পোস্টস

ফিকশন

দোতলা বাসের ভীড়, বিষাদেই চৌচির৷

২০ মে ২০২৪

Saad Andalib

মূল লেখক সাদ আন্দালিব

দোতলা বাসের ভীড়, বিষাদেই চৌচির৷
দেশ মানে নগর পরিবহন


একদিন ডায়াসপোরিক মানুষ হবো। গালভরা মুখ নিয়ে আমার কাছে জানতে চাওয়া হবে, "দেশকে মিস করেন? আপনার কাছে দেশ মানে কী?" সত্যি বলতে এটার কোনো উত্তর নেই। আমি মিটিমিটি হেসে তখন বলবো দেশ মানে "নগর পরিবহন"।

নগর পরিবহন বাস হিসেবে এলিট। মাথার উপর ফ্যান ঘোরে। আশ্চর্যজনকভাবে সত্য নগর পরিবহনকে কখনো পুলিশ আটকায় না, সরকারের লোক বলে কথা। ঘামেভরা শরীর নিয়ে কেউ এসে বলে না, " মামা ভাড়া দেন "।

নগর পরিবহনে বসেই আমি একদিন হুট করে গায়েব হয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেই।কাউন্টারে দুই টাকা জমা ছিল, ওইটা নিয়ে যেতে পারলে ভালো হতো। মঙগল আর বৃহস্পতিবার কলেজে পরীক্ষা থাকে, ধুর ওইটা মিস যাবে। আচ্ছা আজকে কি বৃহস্পতিবার? 

পাশের মানুষটাকেও নিয়ে যাবো নাকি? একা একা যেতে কেমন জানি লাগে। আজকে কি আমার আর কোনো কাজ আছে? পাসপোর্ট সাইজের ছবি তুলেছিলাম, ওইটা বিকালে আনতে যাবার কথা। সরলরেখা চ্যাপ্টারটা পুরা বাকি, আজকে করার কথা ছিলো। এগুলো সব কালকে করা যাবে।

আমি যখন গায়েব হওয়ার জন্য একদম প্রস্তুত তখনই খেয়াল হলো আমার পা নেই, আমার আশেপাশে কারোরই পা নেই।একদম সামনের দিকে রাইমা সেন বসে ছিলো, পা ছাড়াও রাইমা সেনকে সুন্দর লাগে।কী অদ্ভুত! বাসের ভাঙা লুকিং গ্লাসে দেখতে পেলাম ড্রাইভারের মাথা-পা সহ উপরে নীচে আর কিছুই নেই।উনার পকেট দিয়ে পাঁচ টাকা গড়িয়ে পড়ছিলো, আমি উঠিয়ে নেই। এরপর থেকে আমার বাম হাতটাও নেই,ধুর শালা! 

সিড়ি দিয়ে যখন নিচে নামবো তখনই দেখলাম সিড়ি নেই, তার মানে নিচ তলা নেই। নিচে চাপাচাপি করে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলাও গায়েব। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি চারদিকে শুধু মেঘ আর মেঘ। অনেক উঁচুতে উড়তে থাকা পাখিগুলোকে দেখতে থাকি। এদের মুখগুলো মানুষের মতো। নগর পরিবহনের দোতলা একা একা উড়ে চলছে।সামনে কোনো জ্যাম নেই।  আমি কি তাহলে এখন থেকে ডায়াসপোরিক? মেট্রোলাইফ ছাড়ার আগে শুনেছিলাম শাহবাগে নাকি বিরাট দুর্ঘটনা ঘটেছে, মরা মানুষগুলোকে নাকি চেনাও যায় না। প্রথম আলো বড় করে নিউজ করেছে - " দোতলা বাসের ভীড়, বিষাদেই চৌচির। " কেউ কিছু মনে করবেন না, আমার কাছে দেশ মানে নগর পরিবহন।