নিজে বুদ্ধিমতী না হলেও বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের একদম সহ্য করতে পারি না। না আমি জন্মগত ত্রুটির কথা বলছি না। যাদের মাথায় মগজ থাকতেও উদ্ভট কথা বলে। আজব প্রশ্ন করে। প্রতিবাদ করে না। সব কিছুকে একেবারে সাদা চোখে দেখে। নিজের চিন্তা করবার ক্ষমতা থাকে না। জি হুজুর জি হুজুর করে জীবন চালিয়ে দেয় আমি তাদের কথা বলছি।
গরমের ছাট পড়া শুরু করেছে। যখন তখন পিঠ বেয়ে ঘাম জলের মতো গড়াচ্ছে। আজ যে মার্চের এক তারিখ সে প্রকৃতির অবস্থা দেখে বোঝা যাচ্ছে। গাছের পাকা পাতারা বৃষ্টির মতো অবিরাম ঝরছে। গাছে গাছে শিমুল ফুল ফুটে প্রকৃতি রঙিন করে রেখেছে।
কিন্তু মেজাজ আমার খিটখিটে হয়ে আছে। আগুন লেগেছে বেলি রোডে। আমাদের মাথা ঘামানোর কোনো দরকার আছে? কিন্তু আমার মাথা ঘামাই। কেন জানি না এটা আমার সহজাত প্রবৃত্তি।
আমি জানি একার চিৎকার নিজের কানে ফিরে আসে। সংঘবদ্ধ চিৎকার চাঁদ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আমরা সংঘবদ্ধ হতে ভুলে গেছি। সংঘবদ্ধ শব্দের মর্মার্থ আমরা জানি না। মাঝে মাঝে কিছু নরনারী সংঘবদ্ধ হয়। তারা নাচানাচি আর খাওয়া দাওয়া গল্প আড্ডা দেওয়ার জন্য সংঘবদ্ধ হয়। তা-ও একটা বিশেষ লেবেল বেয়ার করে তারা। সেখানে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে স্টেজ হয়। শরীর দুলিয়ে নাচা হয়। কিন্তু কী তাদের সংঘবদ্ধ হওয়ার উদ্দেশ্য এটা জানা যায় না। তারা প্রায় সবাই তাদের এই সংঘবদ্ধ কার্যকলাপ ঢেকে রাখার জন্য প্রোফাইল লক করে রাখে অথবা পোস্ট ফ্রেন্ডস করে রাখে।
আমি মানুষকে সচেতন হওয়ার জন্য চিৎকার করি। সংঘবদ্ধ হওয়ার জন্য চিৎকার করি। যে চিৎকার ঢেকে রাখার জন্য প্রোফাইল লক করা লাগে না। পোস্ট ফ্রেন্ড করা লাগে না। কিন্তু আমরা লেবেলের মানুষরা স্টেজ তৈরিতে যতটাকা ব্যয় করি ততটাকা নিজের গরীব ভাইকেও দান করি না।
মাঝে আমি নারী পুরুষের শালীনতা নিয়ে কথা বলেছিলাম। আমাকে তার জন্য অবশ্য সংঘবদ্ধ হয়ে আক্রমণ করেছিল। সেই নারী পুরুষ যদি একটিবার সংঘবদ্ধ হয় মানুষকে সচেতন করার জন্য তাহলে কত প্রাণ বেঁচে যায়। আহা রে! মানুষ আগুনে পুড়ে, ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা গেল। তারা কী একটিবার সংঘবদ্ধ হতে পারে না মানুষকে সচেতন করবার জন্য?
কিছুদিন পরপর বাংলাদেশে আগুন লাগছে। মার্কেট পুড়ে ধ্বংস হল। ট্রেনে আগুন লেগে জীবন্ত মানুষ পুড়তে পুড়তে বাঁচার জন্য চিৎকার করল। যার অবহেলার জন্য ট্রেন পুড়ল তার কী ফাঁসি হয়েছে? আমি জানি না! আপনারা তার বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হন। তাহলে আমার চিৎকার থেমে যাবে। আপনাদের হাত তালি দেব।
একজন অসেচতন মানুষের ফাঁসি হোক। প্রতিটি মানুষ সচেতন হয়ে যাবে। প্রতিটি মানুষ যার যার অবস্থান থেকে সচেতন হোন তাহলে সত্যিই বলছি আগুন লাগবে না।
সিস্টেমিক বিল্ডিং হোক,সিস্টেমিক আসবাবপত্র সাজানো হোক। নিউজে শুনলাম বহুতল ভবনের সিঁড়ির উপর গ্যাসের সিলিন্ডার রাখা ছিল যার জন্য মানুষ সিঁড়ি দিয়েও নামতে পারে নি।
মানুষ কেন এত অসচেতন হবে? যান্ত্রিক জীবনের মারাত্মক কুফল থেকে বাঁচার একটা মাত্র রাস্তা তা হলো সচেতনতা। মানুষকে অত্যন্ত সচেতনতার সাথে যান্ত্রিক সুবিধা ভোগ করতে হবে। পথে নামলেই দেখি ফুটপাতে গ্যাসের সিলিন্ডার রেখে দোকানী ব্যবসা করে। পুলিশ দেখে। কিন্তু নির্বিকার। মানুষ দেখে কিন্তু নির্বিকার। নিরীহ মানুষ নির্বিকার থাকার কারণ আছে। অবৈধ ফুটপাত ব্যবসায়ীরা পুলিশদের টাকা দেয়।
খুলনার খুব কম ফুটপাত রয়েছে যা দোকান ব্যবসায়ীদের দখলে না। কেউ কিছু বলবে না। পথচারী রিকশা, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক এর ধাক্কায় মরে যাবে। তবুও কিছু বলবে না। আমি বলি। এই একটি কারণে পৃথিবীশুদ্ধ মানুষ আমার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আছে। আমি জানি এদের। এদের হাত লম্বা, মাথা বড়ো।
যারা রগচটা, উচ্ছৃঙ্খল তারা সবাই বড়ো ভাইদের আন্ডারে। আর নিরীহ মানুষ নির্বিকার। তারা প্রায় উচ্চারণ করে, আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর দিয়ে কী করব?
দেশের সর্বক্ষেত্রে সর্বগ্রাসী অনিয়ম। আশ্চর্য অনেকের র এর উচ্চারণ এখনো ড়। তারাও রেডিও টিভির অডিশনে দিব্বি টিকে যায়। আমি শুদ্ধস্বরের অনেককে দেখেছি তারা বছরের পর বছর এডিশনে ফেল করে যায়। অবশ্য তাদের ব্যক্তিত্ব প্রখর। এদেশে ব্যক্তিত্বের মূল্য নেই। আছে এহাত ওহাতের মূল্য। ভাবতে পারেন আমি অডিশন দিয়েছি। অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে আমি কখনো অডিশন দিইনি বা সে যোগ্যতা না থাকায় অতবড় দুঃসাহস করতে যাইনি। আমি যাদের চিনি এবং দেখেছি তাদের ফেল করার সূত্র খুঁজতে গিয়ে অনেক সময় কেঁচো বেরিয়ে এসেছে।
এসব হত না যারা ভুক্তভোগী এবং যারা আত্মত্যাগী তারা যদি ত্যাগের সত্যিকারের অর্থটা জানত। তারা যদি সচেতন হত এবং সংঘবদ্ধ আর্তনাদ করে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তুলতে পারত। অধিকাংশ মানুষ মনে করে মুখ খুললে হয়তো বিরাগভাজন হতে হবে। কিন্তু বোঝে না বিরাগভাজন হলেও আত্মসন্তুষ্টি থাকবে। সত্য বলার মোরাল জানবে।
আমি নিউজ গুলো দেখি আর ভাবি মানুষ কেন এত অসচেতন হয়? মানুষ কেন অনিয়ম করে? কেন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে না কেউ? কেন? কেন? কেন?
------নাসিমা খান
তারিখঃ ১/৩/২০২৪