রমজান মাসের শেষ দিনগুলো। শহরের এক কোণে, ছোট্ট একটি পাড়া, সেখানেই বসবাস করত ফাতিমা। সোজা কথায়, সে খুব সাধারণ একটি মেয়ে, যারা অনেকটা এলোমেলো জীবন কাটায়। তার পরিবার ছিল অস্বচ্ছল, তবে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস খুব গভীর ছিল। প্রতিদিনই সে রোজা রাখত, কিন্তু সারা বছর ধরে তার মনে অনেক প্রশ্ন জমে উঠেছিল। সে কখনো মনে করতো, "কী কারণে আমি রোজা রাখছি? সত্যিই কি আমি আল্লাহর জন্য করছি, নাকি কেবলই অভ্যাস হয়ে গেছে?"
একটি বিশেষ সন্ধ্যা
সেই এক সন্ধ্যায়, যখন মাগরিবের আযান উঠেছিল, ফাতিমা তার জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। সূর্য ডুবে যাচ্ছিল এবং আকাশ রক্তিম হয়ে উঠেছিল। সে ভাবছিল, "আল্লাহর রোজা রাখার সঠিক উদ্দেশ্য কী?"
ঠিক তখন তার সামনে এসে দাঁড়ালো এক অচেনা মুখ—রহিম। একেবারে চুপচাপ, যেন কিছু বলার জন্যই সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। ফাতিমা তাকাল, কিন্তু রহিম কিছু বললো না। শুধু তার হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দিলো। কাগজের মধ্যে কিছু লেখা ছিল—"রোজা আল্লাহর জন্য, নিঃশঙ্কভাবে। তোমার অগ্রগতি তাঁর হাতেই।"
ফাতিমার মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি হলো। এই লেখাটা তার কাছে এক অজানা রহস্যের মতো মনে হলো। "রোজা আল্লাহর জন্য রাখলে, তাঁর কাছে যা চাওয়া যায়, তা পাওয়া সম্ভব!"
গভীর উপলব্ধি
ফাতিমা এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেলো। সে মনে করলো, রোজার মূল উদ্দেশ্য তো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। প্রতিদিনের খাদ্য, পানীয়—এসব যখন ত্যাগ করা হয়, তখন নিজের আত্মাকে খুঁজে পাওয়া যায়।
"কী এমন জিনিস ছিল, যা আল্লাহর জন্য রেখে না দেয়ার কারণে আমি সত্যিই খুঁজে পাচ্ছিলাম না?"
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো, আযান শোনা গেলো। ফাতিমা তখন শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য রোজা রাখার নতুন অর্থ খুঁজে পেয়েছিল। যে উদ্দেশ্যে সে রোজা রাখছিল, তা সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছিল। তাঁর জন্যই তো জীবন—এটি ছিল ঈমানের এক গভীর অঙ্গীকার।
শেষ ইফতার
এবার ফাতিমা সাহরি ও ইফতার করতে বসলো। জানালার কাছে বসে আছন্ন সন্ধ্যায়, তার চোখে অশ্রু ছিল। সে মনে মনে বলল, "আল্লাহ, এই রোজাটি আমি শুধু তোমার জন্য রাখব। তুমি আমাকে ক্ষমা করো, তুমি আমার সব কিছু জানো।"
ফাতিমার হৃদয়ে এক অদ্ভুত শান্তি আসলো, তার আত্মার গভীরে আল্লাহর সান্নিধ্য অনুভব করতে পারছিল সে। এই রোজা ছিল না কেবল খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকার ব্যাপার, বরং আত্মিক শুদ্ধতা, আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এবং তাঁর রহমত লাভের এক পথ।
পথের আলো
রমজান মাস শেষ হতে চলেছে, তবে ফাতিমা জানতো—এটি ছিল তার জীবনের নতুন এক শুরু। সে আর কখনও ভুলে যাবে না, রোজা রাখার আসল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। এই উপলব্ধি তাকে সারা জীবনের জন্য পথ দেখাবে, এক আলোর পথে।