Posts

চিন্তা

আত্মসংযম ও সৌহার্দ্যের মাহে রমজান

March 1, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

35
View



আত্মসংযম, আত্মশুদ্ধি ও ঔদার্যিক ভালোবাসার বারতা নিয়ে বছর ঘুরে আবার এলো মাহে রমজান। মুসলমানের জীবনে রহমত, নাজাত ও মাগফিরাত পাওয়ার এক অভূতপূর্ব পবিত্র মৌসুম  মাহে রমজান। মহান আল্লাহর সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভের মোক্ষম সুযোগ এখন। ক্ষুধার যন্ত্রণা ও প্রবৃত্তির তাড়না থেকে বেঁচে থাকা এবং অপরের দুঃখ অনুধাবন করবার যে অপার্থিব সাধনা রমজান তার একচ্ছত্র ও সত্যিকারের মাপকাঠি। ইবলিশের যে বিরুদ্ধ পথ, পাপের যে ভাড়ার তা রুদ্ধ করে দিয়ে, শূন্য করে দিয়ে মানুষের নিখাদ সাধুত্ব অর্জনের অন্যতম প্রধান উপলক্ষ হলো রমজান। মহান রাব্বুল আলামিন নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন, মানুষের প্রতিটি ভালো কাজ নিজের জন্য হয়ে থাকে, কিন্তু রোজা শুধু আমার জন্য, অতএব আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। 

তবে কেবল প্রভুর প্রতিদানের আশায় নয়, মানবিক গুণসম্পন্ন হয়ে ওঠবার জন্য, জীবনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য রমজানের তাৎপর্য অনুধাবন করা সবার জন্যই জরুরি। সাম্য ও সৌহার্দ্যে,  প্রীতি ও ভালোবাসায় পবিত্র রমজানকে জানাই সু-স্বাগত। শুভ মাহে রমজান। 

পূণ্যকে পায়ে দলে পাপের পথ পরিক্রমণটা মানুষের সহজাত অভ্যাস। এই অভ্যাসের আগুনে ঘি ঢালবার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে রয়েছে ইবলিশের কুমন্ত্রণা। কিন্তু মুসলমানরা মাহে রমজানের সারা মাসে মহান আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহর আদেশ নিষেধ অন্তরে গেঁথে নিয়ে গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকে। আর এমন অভ্যাসের সাধনায় যদি একবার সে উত্তীর্ণ হয় তবেই সে হয়ে ওঠে প্রকৃত মানুষ। ইসলামিক পরিভাষায় তারা অর্জন করে তাকওয়া। অভিষিক্ত হয় মুত্তাকির মর্যাদায়। 

কিন্তু আমরা ফি বছর বাংলাদেশে রমজান মাসে কী দেখি? সবার প্রবণতা হয়ে ওঠে এমন যে, মানুষ যা কিছু অন্যায়-অন্যায্যতা করুক না কেন, খোদা তার অতি উদারতার গুণে সব মাফ করে দেবেন! তাই হয়তো রোজা এলেই পাল্লা দিয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ে, দেখানো ইফতার পার্টির রমরমা হয়ে ওঠে। ভেজাল পণ্যে লোক ঠকানো, রমজান শেষে ঈদের আনন্দের ষোলোকলা পূর্ণ করতে চাঁদাবাজি, ঘুষবাণিজ্য চলে হরদম। সক্ষমেরা ভোগবাদিতায় গা ভাসায়। 

অথচ মহানবী (সা.) বলছেন, যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা ও কাজ পরিত্যাগ করতে পারেনি, তার খাদ্য ও পানীয় পরিহার করার কোনো প্রয়োজন নেই।
কাজেই ভেবে দেখবার এইতো সময় যে, আমরা কি দিনমান শুধু খাদ্য ও পানীয়ই পরিহার করব?অশ্লীলতা, মিথ্যাচার, অন্যায়, অপরাধ, অসাধুতার পাপ পরিহার করব না? 

তারপরও বিশ্বব্যাপী রমজান মাসের সৌন্দর্য, শালীনতা, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ অতুল্য অবিস্মরণীয়। প্রভাত-সন্ধ্যায় একই সময়ে খাবার গ্রহণ বা রোজা ভাঙ্গার যে শৃঙ্খলা- এই শিক্ষাটা আয়ত্ব করতে পারলেই জীবনটা গোছালো হয়ে যেতে পারে। রমজানে রোজকার সন্ধ্যায় আশরাফ-আতরাফ, ছোট-বড় নির্বিশেষে পরহেজগার মানুষের মসজিদে ছুটে গিয়ে সারিবদ্ধভাবে এক কাতারে তারাবির নামাজে অংশগ্রহণ অনুপম ভ্রাতৃত্বের উদাহরণ হয়ে ওঠে। এই ধারাবাহিকতাটুকু বছরজুড়ে চললেই বন্ধ হতে পারত মানুষে মানুষে হানাহানি বা হিংসার অরাজকতা। 

রমজান শুরু হলেই ঢাকার বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির কিংবা কমলাপুর বৌদ্ধ মন্দিরে অভাবনীয় দৃশ্য চোখে পড়ে। এখানে প্রতিদিন সন্ধ্যায় কয়েকশত সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র নারী-পুরুষকে ইফতার করানো হয়। ধর্মের বিভেদ নয়, এখানে রমজান হয়ে ওঠে মানবসেবার অনন্য উদাহরণ। 

এ ছাড়া গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, ভারতের বেশ কয়েকটি প্রদেশে মুসলমান ভাইদের সাথে সহমর্মী হয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও উপবাস করেন। এসব এলাকায় রোজা হয়ে ওঠে অভেদ মানুষের বিনেসুতোর অচ্ছেদ্য বন্ধন। 

রমজান রাজনীতির সরগরম মাঠে সুশান্তির হাওয়া বইয়ে দেয়। পার্টিতে পার্টিতে ঝলসে ওঠে আত্মিক সম্পর্করা। আহা, রোজার শেষেও যদি থাকত এমন মিল মহব্বতের হালহকিকত? 

রমজানের সৌন্দর্য ও বিশিষ্টতা এমনতর মহিমান্বিত। এই রমজান আমাদেরকে সুন্দর ও সুশোভন হয়ে চলার পথ দেখাক। আদব, শিষ্টাচার ও আদর্শ চরিত্রবান হোক সবাই। ধৈর্য, সংযম আর ত্যাগের চর্চা হোক সার্বজনীন সর্বমানবের। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অমোঘ সুর উচ্চারিত হোক প্রতিজনে অন্তরে অন্তরে : 
ভোগে কেবল দুর্ভোগ সার, বাড়ে দুখের বোঝা,
ত্যাগ শিখ তুই সংযম শিখ, সেই তো আসল রোজা! 

লেখক : সাংবাদিক 
১ মার্চ ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login

  • আসা করি আপনি আমার আইডিটা ঘুরে আসবেন