রমজানের শেষ দিনগুলো চলছে। আকাশে সূর্য ধীরে ধীরে অস্ত যাচ্ছে, শহরের ব্যস্ত রাস্তাগুলোতেও এক অন্যরকম আবহ। মসজিদের মাইকে মাগরিবের আযানের অপেক্ষায় থাকা মানুষদের মনে আজ একসঙ্গে খুশি ও বিষাদের সুর। পবিত্র এই মাস শেষ হয়ে আসছে, আর তার সঙ্গে যেন শেষ হয়ে আসছে এক অপার্থিব শান্তির অনুভূতি।
আফরিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে রোদের শেষ আলো দেখছে। গাঢ় লালচে আকাশের দিকে তাকিয়ে তার মনে পড়ছে গত বছরের রমজানের কথা—যখন বাবা ইফতারের আগে সবসময় বলতেন,
"রমজানের প্রতিটি দিন আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহার, তাই ইফতারের সময়টা কখনো একা কাটাবে না।"
এখন আর বাবা নেই। গত বছর ঠিক এই সময়টাতেই তিনি চলে গিয়েছিলেন। আফরিনের মা এখনো বাবার নাম ধরে ডাকেন মাঝে মাঝে, আর তারপর নিঃশব্দে চোখ মুছেন।
আজকের ইফতারটা আফরিনের জন্য অন্যরকম। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই শেষ রোযার দিনে বাবার ভালোবাসার শিক্ষা বয়ে নিয়ে যাবে। রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল সে—হাতে কয়েকটা ইফতারের প্যাকেট। বাবা সবসময় বলতেন,
"রমজান শুধু নিজের জন্য নয়, অন্যের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যও।"
গলির মোড়ে এসে আফরিন দেখল এক বৃদ্ধ বসে আছেন, চোখে ক্লান্তি আর হাতে একটা ছোট্ট খালি পাত্র। সে চুপচাপ কাছে গিয়ে ইফতারের খাবার বাড়িয়ে দিল। বৃদ্ধ তার দিকে তাকিয়ে রইলেন, যেন কিছু বলতে চাইছেন কিন্তু ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।
"চাচা, আজ আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন?"
বৃদ্ধ চোখের কোণে জল নিয়ে বললেন, "বাবা, আমি তো অনেক বছর ধরে একা ইফতার করছি। আজ যেন মনে হচ্ছে, আমার মেয়ে ফিরে এসেছে।"
আফরিনের চোখ ভিজে উঠল। সূর্য ডুবে যেতে যেতে মসজিদ থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে এলো। গলির সেই ছোট্ট কোণায়, দুজন ভিন্ন মানুষ কিন্তু এক অনুভূতির বাঁধনে বাঁধা পড়ল।
রমজান চলে যাবে, কিন্তু এই ভালোবাসার অনুভূতি থেকে যাবে চিরকাল।