Posts

চিন্তা

নির্বাচন ফোবিয়া ও নতুন দল এনসিপি

March 4, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

154
View

খুব দুঃখিত সারজিস আলম, আপনি এমন একটা বিষয়ের সাথে আসন্ন নির্বাচনকে গুলিয়ে ফেললেন, যেটাকে পরিষ্কারভাবে বলা যায়, সাত মণ ঘিও জুটবে না, রাধাও আর নাচবে না।

ইন্ডিয়া তাদের পক্ষাবলম্বনকারীদের সুরক্ষা দেয়। প্রথম উদাহরণ তিব্বতীয় ধর্মগুরু দালাইলামা। দ্বিতীয় উদাহরণ বাংলাদেশের সাবেক একনায়ক শেখ হাসিনা।

এর আগে লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিরোধী নেতা এদী সালিম আল-ফায়েদ কিছু সময় ভারতে আশ্রয় পেয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নেলসন ম্যান্ডেলাও ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁর বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের জন্য। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের কয়েক কোটি শরণার্থী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল ভারত।

আপনারা শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচার করবেন -এই ভাবনা ঠিক আছে। কিন্তু ইন্ডিয়া তাদের দেশে আশ্রয় দেয়া বন্ধুকে আপনাদের চাহিদামাফিক ফেরত দেবে কিনা এটা কেন কল্পনায় রাখছেন না? ধরে নিলাম শেখ হাসিনাকে আপনারা ফেরত পেলেন, তো বিচার কি অত সহজ কাজ? ধর তক্তা, মারো পেরেক? তাহলে তো সেটা মাংকি ট্রায়াল হয়ে যাবে!

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে এনে ফাঁসির মঞ্চে না নেওয়া পর্যন্ত কেউ যেন নির্বাচনের কথা না বলে।

আজ মঙ্গলবার সকালে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের ঢাকার রায়েরবাজারে অভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্র–জনতার কবর জিয়ারতের পর এ কথা বলেন তিনি।

'যেই ভাইয়ের লাশের জন্য মায়েরা এভাবে আহাজারি করছেন, যেই খুনির নির্দেশে আমাদের ভাইদের হত্যা করা হয়েছে, সেই খুনির বিচার না দেখা পর্যন্ত কীভাবে এই দেশে আমরা অন্য কিছুর চিন্তা করি,' বলেন তিনি।

আগে খুনি হাসিনার বিচার হতে হবে, আগে খুনগুলোর বিচার হতে হবে, তারপর অন্য কোনো কিছুর চিন্তা। আমরা এই সরকারকে অনেকবার বলেছি। রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে তারা দায়িত্ব নিয়েছে। তারা যদি খুনি হাসিনার দৃশ্যমান বিচার না করতে পারে, তারা তাদের লেজিটিমেসি হারাবেন,' বলেন সারজিস।

তিনি আরও বলেন, 'বিচার এই অন্তর্বর্তী সরকারকেই করতে হবে। নির্বাচনের আগেই খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে ফাঁসির মঞ্চে নিতে হবে। যতদিন হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে না দেখছি, কেউ যেন ভুলক্রমেও বাংলাদেশে নির্বাচনের কথা না বলে।'

নির্বাচনকে শেখ হাসিনা ভীষণ ভয় পেতেন। যে কারণে কখনো তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, কখনো রাতে এবং শেষাবধি ডামি ভোটের আয়োজন করতে হয়। হেরে যাওয়ার ভয়ে যেনতেনভাবে বিরোধীপক্ষকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে হয়। আপনারাও একসময় আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আর কিছু পান না পান, শেখ হাসিনার মতো নির্বাচন ফোবিয়ায় পেয়ে বসেছে আপনাদের -এটা অনুধাবন করা যাচ্ছে।

আপনাদের এসব বালখিল্যপূর্ণ বাহাস স্রেফ নির্বাচনকে পিছিয়ে দেয়ার দুর্ভাগ্যজনক বাহানা। শেখ হাসিনাকে যদি দেশের কারাগারে অন্তরীণ রেখে এসব বয়ান দিতেন তবু না হয় কথাটা‌ মানানসই হতো। আপনারা পুরোদস্তুর গাছে কাঁঠাল রেখেই গোঁফে তেল দেয়া শুরু করেছেন।

কার্যত শেখ হাসিনার বিচারের সাথে নির্বাচনের কোনো সম্পর্কই নাই। ধরে নেই মিজ হাসিনার বিচার আপনারা ৫ বছরেও সম্পন্ন করতে পারলেন না, তাই বলে ৫ বছর ধরে অনির্বাচিত সরকার দেশ চালাবে? এসব তো পুরোটাই‌ হাস্যকর দাবি।

আমরা বলব যদি জনগণের জন্য রাজনীতি করতে চান শেখ হাসিনার দেখানো পথ থেকে সরে আসেন। আমাদের মতো আমজনতার মনের কথা পড়তে শিখুন। আমাদের মতো নাগরিকের প্রত্যক্ষ ভোটে যদি নাগরিক পার্টির নেতৃবৃন্দ রাজা-বাদশাহ হয়ে উঠে আমরা সসম্মানে স্বাগত জানাবো। আর ভুলভাল বাহানায় যদি বিপথে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরবার প্রয়াস পান, তবে আমরা তার কড়া সমালোচনা ও নিন্দা করবো।

আমাদের একটাই দাবি, রাজনীতির নামে আপনারা প্রকৃত সেবক হয়ে উঠুন। ঘুর্ণাক্ষরেও আধিপত্যবাদী স্বৈরাচার হবেন না। আপনারা যেমন গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তির দিশা খুঁজে পেয়েছেন, তেমনি জনগণকে ফাঁদ পেতে বন্দি করবার প্রয়াস পেলে, তারাও আপনাদের থেকে মুক্তির দিশা‌ খুঁজে নেবে। সেদিনের সেই আরেক জুলাই‌ আরো ভয়াবহ ও করুণ হবে। কাজেই কোনো অজুহাতে আমরা চাই না আনকোরা নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি তাদের যাত্রার শুরুতেই নির্বাচনফোবিক হয়ে উঠুক।

লেখক: সাংবাদিক 
৪ মার্চ ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login