চীনের এক শান্ত গ্রামে ছিল এক মিষ্টি মেয়ে, লান হুয়া। তার রূপ ছিল অপার, কিন্তু তার হৃদয় ছিল আরও সুন্দর। সে নদীর ধারে বসে জোছনা রাতে বাশি বাজাতে ভালোবাসত। গ্রামের সবাই বলত, তার সুরে যেন দুঃখ আর প্রেম মিশে থাকে।
একদিন, সে নদীর ধারে এক অপরিচিত যুবককে দেখতে পেল। ছেলেটির নাম ছিল লি ঝাও। তার চোখে ছিল এক অদ্ভুত বিষাদ, আর তার হাতে ছিল এক লাল পদ্ম। লান হুয়া জিজ্ঞাসা করল,
— “তোমার হাতে পদ্ম কেন?”
লি ঝাও গভীর শ্বাস নিয়ে বলল,
— “এটি আমার ভালোবাসার প্রতীক। আমি এক মেয়েকে ভালোবাসতাম, কিন্তু তাকে হারিয়েছি। এখন শুধু স্মৃতি রয়ে গেছে।”
লান হুয়া চুপ করে গেল। এরপর থেকে, প্রতিদিন তারা নদীর ধারে দেখা করত, কথা বলত, একসাথে গান গাইত। লি ঝাও ধীরে ধীরে তার দুঃখ ভুলতে লাগল, আর লান হুয়া অনুভব করল, সে ধীরে ধীরে এই ছেলেটির প্রেমে পড়ছে।
কিন্তু একদিন হঠাৎ লি ঝাও আর আসেনি। লান হুয়া তার অপেক্ষায় বসে রইল, কিন্তু সে এল না। তারপর এক বৃদ্ধা এসে বলল,
— “বাছা, তুমি কি জানো লি ঝাও কে ছিল?”
লান হুয়া অবাক হয়ে বলল,
— “সে তো এক সাধারণ যুবক, তাই না?”
বৃদ্ধা মাথা নেড়ে বলল,
— “না, সে ছিল রাজপরিবারের ছেলে। তার প্রেমিকা ছিল এক সাধারণ মেয়ে, কিন্তু রাজপরিবার তাদের প্রেম মেনে নেয়নি। মেয়েটি আত্মহত্যা করেছিল নদীতে ঝাঁপ দিয়ে, আর লি ঝাও সেই দুঃখে সব ছেড়ে এখানে এসেছিল। কিন্তু কাল রাতে রাজা তাকে আবার প্রাসাদে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে।”
লান হুয়া শুনে হতবাক হয়ে গেল। চোখের পানি গড়িয়ে পড়ল। সে বুঝতে পারল, লি ঝাও চিরতরে হারিয়ে গেছে।
সেই রাতেই লান হুয়া নদীর ধারে বাশির সুর তুলল, কিন্তু এবার সুরে ছিল এক অদ্ভুত বিষাদ। আকাশে চাঁদের আলো পড়েছিল, আর নদীর জলে ভেসে যাচ্ছিল এক লাল পদ্ম।
সে বুঝল, কিছু প্রেম ভাগ্যের লেখা নয়, কিন্তু কিছু প্রেম চিরন্তন—যেমন চাঁদের আলো ও লাল পদ্মের ভালোবাসা।