Posts

গল্প

অভিশপ্ত গ্রাম

March 3, 2025

MD Safin Rahman

111
View

প্রথম অধ্যায়: অদ্ভুত ডাক

রাত তখন প্রায় ১১টা। শহরের তিন বন্ধু—রিফাত, নাদিম, আর সোহান—একটা ছোট গাড়িতে বসে গন্তব্যহীনভাবে ঘুরছিলো।

তাদের শখ ছিল নতুন জায়গায় ঘোরা, ভৌতিক কাহিনি শোনা, আর এসব জায়গার রহস্য খুঁজে বের করা।

"শুনেছি শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে একটা গ্রাম আছে, যার নাম 'চন্দ্রপুর'," নাদিম বললো।

"ওই গ্রাম নিয়ে অনেক গল্প শুনেছি," সোহান বললো, "লোকেরা বলে, ওই গ্রামে গেলে কেউ আর ফিরে আসে না!"

রিফাত হাসলো, "ধুর! এসব কেবল গল্প! চলো, আজকেই দেখে আসি।"

তারা গুগল ম্যাপে লোকেশন সেট করলো এবং গাড়ি চালিয়ে রওনা হলো।

তবে তারা বুঝতে পারছিলো না, যে তারা এমন এক রহস্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখান থেকে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব...

দ্বিতীয় অধ্যায়: গ্রামে প্রবেশ

ঘণ্টাখানেক পর, চারপাশের রাস্তা বদলে যেতে লাগলো।

গাছপালা ঘন হয়ে উঠলো, আর রাস্তার দুপাশে কোনো বাড়িঘর দেখা যাচ্ছিলো না।

"আমরা কি সঠিক পথে যাচ্ছি?" সোহান ফিসফিস করে বললো।

নাদিম ফোনে ম্যাপ চেক করলো, কিন্তু স্ক্রিনে শুধু লেখা আসলো: "No Signal"

গাড়িটা হঠাৎ কেঁপে উঠলো, যেন কিছু একটা সামনে দিয়ে দ্রুত ছুটে গেলো!

রিফাত দ্রুত ব্রেক চাপলো, "এই! এটা কী ছিল?"

কিন্তু চারপাশে কিছুই দেখা গেলো না, শুধু গা ছমছমে বাতাস বইছিলো।

তারা আবার গাড়ি চালালো, আর কিছুক্ষণ পর একটা পুরনো কাঠের সাইনবোর্ড দেখতে পেলো:

"চন্দ্রপুর গ্রামে আপনাকে স্বাগতম"

তারা গাড়ি থেকে নামলো, আর সামনে তাকিয়েই অবাক হয়ে গেলো।

পুরো গ্রামটা যেন একটা ধ্বংসস্তূপের মতো। বাড়িগুলোর ছাদ নেই, দেয়াল ভাঙা, গাছপালায় জঙ্গলের মতো ঢেকে গেছে।

কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় ছিল, চারপাশে একটা শব্দও ছিল না!

কোনো কুকুরের ডাক নেই, নেই পাখির কিচিরমিচির, বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দটাও নেই।

"এটা কেমন জায়গা?" নাদিম বললো, গলা শুকিয়ে আসছিলো তার।

তারা ধীরে ধীরে গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করলো...

তৃতীয় অধ্যায়: অভিশপ্ত মানুষগুলো

গ্রামের ভেতরে ঢুকে তারা একটা পুরনো পুকুর দেখতে পেলো।

পুকুরের পানিটা ছিল কালো, আর তাতে কেউ যেন ধীরে ধীরে নড়ছিলো!

সোহান ফিসফিস করে বললো, "ওখানে কিছু আছে..."

ঠিক তখনই, তাদের পেছন থেকে একটা শব্দ এলো—

"তোমরা এখানে কেন এসেছো?"

তারা দ্রুত পিছনে ঘুরে তাকালো।

একজন বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে ছিল। তার চোখ ছিল ফ্যাকাসে, গায়ের চামড়া যেন মরে গেছে, আর সে ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে আসছিলো।

"তোমরা চলে যাও... নাহলে তোমাদেরও থাকতে হবে..."

"আমরা... আমরা শুধু জায়গাটা দেখতে এসেছি," রিফাত বললো।

বৃদ্ধটা হঠাৎ কেঁপে উঠলো, তার মুখ বিকৃত হয়ে গেলো, আর সে চিৎকার করে উঠলো—

"তোমাদেরও আমাদের মতো হতে হবে!"

ঠিক তখনই, পুরো গ্রাম কেঁপে উঠলো!

চতুর্থ অধ্যায়: মৃতদের গ্রাম

চারদিক থেকে ছায়ার মতো কিছু একটা বেরিয়ে আসছিলো।

মানুষের মতো দেখতে, কিন্তু মুখ বিকৃত, চোখদুটো অন্ধকার।

তারা সবাই একইভাবে ফিসফিস করছিলো—

"আমাদের মুক্তি দাও..."

নাদিম দ্রুত পেছনে সরে গেলো, "দৌড়াও!"

তারা গ্রামের বাইরে যাওয়ার জন্য দৌড়াতে লাগলো, কিন্তু রাস্তা যেন শেষ হয়ে গেছে!

"আমরা তো এখান দিয়ে এসেছিলাম! রাস্তা কোথায়?" রিফাত চিৎকার করলো।

চারপাশে শুধু অন্ধকার। মনে হচ্ছিলো, তারা একটা শেষহীন দুঃস্বপ্নের মধ্যে আটকে গেছে।

পঞ্চম অধ্যায়: অভিশাপের মূল কারণ

হঠাৎ, তাদের সামনে একটা পুরনো মন্দির দেখা গেলো।

মন্দিরের দরজার ওপরে লেখা ছিল—

"অভিশাপের জন্ম এখানে"

তারা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো।

ভেতরে একটা বিশাল পাথরের বেদি ছিল, যেখানে একটা লালচে আলো জ্বলছিলো।

বেদির ওপরে একটা পুরনো কাগজে লেখা ছিল:

"চন্দ্রপুর একসময় ছিল সুখী গ্রাম। কিন্তু এক রাতে, এক অদ্ভুত শক্তি এখানে প্রবেশ করে। গ্রামের লোকেরা একে বন্দী করতে চেয়েছিল, কিন্তু সে তাদের সবাইকে অভিশপ্ত করে দেয়। এখন তারা কেউ মৃত নয়, আবার জীবিতও নয়।"

নাদিম চিৎকার করে বললো, "আমরা কীভাবে বের হবো?"

ঠিক তখনই, মন্দিরের ভেতর থেকে একটা কালো ছায়া বেরিয়ে এলো!

"তোমরা আমাকে জাগিয়ে তুলেছো... এখন তোমরাও আমার সঙ্গী হবে!"

শেষ অধ্যায়: শেষ দেখা

পরদিন সকালে, একদল পথচারী চন্দ্রপুরের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো।

তারা দেখলো, রাস্তার ধারে একটা গাড়ি পড়ে আছে, কিন্তু ভেতরে কেউ নেই।

তারা গ্রামে প্রবেশ করলো, কিন্তু সেখানে কাউকে দেখতে পেলো না।

শুধু একটা পুরনো দেয়ালে নতুন তিনটি ছবি ঝুলছিলো—

রিফাত, নাদিম, আর সোহানের ছবি!

তারা আর কখনো ফিরে এলো না...

চারপাশে আবার সেই ফিসফিসানি শোনা গেলো—

"তারা চলে এসেছে... এখন আর ফিরবে না..."

শেষ।

Comments

    Please login to post comment. Login