Posts

ফিকশন

মৃত্যুর অভিসম্পাত

March 4, 2025

Katha nayak

138
View

অধ্যায় ১: শান্তির নিচে অশুভ ছায়া

কুমুদপুর, যে গ্রামটি শান্তির প্রতীক ছিল, তার শান্তিপূর্ণ পরিবেশের পিছনে লুকিয়ে ছিল এক অশুভ রহস্য। গ্রামের পুকুরের জল সাগরের মতো শান্ত, কিন্তু গভীরে একটা অদৃশ্য অন্ধকার শক্তি বাস করছিল। এর ইতিহাস অনেক পুরনো, বহু বছর আগে, একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছিল যা এ অভিশাপের সূচনা করে।

গ্রামবাসীরা জানত না, কিন্তু পুকুরের নিচে লুকিয়ে থাকা সেই রহস্যের উৎপত্তি ছিল এক ভয়ঙ্কর এবং নিষ্ঠুর শাপে—এক সন্ন্যাসীর অভিশাপ, যে তার জীবনের সবচেয়ে বড় ত্যাগের মাধ্যমে পুকুরের জলে আত্মসমর্পণ করেছিল। সেই সন্ন্যাসী নিজের আত্মাকে বিক্রি করেছিল পুকুরের জলের অন্ধকার শক্তির কাছে, যাতে পৃথিবী তার অন্তিম শান্তি পায়। কিন্তু সে জানত না, যে আত্মত্যাগের বিনিময়ে শান্তি আসবে, তা শুধুমাত্র তার নিজের জন্যই নয়, এক চিরকালীন অভিশাপের রূপ নেবে। সেই অভিশাপের বীজ ছিল, "যে আত্মা প্রবাহিত হয়, সে আবার ফিরে আসবে, পৃথিবীকে গ্রাস করবে।"

অধ্যায় ২: রহস্যের মুখোমুখি

শশী, গ্রামটির এক তরুণী, যখন তার মায়ের মৃত্যুতে বেসামাল হয়ে পড়েছিল, তখন সে পুকুরের তীরের দিকে আকৃষ্ট হল। তার মধ্যে অদ্ভুত এক অনুভূতি জেগে উঠছিল, যেন তার মায়ের আত্মার মধ্যে কিছু ছিল, যা তাকে ডাকছে। শশী জানত যে, এই পুকুরের রহস্যের সঙ্গে তার মা এবং তার গ্রামের এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তার ভিতরে একটা প্রশ্ন জমা হচ্ছিল—"কেন পুকুরের জল কখনো শুকায় না? কেন গ্রামের লোকেরা তাতে প্রবাহিত হতে ভয় পায়?"

শশী একদিন পুকুরের তীরে পৌঁছলে, সে অনুভব করে যে সেখানে কিছু ত্রুটিপূর্ণ শক্তি লুকানো আছে, যা আসলে তার মা-কে হত্যা করেছে। এই শক্তির সঙ্গে পুকুরের অতিপ্রাকৃত শক্তির সম্পর্ক ছিল।

অধ্যায় ৩: মন্দিরের রহস্য

গ্রামের মন্দিরটি ছিল পুরনো, অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং বিধ্বস্ত। মন্দিরের ভিতরে এক প্রাচীন পাথরের শিলালিপি ছিল, যার মধ্যে লেখা ছিল—"যারা এই অন্ধকারের দিকে চলে, তাদের আবার ফিরে আসা হয় না।" শশী জানত, এই লেখাটি তার মায়ের আত্মাকে ঘিরে।

মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করার পর, শশী অনুভব করল যে, সেখানে কিছু এক অদ্ভুত শক্তি কাজ করছে। চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। গা dark ় গাছের ছায়ার মধ্যে কিছু অন্ধকার অস্তিত্ব গড়ে উঠছিল। শশী ধীরে ধীরে সেই গোপন গর্তের দিকে এগিয়ে গেল, যেখানে সে প্রথমবার সেই অন্ধকার সত্ত্বার সঙ্গে মুখোমুখি হয়েছিল।

অধ্যায় ৪: শক্তির মুখোমুখি

শশী যখন গর্তের মধ্যে প্রবেশ করল, তখন তার সামনে উঠল এক ভয়াবহ অন্ধকার শক্তি, যা পূর্বে কখনও সে অনুভব করেনি। শক্তির আকার ছিল অসীম—এক বৃহৎ কালো মেঘের মতো, যা নড়াচড়া করছিল, এক ধরনের গভীর অস্থিরতায়।

শক্তিটি বলল, "তুমি কি জানো, শশী, আমি সেই আত্মা, যার শ্বাসে পৃথিবী কালো হয়ে গেছে। আমি সেই সন্ন্যাসী, যে আত্মত্যাগের মাধ্যমে গ্রামে অভিশাপ নিয়ে এসেছি। তুমি আমাকে মোকাবিলা করতে এসেছ, কিন্তু তুমি জানো না, এটা তোমার জীবনের সর্বশেষ যাত্রা।"

শশী দৃঢ়ভাবে বলল, "আমি জানি, তুমি এক ভয়ংকর শক্তি। কিন্তু আমি তোমাকে পরাজিত করব, কারণ আমি জানি, তোমার শক্তির মধ্যে মানবিক দুর্বলতা আছে। আমি নিজেকে উৎসর্গ করছি, তবু গ্রামকে মুক্ত করতে চাই।"

শক্তি উত্তেজিত হয়ে উঠল, "তুমি কি জানো, আমি তোমার মায়ের আত্মাকে শোষণ করেছি, এবং সে কখনোই মুক্তি পাবে না, যতক্ষণ না তুমি নিজে আত্মত্যাগ করো?"

শশী নির্বিকার হয়ে বলল, "তোমার শক্তির কিছুই আমার সামনে দাঁড়াতে পারবে না, কারণ আমার হৃদয়ে এখন সত্যের শক্তি আছে।"

অধ্যায় ৫: গ্রামবাসীর সহায়তা

এদিকে, গ্রামবাসীরা যখন জানতে পারল শশী পুকুরে গিয়েছে, তারা তাকে সাহায্য করতে একত্রিত হল। তারা জানত, শশী একা এক শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছে, কিন্তু তারা জানত, যদি একত্রিত হয়ে চেষ্টা করে, তাহলে কিছু একটা বদলানো যাবে। পুরনো গ্রামবাসী একে একে মন্দিরে এসে তাদের আশীর্বাদ দিল, এবং শশীর পথ পরিষ্কার করার জন্য তাদের পুরনো যাদু শক্তির সাহায্য দিল।

গ্রামবাসীদের সহায়তায়, শশী তার সাহস এবং শক্তি ফিরে পেল। তারা শশীকে জানিয়ে দিল, "তোমার আত্মত্যাগ শুধু তোমার নয়, আমাদের সকলের। আমরা জানি, তুমি আমাদের মুক্তি দেবে।"

অধ্যায় ৬: অভিশাপ মুক্তি এবং নতুন সূচনা

শশী, গ্রামবাসীদের সাহায্যে, অভিশাপের মূল শক্তির মুখোমুখি হল। শক্তি ধীরে ধীরে দুর্বল হতে লাগল, আর শশী তার নিজের আত্মা পুকুরে ফেলল। তার আত্মত্যাগের ফলে, পুকুরের অন্ধকার শক্তি ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে গেল।

গ্রামের মানুষ বুঝতে পারল যে, পুকুরের জল এতদিন নিঃশব্দে তাদের দুর্ভাগ্যের প্রতিনিধিত্ব করছিল, কিন্তু শশীর আত্মত্যাগের মাধ্যমে তাদের জীবন বদলে গেল। পুকুরের জল স্বচ্ছ হয়ে উঠল, গ্রাম ফিরে পেল তার হারানো শান্তি।

গ্রামবাসীরা জানত, তারা আর কখনো পুকুরের অন্ধকারের দিকে ফিরে যাবে না। তারা শিখেছিল যে, অভিশাপের সঙ্গে লড়াই করা মানে শুধুমাত্র নিজের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লড়াই করা, এবং একে অপরকে সাহায্য করাই সত্যিকারের শক্তি।

                     সমাপ্ত

Comments

    Please login to post comment. Login