Posts

গল্প

গায়ের বটতলা

March 1, 2025

Yeashin

74
View

 

শীতের সকাল। কুয়াশায় ঢাকা গ্রামের পথঘাট। দূর থেকে হালকা মেঘের মতো ধোঁয়া উড়ছে— চায়ের দোকান থেকে আসা গরম ভাপ। বাজারের মোড়ে সেই চায়ের দোকানের পাশেই বিশাল এক বটগাছ। সবাই একে বলে "গাঁয়ের বটতলা"। এখানেই গ্রামের সব গল্পের শুরু আর শেষ।

আজকের সকালটাও তার ব্যতিক্রম নয়। বটতলার নিচে বসে আছে কয়েকজন বৃদ্ধ— কেউ পান চিবোচ্ছে, কেউ গরম চায়ে চুমুক দিচ্ছে। আর মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে রফিক কাকার নাতি, ছোট্ট মামুন।

মামুন খুব কৌতূহলী ছেলে। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে এখানে এসে বসে থাকে, পুরোনো মানুষগুলোর গল্প শোনে। আজ সে খুব উৎসুক। দাদুদের কাছে নতুন গল্প চাই।

— "দাদু, আজ একটা ভয়ানক ভূতের গল্প বলো!" মামুন চেঁচিয়ে উঠল।

বৃদ্ধ শফিক কাকা হেসে বললেন, "আচ্ছা, শোন। আমাদের এই গাঁয়ের পেছনের তালতলার কথা জানিস তো?"

মামুন মাথা নাড়ল।

— "অনেক বছর আগে এক জোছনার রাতে সেখানে নাকি এক মহিলা হারিয়ে গিয়েছিল। কেউ তাকে আর খুঁজে পায়নি। তারপর থেকে মাঝরাতে সেখানে কে যেন কান্না করে..."

মামুন ভয়ে গুটিয়ে গেল।

— "সত্যি, দাদু?"

— "আরে, গ্রামের গল্প বললাম। বিশ্বাস করলি নাকি?"

সবাই হেসে উঠল।

তবে মামুনের মনে ভয়টা ঠিকই বাসা বাঁধল। সে ঠিক করল, রাতে সে তালতলায় যাবে। যদি সত্যিই কিছু থাকে!

রাতের তালতলা

মামুন রাতের খাওয়ার পর লুকিয়ে বেরিয়ে পড়ল। ঠাণ্ডা বাতাস, নীরবতা, শুধু মাঝে মাঝে পেঁচার ডাক। তালগাছগুলো লম্বা ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে আছে। মামুন গলা শুকিয়ে গেলেও সাহস করে এগিয়ে গেল।

হঠাৎ!

একটা চাপা শব্দ! কিসের যেন খসখস আওয়াজ!

মামুনের পা কেঁপে উঠল। সে একটা গাছের আড়ালে লুকাল। দেখল, অন্ধকারে একটা ছায়া নড়ছে!

হঠাৎ সেই ছায়া বলল, "কে ওখানে?"

মামুন চিৎকার করে দৌড় দিল! এক দৌড়ে এসে পড়ল বটতলায়। শফিক কাকা তখনও বসে ছিলেন।

— "কী হয়েছে, মামুন?"

হাপাতে হাপাতে মামুন বলল, "তালতলায় সত্যিই ভূত আছে!"

শফিক কাকা হেসে ফেললেন।

— "ওরে পাগল, ওটা তো ছিল মজনু ফকির! সে রাতে তালপাতা কুড়োয় তাবিজ বানানোর জন্য। ভূত-টুত কিছু না!"

মামুন এবার নিজেই হাসতে শুরু করল।

গাঁয়ের বটতলায় আবার হাসির রোল উঠল। গ্রামের গল্পগুলো কখনো শেষ হয় না, ঠিক যেমন এই বটগাছের ছায়া চিরকাল থেকে যায়।

Comments

    Please login to post comment. Login