Posts

গল্প

সুইট সিক্সটিন!

February 28, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

157
View

বছর ২০৩০। বাংলাদেশে তখনও রাজনৈতিক পালাবদল তেমন হয়নি। তবে নতুন নতুন দল গজিয়ে ওঠার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে।

একদিন হঠাৎ করেই খবর এল— সরকার দলীয় কয়েকজন চৌকস রাজনীতিবিদ মিলে "বাংলাদেশ নাগরিক দল" (সংক্ষেপে "বানাদ") নামে নতুন দল গঠন করেছেন। নামটা শুনে অনেকে বিভ্রান্ত হলো— শহুরে নাগরিক আবার আলাদা দল করে নাকি? গরিব-দুঃখীরা তবে কোন দলে থাকবে?
দলটির প্রধান উপদেষ্টা, যিনি আগে একটা বড় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, বললেন—
"এটা আসলে এক্সক্লুসিভ পার্টি। 
আমাদের দলে এলিট নাগরিক ছাড়া কাউকে নেব না।"

সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেন—
"তাহলে সাধারণ মানুষ কই যাবে?"
নেতা হেসে বললেন—
"ওদের জন্য তো বিএনপি-জামায়াতের মতো আগের দলগুলো আছেই!"

জনগণের মাঝে তখন গুঞ্জন— "এই দল নাকি সরকারেই থেকে গঠন করা হয়েছে!"
অনেকে মজা করে নাম দিল "কিংস পার্টি"।

দলটির নীতিমালাও বেশ মজার ছিল—
১. দলের সদস্য হতে হলে কমপক্ষে ১০ বছর সরকারে থাকার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
২. ভোটারদের ভালো ভালো খাবার খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, তবে চাল-ডাল নয়, থাকতে হবে ফাইভ-স্টার হোটেলের বুফে!
৩. নির্বাচন আসলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতার কৌশল রপ্ত করতে হবে।
৪. কর্মসূচি থাকবে শুধু ঢাকায়, কারণ গ্রামের লোকজন "এলিট নাগরিক" নয়!
৫. ক্ষমা চাওয়া সাপেক্ষে চিহ্নিত ও পরাজিত এলিট ফ্যা'সিস্টরাও এই দলে নাম নিবন্ধন করে ভোল পাল্টাতে পারবে।

দলটি প্রথম সভা করল এক পাঁচতারা হোটেলে। বিশাল বাফেটের আয়োজন, বিদেশি সাংবাদিকরাও আমন্ত্রিত। সভার মূল স্লোগান ছিল—
"জনগণের জন্য রাজনীতি নয়, রাজনীতির জন্য জনগণ!"
গণমাধ্যমের ক্যামেরা চলছিল, নেতারা ব্যস্ত ছিলেন পার্টি ব্র্যান্ডিং নিয়ে। তখনই এক তরুণ সাংবাদিক প্রশ্ন ছুড়ে দিল—
"আপনাদের দলে জনগণের কোনো ভূমিকা থাকবে কি?"
প্রধান নেতা মুচকি হেসে বললেন—
"দেখুন, জনগণের কাজ ভোট দেওয়া, আমাদের কাজ নেতৃত্ব দেওয়া। তাই ওরা আমাদের অনুগত থাকবে, আমরাও তাদের দেখেশুনে রাখব!"

জনগণ ব্যাপারটা বুঝতে না পারলেও, মিডিয়া বুঝে গেল— এটা সেই পুরোনো রাজনীতি, নতুন মোড়কে।

২০৩৫ সাল।
"বানাদ"র বয়স তখন পাঁচ বছর। কিন্তু সমস্যা হলো, এ দলে নেতা প্রচুর, কিন্তু কর্মী নেই। জনসংযোগ বলতে কেবল ফেসবুক লাইভ আর বিদেশি মিডিয়া কভারেজ।
এর মধ্যে দলীয় সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিলেন—
"বানাদ এখন থেকে পলিটিক্যাল সুইট সিক্সটিন মডেলে চলবে। ১৬ জন এলিট নেতা, ১৬ কোটি জনসংযোগ, ১৬ বছরের পরিকল্পনা!"
জনগণ হাসল, আবার কেউ কেউ চিন্তিত হলো— "নতুন কৌশল বুঝি?"
পরের নির্বাচনে দেখা গেল, "বানাদ" একটাও ভোট পায়নি, অথচ তাদের নেতারা সবাই বিজয়ী! কিভাবে?
গণমাধ্যম খোঁজ নিয়ে জানল— বানাদ'র প্রতিপক্ষ বলতে কেউ ছিল না!
এভাবেই "বাংলাদেশ নাগরিক দল" ধীরে ধীরে রাজনীতির এক অদ্ভুত কিংবদন্তি হয়ে গেল— যাদের কর্মী ছিল না, কিন্তু সরকার ছিল!

শেষে এক প্রবীণ ভোটার আফসোস করে বললেন—
"এরা তো আমাদের রাজনীতি থেকে নাগরিকত্বই কেড়ে নিল!"

Comments

    Please login to post comment. Login

  • MAHAFUJ 9 months ago

    আপনার লেখাটি পড়েছি, ভালই লিখেছেন কিন্তু শেষের টুকুতে রহস্য বেশি মোড়ানো