একটি কবিতার সংকলন "কথার কথা" পড়তে পড়তে হেলান দিয়ে বসে পরে তিনা বারান্দার একটি চেয়ারে। বইমেলা থেকে কেনা একটি বই। বইটির একটি কবিতায় এসে তার চোখ আটকে যায়। আরেহ্ এটা তো তার নিজেরই লেখা কবিতা।
এই লেখক কেমনে জানে? চেনাজানা কেউ না-কি? নাহ্, তাহলে তো আনন্দে আত্মহারা হয়ে মনের কথাটা বলেই ফেলতো। কোথা থেকে পেয়েছে সে এই কবিতা? কি সুন্দর সুন্দর কবিতাই না লেখেন ইনি! কিন্তু কবিতাগুলো দেখে তো কোথাও থেকে চুরি করা মনে হচ্ছে না।
মনে করারও একটা লিমিট আছে। সহ্য করারও একটা সীমা আছে। পুরো সন্দেহই যেয়ে পড়ে ছোট বোন স্পৃহার উপর। কোথাও এটা তো নয় যে স্পৃহা কাওকে কবিতাটা লিখে দিয়েছে। খোঁজাখুঁজির একশেষ। সে কিভাবে জানবে যে স্পৃহা একটা চোরে পরিণত হয়েছে কি-না?
পছন্দের কারও জন্য? কই এত কথা শেয়ার করে মেয়ে এই কথাটা বললো না কেন? পছন্দের কেউ থাকলে বিয়ে করে ফেললেই তো হয়, মনে করে তিনা। আজকাল পাশে থাকার মত মানুষ খুবই কমে গেছে!
তাহলে এই ছেলেটা কে? বেশ তো কবি পরিচিতি থেকে সে সবটাই জেনে নেবে। তারপর কি থেকে কি যে করে ফেলবে সে, ফেইসবুকে খুঁজলেই তো হয়, বিরবির করে বলে ওঠে তিনা।
কিন্তু সেখানে তো এই একটা ছবিই নাও দেয়া থাকতে পারে। অনেক ভেবে-চিন্তে সে সিদ্ধান্ত নেয় বিষয়টা গোপন রাখার। কবি পরিচিতি তো জানা গেল, বাকি ব্যাপারটা সে পরে দেখে নিবে।
কোথাও এমনটা তো নয় যে তারই সাথে কোনো একজনের সম্পর্ক দেখাতে চায় স্পৃহা? স্পৃহাই বইটা কিনেছে অনেক শখ করে। নইলে আজকাল কবিতার চেয়ে মানুষ গল্পের বই-ই বেশি পছন্দ করে। তাহলে কি তাকে না জানিয়ে তারই বিয়ে দেখা হচ্ছে? এত গোপনীয়তা কেন?
ছেলেটা দেখতে শুনতে খারাপ না, বয়সও আছে মোটামুটি। অবিবাহিত না হলে শুধুই বাবা-মার পরিচয় কেন দেয়া থাকবে?
তার নিজের কি কোনো পছন্দের দাম নাই না-কি। সব কি শুধু স্পৃহার জন্য? সে-ই বা কিসে কম যায়? ভাবতে ভাবতেই আইডিয়াটা মাথায় আসে স্পৃহাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়?
যতই হোক বোন তো! সে স্পষ্টভাবেই জানে যে সে কবিতাটা নকল করে নি, তাই নাহলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে কেন? তাহলে কি স্পৃহা লুকিয়ে-চুরিয়ে তার ডাইরির কবিতাগুলো কাউকে দিয়ে দিচ্ছে? ধরা তো একদিন তাকে পড়তেই হবে, কিন্তু কিভাবে?