এই প্রথম সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দৃঢ় ভাষায় কথা বলেছেন। তিনি আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্ডারমাইন না করার বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন। তাঁর বাহিনীর মাত্র ৩০ হাজার সদস্য নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। যেখানে পুলিশ সদস্য রয়েছে ২ লাখ। কিন্তু এখন পর্যন্ত গেল ৬ মাসে পুলিশকে পূর্ণমাত্রায় ফাংশনাল করতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার।
সেনাপ্রধান বলেছেন, "আপনারা কিছু মনে করবেন না, আজকে আমি পরিষ্কার করে কথা বলতে চাই। আপনাদের সবার হয়ত ভালো নাও লাগতে পারে, কিন্তু বিশ্বাস করেন, আমার এটা যদি আপনারা গ্রহণ করেন, আপনারা লাভবান হবেন; কোনো ক্ষতি হবে না। আমার অন্যকোনো আকাঙ্ক্ষা নাই। দেশ ও জাতিটাকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে ছুটি করা। আই হ্যাড এনাফ। আমি চাই ৭-৮ মাসের মধ্যে দেশ এবং জাতিকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসব। সেনাবাহিনীকে সাহায্য করেন, আক্রমণ করবেন না।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর রাওয়া কনভেনশন হলে আয়োজিত ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান এসব কথা বলেন।
এসময় সেনাপ্রধান আরও বলেছেন, "কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করুন, দেশ বিপন্ন করবেন না। আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। পরে বলবেন, আমি আপনাদের সতর্ক করিনি।"
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সেনাপ্রধান বলেন, "পিলখানায় সেনাসদস্যরা নয়, তদানীন্তন বিডিআর সদস্যরাই সেনা অফিসার হত্যায় অংশগ্রহণ করেছে। ফুল স্টপ। এখানে কোনো ইফ এবং বাট নেই। এতে কোনো রাজনৈতিক ইন্ধন বা বেদেশি শক্তির হাত আছে কিনা তা তদন্ত কমিটি খুঁজে বের করবে। কিন্তু যেসব বিডিআর সদস্য বিচারে অভিযুক্ত হয়েছেন, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।"
ডিসেম্বরের মধ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ইননক্লুসিভ নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছে সরকার। এই সরকারকে সকলপক্ষকে সমর্থন দিয়ে যেতে বলেছেন।
সেনাপ্রধানের মতে, "একীভূত না থেকে আমরা ব্যক্তিগত হানাহানি ও একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বিষোদগারে ব্যস্ত রয়েছি বলে অপরাধীরা সুযোগ নিচ্ছে। আমরা একটা অরাজক পরিস্থিতিতে অবস্থান করছি। এমন সময় অপরাধ করলেও এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে -এমনটাই অপরাধীদের ভাবনা।
এটি খুবই ভালো পয়েন্ট। চেপে বসা একটা সরকার পিছুটান দেয়ার পর দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতা ও সম্প্রীতির আবহ থাকতে পারত। অবস্থাদৃষ্টে দেখাই যাচ্ছে, দেশে বর্তমানে সেটা নেই।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল নবগঠিত দলকে স্বাগত জানাচ্ছে না। বিএনপি তাদের ব্যক্তিগত এজেন্ডা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করেই নির্বাচন চাইছে। অপরদিকে এই মুহূর্তে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা জামায়াতও সরকারি অনেক নীতির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে পারছে না।
সেনাপ্রধান বলেছেন, অপরাধীদের বিচার হবে। তবে তিনি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সাথে জড়িতদের ব্যাপারে কিছুই স্পষ্ট করেননি। তারপরও সেনাপ্রধানের স্পষ্ট বয়ান ভীতিগ্রস্ত জনগণকে আশ্বস্ত করবে। ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি, ধর্ষণ ও খুনের সাথে জড়িতদেরকে কড়া বার্তা দেবে।
আমরা চাই দেশটা ভালো থাকুক।
এখানকার মানুষেরা নিশ্চিন্তে ঘুমাক।
অন্তর্বর্তী সরকারের ডানহাত হিসেবে
বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকা এখন অনেক বড়। তাদের দেয়া কথা রাখবে এই বাহিনী -আমাদের সমন্বিত প্রত্যাশা এটাই।
আমাদের মধ্যে মত ও চিন্তায় বিরোধ থাকতে পারে, দিন শেষে দেশ ও জাতির দিকে খেয়াল করে আমরা সবাই যেন এক থাকতে পারি। ভেদাভেদ ও কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে এক হয়ে যদি কাজ না করতে পারি, তাহলে এই দেশ ও জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। সেনাপ্রধানের এই বাণীতে আমাদের অকুন্ঠ সমর্থন ও সংহতি।
লেখক: সাংবাদিক
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫