তোমার জন্য অনন্তকাল
দুই ভুবনের দুটি প্রাণ
বাংলার এক ছোট গ্রামে তনু নামে একটি মেয়ে বাস করত। তার বাবা ছিলেন কৃষক, মা গৃহিণী। সাধারণ জীবনযাত্রার মাঝে তনু ছিল স্বপ্নবিলাসী। তার বই পড়া, প্রকৃতির সাথে সময় কাটানো, আর গান শোনার অভ্যাস ছিল। গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করতে গিয়ে পরিচয় হয় তন্ময়ের সাথে।
তন্ময় ছিল এক ধনী ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে। তার বাবা-মা তাকে গ্রামের স্কুলে ভর্তি করান, যাতে সে শিকড়ের সাথে সংযুক্ত থাকে। প্রথমে তন্ময় তনুকে নিয়ে খুব একটা ভাবেনি, তবে সময়ের সাথে তাদের বন্ধুত্ব দৃঢ় হয়। তনুর সরলতা আর আবেগময় চরিত্র তন্ময়কে আকৃষ্ট করে, আর তন্ময়ের বুদ্ধিমত্তা ও দৃঢ়তা তনুকে মুগ্ধ করে।
---
বন্ধুত্ব থেকে প্রেম
সময়ের সাথে তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বের গণ্ডি পেরিয়ে প্রেমে রূপ নেয়। গ্রামের মেলায় তারা একসঙ্গে ঘুরত, নদীর ধারে বসে স্বপ্নের গল্প করত। তনু তন্ময়ের পাশে দাঁড়িয়ে তার জীবনে স্বপ্নের রং লাগাত। কিন্তু সমাজ আর তাদের পারিবারিক পার্থক্য ছিল এক অদৃশ্য দেয়াল, যা তাদের সম্পর্কের গভীরে ছাপ ফেলতে শুরু করে।
---
তন্ময়ের বিদেশযাত্রা
তন্ময়ের বাবা তাকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তন্ময় যখন খবরটি জানায়, তনুর চোখে জল আসে। সে জানত, এই যাত্রা তাদের সম্পর্কের মধ্যে এক কঠিন সময় এনে দেবে। তন্ময় প্রতিশ্রুতি দেয় ফিরে এসে তনুর সাথে তার ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে।
বিদায় নেওয়ার দিন তনু বলে,
“তুমি যদি ফিরে না আসো, আমি জানব আমার ভালোবাসা ব্যর্থ হয়নি। কারণ আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব। ভালোবাসার ত্যাগই তো প্রকৃত ভালোবাসা।”
তন্ময় কিছু না বলে তার হাত ধরে রেখেছিল।
---
প্রেমের জন্য অপেক্ষা
তন্ময় বিদেশে চলে যাওয়ার পর তনু প্রতিদিন তার চিঠির অপেক্ষা করত। প্রথম দিকে চিঠি আসত নিয়মিত। তন্ময় তার জীবনের অভিজ্ঞতা আর স্বপ্নের কথা শেয়ার করত। কিন্তু সময়ের সাথে সেই চিঠির ফ্রিকোয়েন্সি কমে যেতে থাকে।
তনু তার গ্রামের জীবনে নিজেকে ব্যস্ত রাখত। সে টিউশনি করাত, গরিব বাচ্চাদের পড়াত। কিন্তু তন্ময়ের ফিরে আসার দিন গুনত। তার আশার প্রদীপ কখনও নেভেনি।
---
তন্ময়ের পরিবর্তন
বিদেশে তন্ময় নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তোলে। সেখানকার জীবনের চাকচিক্যে সে নিজের শিকড়কে ভুলতে শুরু করে। তনুর সাথে যোগাযোগ ক্ষীণ হতে থাকে। সময়ের সাথে সে নিজেকে তনুর স্মৃতি থেকে দূরে সরিয়ে নেয়।
কয়েক বছর পর, তন্ময় দেশে ফিরে আসে। সে এখন আত্মবিশ্বাসী, সফল, কিন্তু তার হৃদয়ে তনুর জন্য সেভাবে জায়গা আর নেই।
---
অপেক্ষার ফল
তন্ময় গ্রামে ফিরে আসার পর তনুর সাথে দেখা করে। তনু তাকে দেখে আবেগে অভিভূত হয়, কিন্তু তন্ময়ের চোখে সেই পুরনো মমতা দেখতে পায় না। তন্ময় ব্যস্ত তার নিজের সাফল্যের গল্পে। সে বুঝতে পারে না যে তনু আজও তাকে ভালোবাসে।
একদিন তন্ময় বলে,
“তনু, আমি তোমার জন্য কিছুই করতে পারিনি। আমার জীবন এখন একদম আলাদা।”
এই কথা শুনে তনুর হৃদয় ভেঙে যায়, কিন্তু সে কিছু বলে না। তার ভালোবাসা ছিল নিঃস্বার্থ।
---
অমর প্রেম
তন্ময় শহরে চলে যায়। তনু তার জীবনে তন্ময়ের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকে। সে জানত, তার অপেক্ষা কখনও তন্ময়ের কাছে পৌঁছাবে না। কিন্তু তার ভালোবাসা ছিল এক নিঃশব্দ শক্তি, যা তাকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে এগিয়ে যেতে সাহায্য করত।
তন্ময় একদিন উপলব্ধি করে যে, তনু ছিল তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। কিন্তু ততদিনে তনু জীবনের পথ ধরে দূরে চলে গেছে।
---
উপসংহার
তনুর ভালোবাসা ছিল ত্যাগের, অপেক্ষার, আর নিঃশর্ত সমর্পণের প্রতীক।
তন্ময় হয়তো জীবনে অনেক কিছু অর্জন করেছিল, কিন্তু তনুর মতো একজন প্রেমিকার গভীরতা ও আবেগের মর্ম বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল।
গল্পটি প্রমাণ করে, সব ভালোবাসা জয়ী হয় না, কিন্তু ত্যাগের মাধ্যমে ভালোবাসা চিরকাল অমর হয়ে থাকে।
শেষ।