হাসমত আব্দুল্লাহ্ একজন সাধারণ মানুষ। মধ্যবয়সী, চেহারায় নিরীহ ভাব, পেশায় ছোটখাটো ব্যবসায়ী। তার গোটা জীবনটাই চলে গেছে সৎভাবে চলতে গিয়ে ধাক্কা খেতে খেতে। কিন্তু দিনশেষে, সমাজের চোখে সে তেমন কেউ না। অথচ তার ছোট্ট এক স্বপ্ন ছিল—একবার অন্তত সে ক্ষমতার স্বাদ পাবে, একটু হলেও লোকে তার নাম শুনবে।
একদিন হঠাৎ ফেসবুকে স্ক্রল করতে গিয়ে সে এক অদ্ভুত বিজ্ঞাপন দেখে—
“প্রয়োজনে মব ভাড়া নিন! আন্দোলন, মিছিল, গ্যাঞ্জাম, গুজব ছড়ানো কিংবা কাউকে হেনস্তা করা—সব সুলভ মূল্যে! ১০ জনের প্যাকেজ মাত্র ৫০০০ টাকা! ৫০ জনের স্পেশাল অফার ২০% ছাড়! হরতাল বান্ডেল, তাণ্ডব প্যাকেজ, বিক্ষোভ স্পেশাল—সব আছে! ইনবক্স করুন।”
হাসমত প্রথমে ভেবেছিল মশকরা। কিন্তু কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে নম্বরটা সেভ করল—"মব এন্ড কোং"।
পরদিন অফিসের সামনে একটা ঝামেলা লাগাবে বলে সে সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ সম্প্রতি তার দোকানের পাশেই এক বহুজাতিক কোম্পানি শাখা খুলেছে, যার ফলে তার ব্যবসায় ধস নেমেছে। আরেকটা কারণ হলো, সে চেয়েছিল অন্তত একবার এলাকার লোকজন তাকে নেতা বলে ডাকুক।
সে নম্বরে কল দিল। ওপাশ থেকে গম্ভীর গলায় একজন বলল, “স্যার, কী ধরনের মব দরকার? মৃদু বিক্ষোভ, মাঝারি তাণ্ডব, নাকি ফুল-স্কেল লুটপাট?”
হাসমত চমকে গেল। ব্যাপারটা এত সিরিয়াস! ভাবল, ছোটখাটো একটা বিক্ষোভই ভালো, যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তেমন খেপে না যায়। সে মাঝারি প্যাকেজ নিল—২৫ জন লোক, ৩ ঘণ্টার জন্য। খরচ ১০ হাজার টাকা।
পরদিন ঠিক ১১টায় হাসমতের দোকানের সামনে হাজির হলো একদল লোক। কেউ ব্যানার ধরেছে, কেউ চিৎকার করছে—
“আমাদের দাবি মানতে হবে! অন্যথায় চলবে না!”
হাসমত নিজেও গলা ফাটিয়ে চিৎকার শুরু করল, যদিও সে নিজেও জানে না আসলে কী দাবি করা হচ্ছে। তবে আশেপাশের লোকজন তার পাশে এসে দাঁড়ানো শুরু করল। অফিসের বড়বাবু মাথা চুলকাতে লাগল। পুলিশ এলো, মিডিয়া এলো।
মুহূর্তেই হাসমতের ছবি নিউজে চলে গেল—“দেখুন, এক নিরীহ ব্যবসায়ীর ন্যায্য দাবির পক্ষে উত্তাল বিক্ষোভ!”
হাসমত ভাবল, “বাহ! এতদিন পর আমি লোকের চোখে পড়লাম! আমি লিডার!”
কিন্তু সমস্যা বাঁধল তখন, যখন সেই ভাড়া করা মব কোম্পানি আবার কল দিল—
“স্যার, আমাদের লোকজন আরও ২ ঘণ্টা থাকার জন্য বলছে। অতিরিক্ত সময় লাগবে, ফি লাগবে। পেমেন্ট না দিলে, উল্টো আপনার দোকানে হামলা করবে!”
হাসমতের মাথায় বাজ পড়ল! সে তো শুধুই একটু নেতা হতে চেয়েছিল, গ্যাংস্টার নয়!
হাসমতের টাকা শেষ। কিন্তু মব ছাড়তে নারাজ। তারা দোকানেই ঢুকে গেল, “আরে ভাই, টাকা দিতেই হবে!”
পুলিশ তখন ধরপাকড় শুরু করল। মিডিয়া খবর বানিয়ে ফেলল—“বিক্ষোভের আড়ালে বিশৃঙ্খলা! মূল হোতা হাসমত গ্রেফতার!”
অফিসের বড়বাবু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। হাসমতের দোকান বন্ধ হয়ে গেল।
জেলে বসে হাসমত ভাবল—
“নেতা হওয়ার শখ ছিল, ভাড়া করা মবই আমার জীবন শেষ করে দিল।”
ভাবতে ভাবতেই মোবাইলে সেই পরিচিত নম্বর থেকে আবার একটা মেসেজ এলো—
“আগামীতে আমাদের সেবা নিতে ভুলবেন না! মব এন্ড কোং—জনগণের জন্য জনগণের পাশে।”
জেলে মোবাইল রাখতে মব লাগে না,
ওখানে সামান্য খরচাতেই দারুণসব সেবা মেলে।