জাপানের এক ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। চারপাশে ঘন কুয়াশা, সরু পাথরের রাস্তা, আর অসংখ্য সাকুরার গাছের ছায়া। গ্রামের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এক শান্ত নদী, যার ওপর রয়েছে শত বছরের পুরনো কাঠের সেতু।
এই সেতু নিয়ে একটি গল্প প্রচলিত আছে—যে রাতে এখানে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখবে, সে নিজের অতীত ভুলে যাবে। কেউ বলে, এটি এক অভিশপ্ত নদী। আবার কেউ বলে, এখানে কেউ অপেক্ষা করছে…
---
প্রথম দেখা
নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ—আয়োই এখনো পুরোপুরি অভ্যস্ত হতে পারেনি। তার বাবা বহু পুরনো একটি বাড়ি কিনেছেন, যেখানে একসময় এক সম্ভ্রান্ত সামুরাই পরিবার বাস করত।
এক সন্ধ্যায়, সে একা হাঁটতে বের হলো। বাতাসে ভাসছিল সাকুরার হালকা সুবাস, চারপাশে পাখির কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে গেছে। নদীর কাছে এসে সে পুরনো কাঠের সেতুর ওপর দাঁড়াল।
সেতুর নিচে শান্ত জল, আর সেই জলে হঠাৎই ভেসে উঠল এক প্রতিচ্ছবি—একজন পুরুষের মুখ।
গাঢ় চোখ, দীর্ঘ চুল, ফর্সা ত্বক… সে যেন গভীর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আয়োইর দিকে।
"তুমি… ফিরে এলে?"
শরীরের ভেতর এক শীতল স্রোত বয়ে গেল আয়োইর।
সে তড়িঘড়ি পেছনে তাকাল, কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই।
আবার যখন সে জলের দিকে তাকাল, প্রতিচ্ছবিটি মিলিয়ে গেছে।
---
অতীতের স্মৃতি
পরদিন রাতে, আয়োইর অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখল।
সে এক প্রাচীন কিমোনো পরে বসে আছে চেরিফুলের বাগানে। তার সামনে দাঁড়িয়ে সেই একই পুরুষ, যার প্রতিচ্ছবি সে নদীর জলে দেখেছিল।
"তুমি কি আমায় ভুলে যাবে?"
পুরুষটির কণ্ঠস্বর যেন ব্যথায় পরিপূর্ণ।
স্বপ্নের মধ্যে আয়োইর বুক কেঁপে উঠল।
"আমি তোমায় চিনি?"
পুরুষটি তার দিকে এক ধাপ এগিয়ে এলো।
"তুমি চেয়েছিলে আমায় ভুলে যেতে… কিন্তু আমি? আমি আজও তোমার জন্য অপেক্ষা করছি, আয়োই।"
সে ঘুম ভেঙে চমকে উঠল।
শরীর ঘামে ভিজে গেছে, বুক ধড়ফড় করছে।
---
অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া প্রেম
ধীরে ধীরে, প্রতিদিন রাতে আয়োই একই স্বপ্ন দেখতে লাগল। আর প্রতিবারই সেই যুবকের চোখের ব্যথা যেন আরও তীব্র হয়ে উঠল।
এক রাতে, স্বপ্নের মধ্যে যুবকটি তার হাতে হাত রাখল।
"আমার নাম হিকารু। তুমি আমায় ভালোবেসেছিলে, আয়োই। কিন্তু তোমারই অভিশাপে আমি এই নদীর মধ্যে বন্দী হয়ে আছি শত শত বছর ধরে।"
আয়োই বিস্মিত হয়ে পড়ল।
"আমার… অভিশাপে?"
হিকারুর চোখ বিষাদে ছেয়ে গেল।
"তুমি আমায় ভালোবেসেছিলে… কিন্তু বিশ্বাস করোনি। সেই বিশ্বাসের অভাবই আমায় এই অভিশপ্ত পরিণতি দিয়েছে।"
স্বপ্নের মধ্যে আয়োইর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।
কিন্তু তার কিছুই মনে নেই!
সে কি আসলেই এই যুবককে ভালোবেসেছিল?
নাকি এই স্মৃতিগুলো শুধু এক মায়া?
---
নদীর ডাক
পরের দিন, আয়োই আর নিজেকে আটকে রাখতে পারল না।
সে ছুটে গেল সেই পুরনো সেতুর কাছে, যেখানে নদীর জল গভীর রহস্যে ঢাকা।
সে নদীর জলে তাকাল।
তখনই, এক প্রবল বাতাস বয়ে গেল, আর নদীর জল আবার সেই চেহারা ফুটিয়ে তুলল—হিকারু।
"আমায় মুক্ত করো, আয়োই…"
তার কণ্ঠস্বর কাঁপছিল, যেন শত শত বছরের আকুতি জমে আছে তাতে।
হঠাৎ করেই আয়োইর মাথায় প্রবল ব্যথা শুরু হলো।
তার চারপাশ ঘুরতে লাগল।
আর তখনই, তার সব মনে পড়ে গেল—
সে সত্যিই হিকারুকে ভালোবেসেছিল।
কিন্তু সে বিশ্বাস করতে পারেনি যে তাদের প্রেম এত গভীর, এত চিরন্তন।
সে ভয় পেয়েছিল।
আর সেই ভয় থেকেই এক অজানা অভিশাপ দিয়ে দিয়েছিল তাকে, যার কারণে সে নদীর জলে বন্দী হয়ে গেছে চিরদিনের জন্য।
---
শেষ সিদ্ধান্ত
আয়োইর চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছিল।
"আমি কি তোমায় মুক্ত করতে পারব?"
হিকারুর মুখে এক করুণ হাসি ফুটল।
"শুধু ভালোবাসা মুক্তি দিতে পারে, আয়োই। তুমি যদি সত্যিই আমায় মনে রাখো… যদি সত্যিই আমায় ভালোবাসো… তাহলে অভিশাপ ভেঙে যাবে।"
আয়োই আর দেরি করল না।
সে দুই হাত জলে ডুবিয়ে দিল, নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে একবার বলল—
"আমি তোমায় ভালোবাসি, হিকারু! আমি তোমায় কোনোদিন ভুলিনি!"
তখনই, নদীর জল প্রবলভাবে আলো ছড়িয়ে দিল।
সেতুর চারপাশে সাকুরার পাপড়ি উড়তে লাগল।
এক অদ্ভুত জাদুর মতো, সবকিছু আলোর মধ্যে মিশে গেল।
আয়োইর সামনে ধীরে ধীরে দৃশ্য পরিবর্তিত হলো।
সেই পুরনো জাপানের দৃশ্য, সেই বাগান, সেই স্মৃতির টুকরো…
আর হিকারু, যে এবার সত্যিই মুক্ত হলো।
সে ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে আয়োইর গালে ছুঁয়ে দিল।
তার চোখে জল, কিন্তু হাসি ফুটে উঠেছে মুখে।
"অবশেষে… অবশেষে তুমি আমায় বিশ্বাস করলে, আয়োই।"
এরপর সবকিছু ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে গেল…
---
নতুন সূচনা
যখন আয়োইর চোখ খুলল, তখন সে আবার সেই নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আছে।
কিন্তু এবার নদীর জল একেবারে স্বচ্ছ, সেই প্রতিচ্ছবি আর নেই।
হিকারু কি সত্যিই ছিল?
নাকি সবটাই এক অলৌকিক স্বপ্ন ছিল?
কিন্তু তার হৃদয়ের গভীরে, সে জানত—
সে কাউকে হারিয়েছে, আবার কাউকে ফিরে পেয়েছে।
আর সেই ভালোবাসা, যা শত শত বছর ধরে অপেক্ষায় ছিল, তা সত্যিই মুক্তি পেয়েছে…
নতুন জীবন, পুরনো অপেক্ষা
আয়োই নদীর ধারে বসে ছিল, ঠাণ্ডা বাতাসে সাকুরার পাপড়ি উড়ছিল। সবকিছু স্বাভাবিক, যেন কিছুই হয়নি।
কিন্তু তার হৃদয়ের গভীরে কিছু যেন ফাঁকা লাগছিল।
হিকারু কি সত্যিই ছিল? নাকি সবটাই এক অলৌকিক স্বপ্ন ছিল?
আয়োই হাত বাড়িয়ে নদীর জলে স্পর্শ করল।
কোনো প্রতিচ্ছবি নেই, কোনো কণ্ঠস্বর নেই।
কিন্তু তার চোখে হঠাৎই অশ্রু চলে এলো।
তার হৃদয়ের গভীরে সে জানত—
সে কাউকে হারিয়েছে,
আবার…
কাউকে ফিরে পেয়েছে।
---
ভুলে যাওয়া কি সম্ভব?
দিন কেটে যাচ্ছিল, আয়োই তার স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছিল।
কিন্তু রাতে ঘুমালে হঠাৎই তার মনে হতো, কেউ যেন তাকে ডাকছে।
কেউ যেন তার হাত ধরতে চাইছে…
একদিন, সে গ্রাম ছেড়ে শহরে ফেরার সিদ্ধান্ত নিল।
কিন্তু ঠিক তখনই, একদিন বিকেলে, যখন সে শেষবারের মতো নদীর ধারে হাঁটতে গেল—
এক অচেনা পুরুষ দাঁড়িয়ে ছিল সেতুর ওপারে।
সাদা শার্ট, কালো কোট, আধুনিক পোশাক, কিন্তু চোখের গভীরে এক অদ্ভুত চেনা ব্যথা লুকিয়ে আছে।
তার ঠোঁটের কোণে একটুকরো মৃদু হাসি ফুটে উঠল।
আয়োইর হৃদয় আচমকা দ্রুত বেজে উঠল।
পুরুষটি ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে এলো।
তার ঠাণ্ডা, অথচ নরম কণ্ঠস্বর ভেসে এলো—
"তুমি আমায় ভুলে যাওনি, তাই না?"
আয়োইর শ্বাস রুদ্ধ হয়ে এলো।
সে কিছুই বলতে পারছিল না।
তার শুধু মনে হচ্ছিল—
একটি গল্প শেষ হয়েছিল। কিন্তু ভালোবাসার গল্প কখনো সত্যিই শেষ হয় না…
ভালোবাসার চক্র
আয়োই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
পুরুষটি ধীরে ধীরে তার সামনে এসে দাঁড়াল,
গভীর চোখ দুটো যেন তার আত্মার ভেতর পর্যন্ত প্রবেশ করছিল।
আয়োইর ঠোঁট কেঁপে উঠল।
"তুমি… হিকারু?"
পুরুষটি মৃদু হাসল।
"এই নামে কেউ ছিল কি?"
আয়োইর বুক ধড়ফড় করে উঠল।
সে ভালো করেই জানে—এই পুরুষটি হিকারু।
কিন্তু সে যদি হিকারু হয়, তাহলে সে এখন এখানে কীভাবে?
সে কি সত্যিই জন্ম নিয়েছে নতুন করে?
নাকি এটি শুধুই এক ছদ্মবেশ, এক অমোঘ খেলার নতুন অধ্যায়?
---
নতুন পরিচয়, পুরনো আত্মা
পুরুষটি তার হাত বাড়িয়ে দিল।
"আমার নাম তাকেশি। তোমার সঙ্গে কোথায় যেন দেখা হয়েছিল মনে হচ্ছে… তুমি?"
আয়োই কিছুক্ষণ চুপ করে রইল,
তারপর ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে দিল।
"আমি আয়োই।"
তাদের হাত স্পর্শ করতেই এক মুহূর্তের জন্য চারপাশের সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেল।
একশো বছর আগের স্মৃতিগুলো,
অভিশাপ,
আত্মত্যাগ,
প্রতীক্ষা—
সব এক মুহূর্তে ফিরে এলো।
কিন্তু তাকেশির চোখে কোনো চিন্তার ছাপ নেই।
সে আয়োইকে চেনে না।
তাহলে কি সে তার পূর্বজন্ম ভুলে গেছে?
আয়োইর হাত শীতল হয়ে এলো।
তবে কি এবার শুধু সে-ই মনে রেখেছে?
---
প্রেমের অভিশাপ
সেদিনের পর থেকে তাকেশি বারবার আয়োইর সামনে চলে আসে।
সেতুর ধারে, ক্যাফের সামনে,
আবার কখনো শহরের ব্যস্ত রাস্তায়।
কিন্তু সে কখনো নিজে থেকে কিছু মনে করতে পারে না।
কিন্তু আয়োই জানে—
ভালোবাসার চক্র সম্পূর্ণ না হলে
এই জন্মেও শান্তি মিলবে না।
তাহলে কি এবার সে নিজেই এগিয়ে যাবে?
সে কি তাকেশিকে সব বলবে?
নাকি অপেক্ষা করবে,
যতদিন না তাকেশির হৃদয় নিজেই তার পুরনো স্মৃতি জাগিয়ে তোলে?
একজন প্রতীক্ষা করেছিল শত বছর ধরে।
এবার কি অন্যজন করবে?
---
শেষ নাকি শুরু?
এক সন্ধ্যায়, তাকেশি আবার নদীর ধারে এল।
আয়োই সেখানে আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিল।
তাকেশি তার পাশে এসে দাঁড়াল।
হালকা হেসে বলল—
"অদ্ভুত লাগে না? মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি তোমায় বহুদিন ধরে চিনি।"
আয়োই কোনো উত্তর দিল না।
সে শুধু তাকেশির দিকে তাকিয়ে রইল।
তারপর ধীরে ধীরে বলল—
"তুমি একদিন মনে করতে পারবে… আমি জানি।"
সেদিন রাতে আয়োই আবার স্বপ্ন দেখল।
হিকারুর চোখ দুটো তাকিয়ে আছে তার দিকে,
গভীর বিষাদ আর ভালোবাসায় ভরা।
"তোমাকে এবারও অপেক্ষা করতে হবে, আয়োই?"
আয়োই চোখ বন্ধ করল।
"ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা বৃথা যায় না, হিকারু।"
ভালোবাসার প্রতীক্ষা
আয়োই জানত, এই ভালোবাসা এত সহজে পূর্ণতা পাবে না।
হিকারু নতুন শরীরে জন্ম নিয়েছে, নতুন পরিচয়ে, নতুন জীবন নিয়ে।
কিন্তু তার আত্মা?
তার হৃদয়ের গভীরে কি এক বিন্দুও স্মৃতি রয়ে গেছে?
তাকেশি কি একদিন তার পুরনো ভালোবাসা মনে করতে পারবে?
নাকি আয়োই একা থেকেই অপেক্ষা করবে চিরকাল?
এই প্রশ্নের উত্তর না পেয়েও সে প্রতিদিন তাকেশির সামনে দাঁড়ায়,
তার হাসি দেখে,
তার কণ্ঠস্বর শোনে,
তার কাছে আসে, আবার দূরে সরে যায়।
অথচ তাকেশি জানে না,
এই মেয়েটি তার জন্য কত জন্ম ধরে অপেক্ষা করছে।
---
ভুলে যাওয়া স্মৃতি
একদিন সন্ধ্যায়, যখন আকাশ রক্তিম আভায় ভরে উঠছিল,
তাকেশি নদীর ধারে দাঁড়িয়ে আয়োইর দিকে তাকিয়ে বলল—
"তোমার সঙ্গে কথা বললে আমার অদ্ভুত অনুভূতি হয়। মনে হয়, যেন আমি তোমায় আগে থেকে চিনি, অথচ মনে করতে পারি না।"
আয়োই একটু হেসে বলল,
"তুমি কি মনে করতে চাও?"
তাকেশি কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।
তারপর ধীরে ধীরে বলল—
"মনে করার মতো কিছু থাকলে হয়তো করতাম। কিন্তু… আমরা কি সত্যিই অতীতে দেখা করেছি?"
আয়োইর বুক কেঁপে উঠল।
সে জানত, সব বলে দিলেই হিকারু ফিরে আসবে না।
তাকেশির হৃদয়ের ভেতর থেকে নিজে যদি কোনো স্মৃতি না জাগে,
তাহলে এই ভালোবাসা একতরফা হয়ে যাবে।
সে চাইছিল না তাকেশি শুধু তার কথায় বিশ্বাস করুক।
সে চাইছিল তাকেশি নিজে অনুভব করুক,
যেমনটা সে প্রতিদিন অনুভব করে।
তাই সে মৃদু হাসল,
"হয়তো আমরা একদিন মনে করতে পারব।"
তাকেশি তার চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল,
তারপর ধীরে ধীরে বলল—
"তুমি খুব আশাবাদী, তাই না?"
আয়োই মাথা নিচু করল।
"আমি শুধু অপেক্ষা করতে জানি।"
---
অতীতের ছায়া
কিন্তু তারপরও, সময় তার নিজের খেলা খেলতে লাগল।
তাকেশির প্রতিদিনের স্বপ্ন অদ্ভুত হয়ে উঠতে লাগল।
সে দেখত, সে কোনো এক সাকুরার বাগানে হাঁটছে,
তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক মেয়ে,
যার মুখ পরিষ্কার নয়,
কিন্তু চোখ দুটো গভীর বেদনায় ভরা।
"আমায় বিশ্বাস করো…"
কণ্ঠস্বরটি যেন অতল গভীরতা থেকে উঠে আসছে।
তাকেশি প্রতিবারই স্বপ্ন থেকে চমকে জেগে উঠত।
সে বুঝতে পারছিল না,
এই স্বপ্ন কেন এত পরিচিত লাগছে?
কেন এই মেয়েটির কান্না তার হৃদয়ে অদ্ভুত ব্যথা তৈরি করছে?
আর সবচেয়ে বেশি ভয় লাগছিল—
এই স্বপ্নে সে নিজেকে ‘তাকেশি’ মনে করত না।
তার নাম যেন… অন্য কিছু ছিল।
---
ভালোবাসা কি ফিরে আসবে?
একদিন, আয়োই নদীর ধারে দাঁড়িয়ে ছিল,
তাকেশি তার পাশে এসে দাঁড়াল।
কোনো কথা না বলে শুধু নদীর দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ।
তারপর ধীরে ধীরে বলল—
"আয়োই, আমি কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই।"
আয়োই তার দিকে তাকাল।
"বলো।"
তাকেশি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
"তুমি কি আমায় কিছু লুকাচ্ছ?"
আয়োইর শরীর কেঁপে উঠল।
তাকেশি এবার এক ধাপ এগিয়ে এসে তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকাল।
"আমার স্বপ্নগুলো… আমার অনুভূতিগুলো… সব কিছু যেন কিছু লুকিয়ে রাখছে আমার কাছ থেকে। আমি প্রতিবার তোমার সামনে এলে অদ্ভুত এক টান অনুভব করি।"
তার চোখে একধরনের যন্ত্রণা ফুটে উঠল।
"তুমি কি আমার উত্তর জানো, আয়োই?"
আয়োই কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল তাকেশির চোখে।
তারপর ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে দিল।
তাকেশি কিছু না বুঝেই তার হাতে হাত রাখল।
ঠিক তখনই,
এক প্রবল বাতাস বয়ে গেল,
সাকুরার পাপড়ি উড়তে লাগল চারপাশে,
নদীর জল এক মুহূর্তের জন্য কেঁপে উঠল।
তাকেশির চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল,
তার শরীর স্থির হয়ে গেল।
আর তারপর…
তার চোখে প্রথমবারের মতো সেই পুরনো আলো ফুটে উঠল।
সেই আলো,
যা ছিল শুধুমাত্র হিকারুর চোখে।
---
অতীত ফিরে এলো
এক মুহূর্তের মধ্যে যেন শত শত বছর পেরিয়ে গেল।
তাকেশির চোখে ব্যথা, বিস্ময়,
আর… এক বিন্দু অশ্রু জমে উঠল।
তার কণ্ঠ কাঁপছিল,
তবুও সে স্পষ্ট বলল—
"আয়োই?"
আয়োইর চোখ ভিজে উঠল।
সে কিছু বলল না, শুধু তাকেশির হাত শক্ত করে ধরল।
তাকেশি ধীরে ধীরে ফিসফিস করে বলল—
"আমি ফিরে এলাম…"
তারপর…
সে আয়োইকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
---
এই পুনর্মিলন কি তাদের ভালোবাসার পূর্ণতা?
নাকি ভাগ্য আবার তাদের পরীক্ষা নেবে?
হাজার বছর ধরে যে ভালোবাসা প্রতীক্ষায় ছিল,
সেটা কি এবার সত্যি মুক্তি পেল?
নাকি নতুন কোনো অভিশাপ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য?
ভালোবাসার গল্প কখনো শেষ হয় না,
এটি শুধু নতুন রূপে ফিরে আসে,
নতুন সময়ের অপেক্ষায়…
ভালোবাসার মুক্তি
তাকেশির জড়িয়ে ধরার উষ্ণতায় আয়োইর চোখ বুজে এলো।
শত বছর ধরে জমে থাকা প্রতীক্ষা,
অপেক্ষার যন্ত্রণা,
হারানোর ভয়—
সব যেন মিলিয়ে গেল সেই মুহূর্তে।
সে অনুভব করল,
তার হৃদয়ের সেই ফাঁকা জায়গা পূর্ণ হয়ে গেছে।
অতীতের সব বন্ধন ভেঙে,
অভিশাপকে জয় করে,
হিকারু ফিরে এসেছে তাকেশির রূপে।
এবার আর হারানোর ভয় নেই।
---
শেষ প্রতিজ্ঞা
তাকেশি ধীরে ধীরে আয়োইর মুখ দু'হাতের মাঝে নিল।
তার চোখে অশ্রু, কিন্তু ঠোঁটে এক প্রশান্ত হাসি।
"আমি অনেক দেরি করে ফেলেছি, তাই না?"
আয়োই হেসে মাথা নাড়ল।
"ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা কখনো বৃথা যায় না।"
তাকেশি গভীর ভালোবাসায় তাকিয়ে বলল—
"এবার আমি কোথাও যাব না। তোমার পাশেই থাকব… চিরকাল।"
আয়োইর চোখ আবার ঝাপসা হয়ে এলো।
সে তাকেশির হাত শক্ত করে ধরল।
শতাব্দীর প্রতীক্ষার শেষে,
তারা এবার সত্যিই একসঙ্গে থাকবেন।
---
সাকুরার ছায়ায়…
নদীর পাশের সাকুরার গাছের নিচে দাঁড়িয়ে
তারা দু'জন একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল,
একটি নতুন জীবনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে।
হঠাৎ বাতাস বয়ে গেল,
সাকুরার পাপড়ি নাচতে লাগল চারপাশে,
সেই প্রতীক্ষার স্মৃতি নিয়ে।
তাদের ভালোবাসা সময়কে জয় করেছে।
ভাগ্যের অভিশাপও তাদের আলাদা করতে পারেনি।
কারণ সত্যিকারের ভালোবাসা…
সময়কে অতিক্রম করতে জানে।
সাকুরার ছায়ায়: চিরন্তন প্রতীক্ষার সমাপ্তি
তাকেশি আয়োইর হাত শক্ত করে ধরল।
শত বছরের প্রতীক্ষা,
অতীতের দুঃখ,
বিচ্ছেদের যন্ত্রণা—
সব যেন মিলিয়ে গেল এক মুহূর্তে।
তাদের চারপাশে সাকুরার পাপড়ি বাতাসে ভাসছিল,
নরম, শান্ত, অমোঘ।
তাকেশির চোখ গভীর ভালোবাসায় ভরে উঠল,
যেন সময়কে অতিক্রম করে সে ফিরে এসেছে,
আয়োইর জন্য, শুধু তার জন্য।
---
ভালোবাসার শপথ
তাকেশি মৃদু হেসে বলল—
"আমি একবার তোমাকে হারিয়েছিলাম, কিন্তু এবার আর নয়।"
আয়োইর চোখে জল জমে উঠল,
সে ফিসফিস করে বলল—
"তুমি ফিরে এসেছ, হিকারু…"
তাকেশি মাথা নাড়ল।
"এবার আর কোনো জন্মান্তর, কোনো প্রতীক্ষা, কোনো অভিশাপ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।"
সে আয়োইর কপালে আলতো করে চুমু দিল,
একটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল চিরদিনের জন্য।
এবার সত্যিই তাদের অপেক্ষার অবসান হয়েছে।
---
শেষ নাকি নতুন শুরু?
সন্ধ্যার আকাশে রক্তিম আভা,
নদীর জলে প্রতিফলিত দুই প্রাণ,
যারা একসময় হারিয়ে গিয়েছিল সময়ের স্রোতে,
এবার তারা একসঙ্গে… চিরদিনের জন্য।
সাকুরার ছায়ায় দাঁড়িয়ে আয়োই আর তাকেশি
একটা নতুন জীবনের পথে এগিয়ে গেল।
ভাগ্য তাদের আলাদা করেছিল,
কিন্তু ভালোবাসা তাদের এক করল।
কারণ ভালোবাসা,
সময়ের চেয়েও শক্তিশালী।
---
(সমাপ্ত—ভালোবাসার চিরন্তন জয়)