, এশা, আর নাশিতা একসাথে এক বেঞ্চে।

ইশা প্রথমে বসলো, তার পাশে নাশিতা, মাঝখানে শিরোপা, আর শেষের দিকে সাইয়ারা

এশা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বললো, “বাহ, আজকে ঠিক সময়ে ক্লাসে চলে আসলাম। আবার ঐ এ সেকশনের পাগলদের সাথে মুখোমুখি হতে হলো।”

নাশিতা (মেজাজ খারাপ করে): “তারা তো ফালতু, সবসময় আমাদের পিছনে লেগে থাকে।”

শিরোপা (চিন্তিত মুখে): “কিন্তু একটা কথা... আগেও তাদের সাথে একটা সমস্যা ছিল, কিন্তু আজকে বেশি অস্বস্তিকর লাগলো। মনে হলো তাদের আমাদের নিয়ে অন্য রকম একটা প্ল্যান আছে।”

সাইয়ারা (হেসে): “তুই এতদিন পর মাথা খাটালি শুরু করলি? তাদের কাজই হলো আমাদের বিরক্ত করা, আর আমাদের কাজ হলো সেটা উপেক্ষা করা।”

এশা (হঠাৎ মাথা ঘুরিয়ে): আচ্ছা , ফারিহা কোথায়? সে কি তার ক্লাসে চলে গেলো?”

নাশিতা চোখ ছোট করে বললো, “হুম... কিন্তু আজকে ফারিহা অনেক চুপচাপ ছিল, না?”

শিরোপা মনে একটা ছোট্ট টেনশন অনুভব করলো, কিন্তু কিছু বললো না। শিরোপা বেঞ্চে বসে, একটু জোরে গলা দিয়ে বললো, “টেনশন থাকবেনা কেন? ওকে পিকনিকে যেতে দিবে না! ও খুব কষ্ট পাচ্ছে। সাথে আমার বাড়িতে আমার মা ও উঠেপড়ে লাগছে—আমাকেও যেতে দিবে না।”

তার কথায় একটা চিন্তা-মুখিত আবেগ ছিল।

এশা, সাইয়ারা, আর নাশিতা একেবারে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকলো।

এশা (বিশ্বাস করতে পারছে না): “কি! তোকেও যেতে দিবে না? কেন?”

সাইয়ারা (মন খারাপ করে): “এত সুন্দর একটা প্ল্যান, আর এখন এটা নষ্ট হয়ে যাবে?”

নাশিতা (গম্ভীর সুরে): “তোদের বাড়িতে একদম অনুমতি দিবে না?”

শিরোপা একটা গভীর নিশ্বাস নিলো আর বললো, “মা চায় না আমি এগুলো যাই। সে চায় আমি সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকি।”

শিরোপা মুখ নিচু করে থাকলো, চোখে একটা ছায়া ছিল।

এশা তার চোখে পানি দেখে আর থাকতে পারলো না। সে তার হাত দিয়ে শিরোপা-র চোখ থেকে পানি মুছে দিলো আর বললো, “কাঁদিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা আছি, দেখি আন্টির সাথে কথা বলে।”

শিরোপা কিছু বলার চেষ্টা করছিল, সাইয়ারা হঠাৎ একটু হেসে বললো, “তুই ওর মা-কে চেনিস না। আমাদের কি তার সাথে কথা বলার সুযোগ থাকবে?”

এশা মুখ খেপে গেলো, “তুই বুঝতে পারলি না? আমরা তো চেষ্টা করতে পারি!”

নাশিতা একটা গভীর শ্বাস নিলো, তারপর ধীরে ধীরে বললো, “শুন, বন্ধু, আল্লাহ’র কাছে দুআ করি তুই যেন যেতে পারিস। ও একমাত্র উপায়।”

শিরোপা চুপচাপ বসে রইলো, কিন্তু তার মন এখনও খারাপ লাগলো। আর কিছু বলার আগেই ক্লাস টিচার শাহিদ স্যার ক্লাসে ঢুকে পড়লেন।

শাহিদ স্যার—পেট মোটা, দাড়িওয়ালা—ক্লাসে ঢুকে একদম কমান্ডিং ভয়সে বললেন, “তোমরা বি সেকশনের মেয়েরা খুব বড়! শুধু পিকনিক, পিকনিক! পড়াশোনা কিছুই করো না?”

সবাই চুপ হয়ে গেলো। সাইয়ারা মুখ দিয়ে হাসছিল, কিন্তু মুখ নিচু করে রেখেছিল। এশা আর নাশিতা চুপ ছিল, আর শিরোপাতো একদম লজ্জায় পড়ে গিয়েছিল।


 

শাহিদ স্যার রোল ডাকতে ডাকতে একটু বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন। একদিকে তাকিয়ে রোল ডাকছিলেন, আর আরেকদিকে বসার সিস্টেম ঠিকমতো মেলাচ্ছিলেন।

"রোল নাম্বার ২!"

সাইয়ারা: "প্রেজেন্ট, স্যার।"

"রোল নাম্বার ৮!"

শিরোপা: "প্রেজেন্ট, স্যার।"

"রোল নাম্বার ১৮!"

এশা: "প্রেজেন্ট, স্যার।"

"রোল নাম্বার ২৩!"

নাশিতা: "প্রেজেন্ট, স্যার।"

স্যার মাথা নেড়ে, চোখ ছোট করে সবাইকে দেখতে লাগলেন। মনের মধ্যে এক কথা এল—এটা ঠিক হয়নি!

শাহিদ স্যার হাত দিয়ে তাদের দিকে ইশারা করে বললেন, "তোমরা রোল অনুযায়ী বসার কথা, কিন্তু বসেছো সব উলটো পালটো! তোমরা সবাই এখনই দাঁড়িয়ে থাকো!!"

এশা একটানা গা ভাসিয়ে, সাইয়ারার দিকে তাকিয়ে বলল, "এই, এখন আবার কি করবো?

শয়তানের দলগুলো একসাথে বসে আছে!"

স্যারের কথাগুলো শুনে সবাই ভয় পেয়ে গেল।

আজকে তোমাদের টিচার্স রুমে নেবো!"

এই কথা শুনে এশা বলল, "সরি, স্যার! আর হবে না, আমরা খুব ভুল করেছি।"

স্যার গম্ভীরভাবে বললেন, "দাঁড়াও! আমার সাথে চলো!"

এশা, সাইয়ারা, শিরোপা, আর নাশিতা সবাই একসাথে "সরি, স্যার!" বলে শুরু করল। টেনশনটা আরও বাড়লো, স্যারের কথা শুনে তারা কিছু বলতেও পারলো না।

শাহিদ স্যার একটু শান্ত হয়ে বললেন, "যা, তোমাদের মাফ করলাম, এটা তোমাদের শেষ বছর। চুপচাপ বসো,"

শাহিদ স্যারের কথা শুনে, সবাই চুপচাপ হয়ে গেল। এশা, সাইয়ারা, শিরোপা, আর নাশিতা সবাই জানতো যে, এটা তাদের শেষ বছর, আর পরবর্তীতে তাদের এসএসসি পরীক্ষা আসবে। কলেজে উঠবে, আর সবাই যেন নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে শুরু করেছে।

এশা কিছুক্ষণ পর বলল, "স্যার, আর আমরা এখন সিরিয়াসলি পড়াশোনা করবো। আজকের পর কোনো ভুল হবে না।"

সাইয়ারা চুপচাপ বসে বলল, "হ্যাঁ, শেষ বছর! আমাদের জীবনের বড় মুহূর্ত। এখন যখন স্কুল শেষ হবে, কলেজে গিয়ে ভালোভাবে পড়াশোনা শুরু করতে হবে।"

শিরোপা ধীরে ধীরে বলল, "হ্যাঁ, এসএসসি পড়া একটু চাপ থাকবে। কিন্তু আমরা সবাই মিলে, একসাথে চেষ্টা করব।"

নাশিতা সিরিয়াস হয়ে বলল, "আমি তো আমার সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করব।

শাহিদ স্যার ভবিষ্যতের কথা ভাবতে ভাবতে বললেন, "তোমরা সবাই ভালো করবে, যদি আমরা সবাই একসাথে থাকি।"


 

শাহিদ স্যার ক্লাস করে চলে গেলেন, আর ফারিহা তার ক্লাস থেকে এসে মন খারাপ নিয়ে বলল, "আমাকে যেতে দিবে না রে, সবার মন খারাপ!"

এশা, সাইয়ারা, শিরোপা, আর নাশিতা চুপচাপ ছিল, সবাই বুঝতে পারল যে ফারিহা খুবই মন খারাপ । কিন্তু, টেনশনটা আরও বাড়ল যখন একটা নোটিস আসল—ক্লাস পিকনিকে যেতে হলে ১৫০০ টাকা দিতে হবে।

১৫০০ টাকা নিয়ে সবাই কিছু না কিছু ভাবছিল।

এশা বলল, "বেশ, ভালো এমাউন্ট, ভালো জায়গায় নিবে নাকি?"

সাইয়ারা (হেসে): "কে জানে, এই কথা বলে পরে শিশুপার্কে ঘুরতে নিয়ে যাবে নাকি?"

এই কথা শুনে সবাই হাসল, ফারিহাও কিছুটা হেসে বলল, "যদি আমরা শিশুপার্কে নিয়ে যায়, তাহলে তো পুরো দিনটা একটু আলাদা হবে!"

শিরোপা (চোখে চোখ রেখে): "হ্যাঁ, আর আমাদের পিকনিকের বাচ্চাদের পিকনিক হবে অনেক

কি  আর বলবো।"

নাশিতা (গম্ভীরভাবে): "বেশ, পিকনিক হবে তো, কিন্তু বাজেটটা তো কিছু বেশি হবে। একটু সতর্ক হয়ে যেতে হবে।"

টিফিন টাইমে সাইয়ারা বলল, "আজকে আমার মায়ের হাতে রান্না খিচুরি আছে।"

এশা (উত্তর দিয়ে ২০ টাকা দিয়ে): "আমি তো কিছু বেশি খাব না।"

শিরোপা (উত্তর দিয়ে নুডলস): "সিম্পল, কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণে।"

নাশিতা (কিছু আনেনি): "আমি তোরা যা আনসোস তা খাব।"

ফারিহা (উত্তর দিয়ে চিপস): "স্ন্যাকস অন স্ন্যাকস!"

সবাই কমন রুমে গিয়ে আড্ডা দেয়, আজকেও সেখানে গিয়ে আড্ডা বসলো। সবাই ভাবছিল পিকনিকের কথা, কি হবে, কেমন হবে, এসব চিন্তা করছিল।


 

এশা, শিরোপা, আর ফারিহা ক্যানটিনের উপরের তলায় গিয়েছিল কোল্ড ড্রিঙ্ক আনতে। ফারিহা **পথ দিয়ে যেহেতু সামনে অনেক ভিড় ছিল, সে পিছনে পড়ে গেল, আর হঠাৎ ঘটল একটা মজার ঘটনা।

মজার কাহিনী:

কোল্ড ড্রিঙ্কের দাম ছিল ২০ টাকা, তাই ফারিহা ক্যানটিনের খালাকে ১০ টাকা দিল আর বলল, upper ten দিন!"

খালা রেগে বলে, "জীবনে কখনো ১০ টাকার কোল্ড ড্রিঙ্ক খাইসো?

এই কথা শুনে শিরোপা আর এশা হাসতে লাগল।

ফারিহা এসে বলল, "আমি ভাবছিলাম, নাম upper ten তার মানে ১০ টাকা!"

শুনে, তারা আরও জোরে হাসতে লাগল। আর দুজন মিলে নতুন স্লোগান বানাল:

"Upper ten মানে ১০ টাকা!"

কমন রুমে সবাই এসে, সাইয়ারা, নাশিতা, আর সবাই একসাথে কথা বলতে লাগল, " upper ten মানে ১০ টাকা!" মজা নেওয়া শুরু হয়ে গেল, সবাই হাসলো, আর ফারিহা তো পুরো উপভোগ করলো।

এই সময় নাফিজ স্যার আর জুলি ম্যাডাম কমন রুমে এসে বললেন, "এহ, নিজেদের কমন রুম বানিয়ে রেখেছে!"

নাফিজ স্যার বললেন, "থাক, ম্যাডাম, আর কদিনে আসবে, ওরা তো চলে যাবেই।"

এরপর টিফিনের ঘণ্টা বাজলো।

ফাইজা ম্যাডাম নিজের গুহা থেকে বের হলো , মানে নিজের রুম থেকে বের হয়ে, সবাইকে ক্লাসে ঢুকতে ব্যস্ত, আর সাথে সাথে তারা ৫ বন্ধুতে দৌড় দিল ক্লাসরুমে। ক্লাসরুমে গিয়ে তারা দেখলো, সবাই পিকনিক নিয়ে ব্যস্ত, কিছু চিন্তা করে আর কিছু প্ল্যান করতে থাকলো।

ফারিহা, সাইয়ারা, এশা, শিরোপা, আর নাশিতা একসাথে বললো, "সবাই গেলে, আমরাও যাবো!"

সবাই মনে মনে ভাবছিল, পিকনিকটা হবে, আর তারা সবাই প্রস্তুত থাকবে যেন মজা হয়!

গ্রুপ কল:

(গ্রুপ কল চলছে, সবার মন খারাপ)

শিরোপার মা এখনো অনুমতি দেননি, আর ফারিহার ব্যাপারটাও এখনো পরিষ্কার না। বাকিরা সবাই অনুমতি পেয়ে গেছে।

এশা: ভাই, তোরা দু’জন না গেলে আমরাও যাব না!

সাইয়ারা: হ্যাঁ, একদম! নাশিতাও আমার সঙ্গে একমত।

নাশিতা: হ্যাঁ, তোরা না গেলে আমরাও যাব না!

(শিরোপা আর ফারিহা একসঙ্গে বলে উঠলো)
শিরোপা ও ফারিহা: না রে, এমনি করিস না! তোরা কেন মজাটা নষ্ট করবি?

এশা, সাইয়ারা ও নাশিতা: না, আমাদের মজা তোদের সাথেই! তোরা না গেলে আমরাও যাব না!

(গ্রুপ কলে কিছুক্ষণ নীরবতা নেমে এলো, সবার মনেই টেনশনএই সিদ্ধান্তের ওপরেই নির্ভর করছে পিকনিকের ভবিষ্যৎ...)

(গ্রুপ কলে সবার মন খারাপ, হঠাৎ এশার দাদি এসে প্রশ্ন করলেন)

দাদি: কী হয়েছে আপু? এমন মন খারাপ কেন?

এশা: (একটু হতাশ গলায়) দাদি, শিরোপার মা এখনো অনুমতি দেননি, আর ফারিহার ব্যাপারটাও অনিশ্চিত। বাকিরা সবাই পারমিশন পেয়ে গেছে, কিন্তু ওরা দু'জন না গেলে আমাদেরও যেতে ইচ্ছা করছে না।

দাদি: এই সমস্যা? আমায় আগে বলবি না? দে, শিরোপার মায়ের সাথে আমি কথা বলি!

(সবাই একসাথে খুশিতে চিৎকার দিয়ে উঠলো! যেন নতুন একটা আশার আলো দেখলো ওরা।)

দাদি অন্য একটা রুমে গিয়ে শিরোপার মায়ের সাথে কথা বললেন। কেউ জানে না, তিনি ঠিক কী বললেন। কয়েক মিনিট পর ফিরে এসে বললেন—

দাদি: তোমাদের শিরোপার মা রাজি হয়ে গেছে! এমনকি, সে ফারিহার মাকেও বোঝাবে!

(এই কথা শুনেই কলের ওপাশ থেকে সবাই উল্লাসে ফেটে পড়লো! আনন্দে হাসাহাসি চলতে লাগলো।)

সবাই: ধন্যবাদ, দাদি! তুমি না থাকলে কিছুই হতো না!

(তারপর ধন্যবাদ জানিয়ে কল কেটে দিল সবাই। কল কাটার পরও এশার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। সে দাদির দিকেতাকিয়ে জিজ্ঞাস করলো—)

এশা: দাদি, তুমি এমন কী বললে যে ওরা এক মুহূর্তেই রাজি হয়ে গেল?

দাদি মুচকি হেসে বললেন, "তা রহস্য থাকুক!"

(এশা অবাক হয়ে দাদির দিকে তাকিয়ে রইলো, আর দাদি হাসতে হাসতে চলে গেলেন...)


 

আজকের পিকনিকে দিন, সবাই মহা খুশি
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সবাই সাতটায় উপস্থিত হল। শিক্ষকেরা সবাই ছাত্রী গুছাচ্ছিলেন। কেউ খাবার বন্টনে ব্যস্ত, কেউ আবার মজা করছিল।

এশা, সাইয়ারা, নাশিতা আর ফারিহা চলে এলো।

শিরোপা এখনো আসেনি, তার খবর কেউ জানে না।

এমন সময় ক্লাস ক্যাপটেন এসে বলল—

ক্লাস ক্যাপটেন: "খাবারের লাইন ধরো!"

(সবাই দ্রুত খাবারের দিকে ছুটে গেল, আর পিকনিকের মজা শুরু হলো...)

এভাবে পিকনিকে সকলে মেতে উঠলো।

পিছন থেকে শিরোপা ডাক দিলো: "এইজে, আমি!"

সবাই একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠলো, আনন্দে যেন আকাশ ছুঁতে চাইল! তারপর সবাই একসাথে খাবারের লাইন ধরলো।

খাবার নিয়ে তারা এখন বাসে উঠে যাবে।

এর মধ্যে, এশা খেয়াল করলো—কেমন জানি, একটা লোক কালো কাপড় পরে মুখ ঢেকে তাদের বাসের দিকে তাকিয়ে আছে।

এই দৃশ্যটি দেখে তার কিছুটা অস্বস্তি হলো, কিন্তু সবাই তখন আনন্দে মগ্ন।

এমন সময়, বাসে উঠে সবাই বসে গেল।


 

তারা পাঁচজন বসলো, সবশেষে।

গাড়ি শুরু হতে বাস এর সবাই একসাথে আনন্দে মেতে উঠলো।

জোরে শোরে গান বাজতে লাগলো, সাথে শিক্ষকরা ও আনন্দে মেতে উঠলেন।

হঠাৎ কী যেন একটা ধাম করে শব্দ হলো, আর বাসটা জোরে ব্রেক করলো। সাথে সাথেই যারা দাঁড়িয়ে ছিল, তারা পড়ে গেল।

এটা ঘটে যাওয়ার পর সবাই আতঙ্কিত হয়ে গেল, আর বাসের মধ্যে সুনসান নীরবতা ফিরে এলো।


 

বাস থেকে স্যার নাফিজ নামলেন, সঙ্গে ছাত্রীরা

এশা তখন সেদিকে তাকিয়ে দেখে, “এই তো, সে সেই লোক।” যে লোকটিকে সে আগেই বাসের জানালা দিয়ে দেখে ছিল।

এশা চমকে উঠে মনে মনে বলে, “এই লোকটা কে, আর কেন আমাদের দিকে আসছে?”

বাসের দিকে চোখ রেখে তারা দেখে, লোকটির সঙ্গে ৫-৬ জন লোক আসছে, যাদের মুখে অদ্ভুত এক ধরনের তীব্রতা ছিল। একসাথে তারা এগিয়ে আসছে তাদের দিকে, আর এশার মনে হয় যেন কিছু অস্বাভাবিক ঘটতে যাচ্ছে।


শিরোপা বললো, “এই কি অদ্ভুত কান্ড, ভগবান!”
সাইয়ারা বললো, “শুরুর দিকেই গোলমাল!”
নাশিতা বললো, “আল্লাহ রক্ষা করুন।”
ফারিহা ভয়ে কেঁদে দিলো।
এশা বললো, “ দেখো, ওরা স্যারের কাছে ক্ষমা চাইছে।”

স্যার তাদের ইচ্ছামতো কথা  শুনালেন বললেন। 

সবাই এটা দেখে হাসতে শুরু করলো।
এরপর স্যার তাদের সতর্কতা দিয়ে যেতে বললেন।
ওরা লক্ষ্য করলো, যাওয়ার সময় যেন তারা কিছু রহস্যময় হাসি দিয়ে চলে গেল।

এটা দেখে সবার মনে আরও কৌতুহল সৃষ্টি হলো, কিন্তু সবাই বুঝলো না আসলে কী ঘটেছে।


 

বাস থামলো, এবং ওই লোকগুলোও ঠিক সেই মুহূর্তে সেখানে এসে পৌঁছাল।
সাইয়ারা তখন তাদের দিকে লক্ষ্য করে। সে প্রথমে বুঝতে পারে না, কিন্তু পরে তার মনে আসে, "এই লোকগুলো তো... কি অদ্ভুত। এরা কি আমাদের জন্য কিছু ক্ষতি করবে?"
এই ভাবনায় সাইয়ারা কিছুটা অস্থির হয়ে পড়ে। তার মনে হয়, তাদের মতো ভালো মানুষদের এখানে এনে এমন লোকদের উপস্থিতি যেন কিছু খারাপ ঘটাবে।

একসময়, বাসের সবাই হোটেলের দিকে এগিয়ে যায়, কিন্তু ওই লোকগুলো একে একে বাসের দিকে তাকিয়ে থাকে, যেন তারা কিছু খুঁজছে। তাদের চোখে এক ধরনের অদ্ভুত তীক্ষ্ণতা ছিল। সাইয়ারা এবার নিশ্চিত হয়ে যায় যে, কিছু একটা ঘটাবে


 

শিরোপা সবার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছিল।

সে অনুভব করছিল যে কিছু একটা ভুল হচ্ছে, কিন্তু ঠিক কী তা সে বুঝে উঠতে পারছিল না। চোখের সামনে ওই লোকগুলোর উপস্থিতি তার ভেতরে একটা শূন্যতার সৃষ্টি করছিল, আর তার মনে হচ্ছিল যেন অদৃশ্য এক বিপদ আসছে। যখন তারা বাসের দিকে তাকিয়ে ছিল, শিরোপা বুঝতে পারল যে, এই লোকগুলো কোনো সাধারণ মানুষ নয়। তাদের মধ্যে একটা অদ্ভুত অস্বস্তি ছিল যা শিরোপার মনে দুঃস্বপ্নের মতো ভয় ধরিয়েছিল।


 

তখন এশা এসে শিরোপার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
“শুন, এই নে, এইটা পর।”
শিরোপা অবাক হয়ে বলল, “এইটা কী?”
এশা হেসে বলল, “আসার সময় দাদি এই তাবিজটা আমার হাতে দিয়ে বলেছিল, ‘এইটা পরে থাকতে, তুমি বিপদ মুক্ত থাকবে।’ তাই, এখন তুই পর, আমার বিশ্বাস তুই ঠিক থাকবে।”
শিরোপা কিছুটা আশ্চর্য হয়ে তাবিজটা হাতে নিয়ে বলল, “তুই অনেক ভালো রে।”
তারপর শিরোপা এশাকে জড়িয়ে ধরলো, তার গলায় শ্বাস নিয়ে কিছুটা শান্ত হলো।

এমন সময় নাশিতা আর ফারিহা দৌড়ে আসলো।
নাশিতা হাসতে হাসতে বলল, “কী হয়েছে তোদের? জানস 

কি হয়েছে?
সবাই একসাথে জিজ্ঞাসা করল, “কী হয়েছে?”
নাশিতা হাসতে হাসতে বলল, “ফারিহাকে তো দেখি, নাফিজ স্যার ডিম বলসে!”
এটা শুনে সবাই একসাথে ফারিহার মজা নিতে শুরু করলো। ফারিহার মুখে লাল হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা, আর তার গালে গোলাপী আভা ফুটে উঠলো।
ফারিহা তখন ভীষণ লজ্জিত হয়ে মুখ নিচু করে ফেলল।

এই দৃশ্যে, ফারিহার অপ্রত্যাশিত লজ্জার মিশ্রণে হাসির আবহাওয়া তৈরি হলো, এবং সবার মন কিছুটা হালকা হয়ে গেল। তবে শিরোপার ভয় কিছুটা কাটলেও, ওই রহস্যময় লোকদের উপস্থিতি ও ভয় তিল তিল করে তার মনেও অস্থিরতা তৈরি করছিল।


 

এরপর নাশিতা বলল,
“জানো, হোটেলের পেছনে একটা বাগান আছে, কী সুন্দর! চল, আমরাও গিয়ে দেখি।”
সবাই একসাথে উঠে পড়ে, আর কিছু সময় ঘুরে এক সুন্দর বাগান দেখতে পায়। তবে এর মধ্যেই তারা এক দৃশ্য দেখতে পায়—একটা সুন্দর বিড়াল ছুটছে। সবাই বিড়াল পেছনে ছোটে, কিন্তু কিছু দূরে গিয়ে  বিড়ালটি অদৃশ্য হয়ে যায়।

এরপর নাশিতা বলল,
“ভাই, আমরা অনেক দূরে চলে এসেছি। চল, স্যার নিশ্চয়ই আমাদের খুঁজছে ।”
এটা বলার পর, তারা ফিরে তাকিয়ে দেখতে পায় সেই রহস্যময় লোকগুলো। তারা হাসছে, কিন্তু সেই হাসি শুনে শিরোপার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। হাসিটা ছিল খুবই অদ্ভুত এবং ভীতিপ্রদ।
শিরোপা তখন বুঝতে পারে, কিছু একটা আছে, কিছু রহস্যময় শক্তি এখানে তাদের তাড়া করছে। এশা ও সাইয়ারা দুইজন হাত ধরে আসেহ

ফারিহা শিরোপা কে জোড়ায় ধরসে

এ সময়, শিরোপার মন ভার হয়ে আসে। হঠাৎ করে, নাশিতা গম্ভীর কণ্ঠে কিছু বলে উঠলো, আর তখনই তাদের চারপাশে যেন এক অদৃশ্য শক্তি কাজ করতে শুরু করে।
অপর দিকে, রহস্যময় লোকগুলো তাদের দিকে আগের মতোই তাকিয়ে থাকে। তারপর, শিরোপা এক ঝটকায় ফাঁপিয়ে পড়ে, তার সামনে কিছু অদ্ভুত দৃশ্য এবং অনুভূতি ভেসে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই যেন এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতার মধ্যে চলে যায়, এক দুঃস্বপ্নের মতো অবস্থা।

এই মুহূর্তে এক অদ্ভুত শীতল পরিবেশ তৈরী হয়, এবং সবাই একে অপরকে সাহায্য করতে চেষ্টা করে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে তারা জানে যে, কিছু গভীর রহস্য আর ভয়ের সাথে তাদের মুখোমুখি হতে হবে।

Comments