Posts

ফিকশন

অন্ধকারের গভীরে

March 4, 2025

Katha nayak

112
View

ঢাকার শোবিজ দুনিয়ায় এক উজ্জ্বল তারকা ছিল, যার নাম ছিল আরিফ খান। মাত্র ৩৫ বছর বয়সী এই অভিনেতা ছিলেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সুপারস্টার। তার অভিনয়, চেহারা, এবং ব্যক্তিত্ব এক কথায় মুগ্ধ করত ভক্তদের। আরিফ ছিল এমন একজন অভিনেতা, যার নাম শোনা মাত্রই যেন আলো আর তারকা ঝলমল করে উঠত। তার মৃত্যু ছিল এক ধরণের শক, যেটি কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।

একের পর এক সফল সিনেমা, লাখো ভক্তের ভালোবাসা—আরিফ যেন তার জীবনটিকে পরিপূর্ণ করছিল। তবে, তার ব্যক্তিগত জীবন ছিল এক রহস্যময় অন্ধকারে ডুবে। সহকর্মী, বন্ধু, পরিবার—সবাই জানতো না, আরিফ মাঝে মাঝে এক ধরনের বিষণ্নতা এবং একাকীত্ব অনুভব করতেন। যদিও তার মুখে হাসি থাকত, তবুও ভেতরকার সেই শূন্যতা কখনও সবার কাছে প্রকাশ পায়নি।

একদিন, এক শুটিংয়ের পর আরিফের আচরণ অদ্ভুতভাবে পরিবর্তিত হতে শুরু করে। তার চোখে এক ধরনের দুশ্চিন্তা, মনোযোগের অভাব, এবং বিষণ্নতা ফুটে উঠছিল। কোনো এক অদ্ভুত অস্বস্তি যেন তাকে গ্রাস করছিল। শুটিং শেষ হওয়ার পর রাতে তাকে দেখা যায় এক বন্ধুর সঙ্গে গভীর আলোচনায়, কিন্তু সে বন্ধুর কাছেও সে কোনো কিছু খুলে বলেছিল না। তার বন্ধু জানায়, আরিফ বলেছিল, "অনেক কিছু জানি, কিন্তু জানিয়ে কী হবে? সবাই মনে করবে আমি পাগল।"

তবে, একদিন সকালে আরিফের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার একটি বিলাসবহুল হোটেলে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। দরজা বাইরে থেকে লক ছিল, কিন্তু জানালা খোলা ছিল। তার ঘর ছিল সম্পূর্ণ অক্ষত, কোনো রকম ছিনতাই বা অপরাধের লক্ষণ ছিল না। পুলিশ প্রথমে আত্মহত্যা সন্দেহ করে, কারণ আরিফের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তবে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে দেখা যায়, তার শরীরে বিষক্রিয়া ছিল। কিন্তু বিষটি কীভাবে প্রবাহিত হলো? এই প্রশ্নের উত্তর মিলল না।

পুলিশ যখন তদন্ত শুরু করল, তখন তারা কিছু অদ্ভুত তথ্য পায়। প্রথমত, আরিফের ফোনে কিছু অদ্ভুত কলের রেকর্ড পাওয়া যায়। ফোনে বেশ কয়েকটি রহস্যময় নম্বর ছিল, যেগুলোর কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। এছাড়া, তার মেসেঞ্জারে কিছু অদ্ভুত মেসেজও পাওয়া যায়, যা সে কিছু দিন আগে পাঠিয়েছিল। মেসেজগুলো ছিল এমন কিছু বার্তা, যা খোলামেলা না হলেও, অনেকটাই রহস্যময়—"এটা শেষ হতে চলেছে। আমাকে যদি কিছু হয়ে যায়, তুমি জানবে না।" এবং "যতদূর সম্ভব, সবাইকে এড়িয়ে চল। আমার ওপর কিছু চাপ আছে, যা আমি সামলাতে পারব না।"

তদন্ত আরও গভীর হওয়ায়, পুলিশ আরিফের সহকর্মী এবং বন্ধুদের কাছে আরও তথ্য চায়। এক বন্ধু, সোহেল, প্রকাশ্যে জানান, "আরিফ আমাকে একদিন বলেছিল, সে কিছু গোপন কাজ করছে। কিছু মানুষ তাকে ভয় দেখাচ্ছিল, এবং সে খুবই আতঙ্কিত ছিল। সে বলেছিল, 'যদি আমি একদিন নিখোঁজ হয়ে যাই, তুমি জানবে কেন।'"

এমনকি, আরিফের কিছু কাছের বন্ধু জানায়, কিছু দিন আগে তারা তাকে এক অদ্ভুত জায়গায় দেখতে পায়। সেখানে তার চোখে এক ধরনের ভয়াবহতা ফুটে উঠেছিল, যেন সে কিছু থেকে পালাতে চাইছিল। সোহেল জানায়, "সে আমাকে বলেছিল, 'মुझे যদি কিছু হয়, তবে কোনো অভিযোগ করবে না, কারণ আমি জানি, আমি এখন যে পথে আছি, তার ফল ভয়ানক হতে পারে।'"

তবে সবচেয়ে রহস্যময় তথ্যটি আসে তার একটি পুরনো সিনেমার পরিচালক থেকে। পরিচালক জানায়, এক বছর আগে আরিফ একটি সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে এক অদ্ভুত সিচুয়েশনে পড়েছিল। সে সিনেমায় এক পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে অভিনয় করছিল, যিনি একজন অপরাধী গ্যাংয়ের সন্ধানে যান এবং শেষমেশ সেই গ্যাংয়ের হাতে খুন হন। সিনেমার শেষ দৃশ্যটিও ছিল অত্যন্ত অদ্ভুত—অপরাধী গ্যাংয়ের প্রধান চরিত্রটি একবার আরিফের সামনে আসেন এবং বলে, "যত দিন তুমি জানবে, তুমি নিরাপদ। তবে একদিন, তুমি আমাদের পথ বন্ধ করবে।"

এরপর, একদিন রাতে, সেই সিনেমার গ্যাংয়ের প্রধান অভিনেতা আরিফকে ফোন করে। তিনি আরিফকে ভয় দেখিয়ে বলেন, "তোমাকে জানাতে চাই, যেটা তুমি সিনেমায় দেখেছ, সেটা শুধু সিনেমা ছিল না। এখন আমরা তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করছি।"

এ কথা শুনে, আরিফ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং তার সহকর্মীদের কাছে সাহায্য চায়, কিন্তু তখন পর্যন্ত সে আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত, কিছু দিনের মধ্যে তার মৃত্যু ঘটে।

এখন, সবার কাছে একটাই প্রশ্ন—আরিফের মৃত্যু কি সত্যি আত্মহত্যা ছিল, নাকি এটি কোনো অপরাধীদের কাজ ছিল, যারা তাকে চুপ করে রাখতে চেয়েছিল? সুতরাং, রাজকীয় তারকা আরিফ খানের মৃত্যু আজও এক রহস্যময় গল্প হয়ে রয়ে গেছে।

শেষ।

Comments

    Please login to post comment. Login