Posts

গল্প

এটা গ্রাম নাকি ভূতের গ্রাম?

March 3, 2025

Yeashin

77
View

 

১. শুরুটা অদ্ভুত

রাত তখন গভীর। পুরো গ্রাম নিস্তব্ধ, কেবল শেয়ালের হুক্কাহুয়া ডাক আর মাঝে মাঝে ঝিঁঝি পোকার শব্দ। বৃষ্টি হয়ে যাওয়ার পর চারপাশ কেমন একটা শীতল হয়ে এসেছে। গ্রামের নাম হরিনগর। একসময় বেশ জনবসতি ছিল, কিন্তু এখন ধীরে ধীরে শুনশান হয়ে যাচ্ছে।

এই গ্রামের পাশেই আছে এক বিশাল বন—কালাপাহাড়ি জঙ্গল। জায়গাটা এতটাই রহস্যময় যে দিনের আলোতেও কেউ ওখানে যেতে সাহস পায় না। গ্রামে একটা গল্প প্রচলিত আছে, এই জঙ্গলে নাকি একসময় এক ভয়ংকর ডাকাত দল থাকত। তারা এখানে বহু মানুষ হত্যা করেছে, লুটপাট করেছে। কিন্তু একসময় এক গুজব ছড়িয়ে পড়ে—ডাকাতদের অভিশাপ লেগেছে, আর তাদের আত্মারাই নাকি এখন ওখানে বাস করে।

২. নতুন অতিথি

শহর থেকে আসা তরুণ সাংবাদিক অনিরুদ্ধ এসব গল্পের খুব একটা বিশ্বাসী নয়। সে ভূত-প্রেতে বিশ্বাস করে না। তবে ভূতের গল্প নিয়ে মানুষ কতটা আতঙ্কিত হয়, সেটা দেখতে চায়। তাই সে ঠিক করেছে, এই গ্রামে কয়েকদিন থাকবে এবং মানুষের অভিজ্ঞতা জানবে।

সে গ্রামের মোড়ল মতিলাল চাচার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারল, প্রায়ই রাতে গ্রামের লোকজন জঙ্গলের দিক থেকে অদ্ভুত শব্দ শোনে। কখনো কান্নার শব্দ, কখনো হাসির আওয়াজ। কেউ কেউ আবার রাতের বেলা জঙ্গলের কাছে গেলে আর ফিরে আসে না!

অনিরুদ্ধ এসব শুনে একটু হেসেই বলল, "ভূত-টুত কিছু না, মানুষ ভয় পেতে ভালোবাসে। আমি নিজে গিয়ে দেখব কী হয়!"

৩. প্রথম রাতের ভয়

পরের রাতেই অনিরুদ্ধ একা বের হলো জঙ্গলের দিকে। হাতে টর্চলাইট, পকেটে মোবাইল। প্রথমে সবকিছু ঠিকঠাকই মনে হচ্ছিল, কিন্তু একটু এগোতেই কেমন একটা অস্বস্তি লাগতে লাগল। মনে হলো কেউ যেন তাকে অনুসরণ করছে।

হঠাৎ! একটা ঠাণ্ডা বাতাস এসে তার ঘাড় বেয়ে নেমে গেল। সে পিছনে তাকাল, কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার পর আবার হাঁটা শুরু করল।

ঠিক তখনই গাছের আড়াল থেকে একটা দীর্ঘ ছায়ামূর্তি বেরিয়ে এলো!

৪. অদ্ভুত সেই ছায়া

অনিরুদ্ধ থমকে গেল। মানুষ হলে এত লম্বা ছায়া হয় না! তার গা শিউরে উঠল। কিন্তু সে পেছনে না গিয়ে বরং সাহস করে সামনে এগোতে লাগল।

ছায়াটা আস্তে আস্তে এগিয়ে এলো, আর তখনই মোবাইলের আলোয় স্পষ্ট দেখা গেল—সেই ছায়ার চোখ জ্বলজ্বল করছে, যেন আগুনের শিখা!

অনিরুদ্ধ আতঙ্কে পা পিছলে পড়ে গেল। কিন্তু তখনই ছায়াটা গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে মিলিয়ে গেল।

অনিরুদ্ধ হতবাক হয়ে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর উঠে দাঁড়িয়ে দ্রুত গ্রামে ফিরে এল।

৫. গ্রামের মানুষের আতঙ্ক

পরদিন সে গ্রামের মানুষদের সব বলল। কিন্তু সবাই জানাল, তারা অনেক বছর ধরেই এসব দেখে আসছে। কারো মতে, এই জঙ্গলে ডাকাতদের অভিশপ্ত আত্মারা ঘুরে বেড়ায়। কেউ বলে, এখানে কোনো কালো জাদুর প্রভাব আছে।

তবে একজন বৃদ্ধ, নাম রামলাল, বলল, "এই ভূতগুলো আসলে আমাদেরই পাপের ফল! এই গ্রামে অনেক অন্যায় হয়েছে, অনেক নিরীহ মানুষ মরেছে। তারা-ই এখন প্রতিশোধ নিতে এসেছে!"

৬. শেষরাতের মুখোমুখি সংঘর্ষ

অনিরুদ্ধ একরাত জঙ্গলে থাকার সিদ্ধান্ত নিল। সে এবার ক্যামেরা আর রেকর্ডিং ডিভাইস নিয়ে গেল, যেন ভূতদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারে।

মধ্যরাতের পর হঠাৎ ঝড়ের মতো বাতাস বইতে শুরু করল। সব গাছপালা দুলতে লাগল, আর তার সামনেই আবার সেই ছায়া এসে দাঁড়াল!

অনিরুদ্ধ এবার ভয় না পেয়ে ক্যামেরা তুলল। কিন্তু তখনই ছায়াটা বিকট একটা চিৎকার করে উঠে এগিয়ে এলো, আর চারপাশের বাতাস বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে গেল।

অনিরুদ্ধ কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

৭. সকালবেলার রহস্য

পরদিন সকালে গ্রামের লোকজন অনিরুদ্ধকে অচেতন অবস্থায় জঙ্গলের পাশে পেল। তার পুরো শরীর বরফের মতো ঠাণ্ডা ছিল। সে ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে পেল, কিন্তু মুখে কোনো কথা নেই।

তার মোবাইল, ক্যামেরা সব ঠিকঠাক ছিল, কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো—কোনো ভিডিও বা ছবি নেই! সবকিছু মুছে গেছে!

গ্রামের মানুষ বলল, "ভূতেরা প্রমাণ রেখে যায় না!"

অনিরুদ্ধ শহরে ফিরে গেল। তার বিশ্বাস ছিল না ভূতে, কিন্তু সেই রাতের অভিজ্ঞতা তাকে পাল্টে দিল।

আজও সে রাতে চোখ বন্ধ করলে সেই জ্বলজ্বলে চোখওয়ালা ছায়াটাকে দেখতে পায়...

 

Comments

    Please login to post comment. Login