“ওই নারী তোমার বুকের ওড়না সরল কেন, পর্দা কোথায়” -বইলা ধরা খাওয়া তৌজ ভাইয়াকে ছাড়াতে রাতেই শাহবাগ থানা প্রকম্পিত করে ফেলেছিল তৌজসেনারা। ইউনাইটেড এই তৌজসেনারা কোথা থেকে এমন তেজ পেয়েছে? মনে করছেন এই ছয় মাসে হঠাৎ করে এরা আকাশ ফুঁড়ে উদয় হয়েছে? কখনোই তা নয়। হতেও পারে না। মানুষের সংস্কৃতি ছয় মাসে হুট করে বদলায় না!
এদের বয়স ১৫ থেকে ৩০।
কার সময়ে শিক্ষাদীক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বড় হয়েছে এরা?
কওমি মাতার লোকেরা অর্ধেক মানি হাপিস করে দিয়ে দেশজুড়ে ৫৬০টা উপাসনালয় বানিয়ে দিয়ে গেছেন, সেগুলো এখন কাদের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে? জননী কাদের হাতকে শক্তিশালী করে গেছেন? ইকুয়েশন মেলালে অনেক উত্তর আপনাআপনিই মিলে যাবে।
তারা সমমান ও ভারসাম্যপূর্ণ আধুনিক ইশকুলিং সিস্টেম চালু করেনি। পাড়ায় পাড়ায় স্টেডিয়াম ও লাইব্রেরি গড়েনি। মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করেনি। নিখাদ দেশাত্মবোধ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের মিশেলে বিশুদ্ধ সংস্কৃতির আবহ গড়ে তোলেনি। দল ও গোষ্ঠীপ্রীতির বাইরে এসে মানুষ হয়ে সর্বমানুষকে ভালোবাসতে হবে কখনোই এই শিক্ষা দেয়নি।
চরম রাজনৈতিক গলদ, লেজেগোবরে শিক্ষাব্যবস্থা, ধর্ম নিয়ে রাজনৈতিক কার্ড খেলা, অগণন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থেকে আঙ্গুল ফুলে পাইনগাছ বনে যাওয়া, বিরুদ্ধ মতকে গলায় রশি পরিয়ে রাখা; এর সবটাই এই জাতিকে দুর্মর শয়তানে পরিণত করেছে।
রোজার মাস আসছে বলেই এইসব শয়তানেরা বাধা পড়েছে এমনটা ভাববার কারণ নাই। Misogynist ওরা নারীর পেছনে লাগবেই।
ধূমপান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই হারাম ও সমান ক্ষতিকারক। অথচ নারী ধূমপান করেছে বলে তৌজ ভাইয়ারা ওই নারীদেরকে 'বেশ্যা' আখ্যা দিয়েছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করেছে। রাষ্ট্রও ফুটফুটে সুন্দর হয়ে ওই আখ্যাদাতাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে গেছে। এই রাষ্ট্র কার ছকে চলছে?
এই দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। আপনাদের অধিকার সমুন্নত রাখতে হলে সংঘবদ্ধ থাকেন। নিজেদের সংক্ষুদ্ধতা জাগিয়ে তুলুন। প্রতিবাদে শামিল হোন। রাস্তায় দাঁড়ান। আপনার মুক্তি অন্যেরা এনে দেবে না। পুরুষ তো কখনোই নয়! এই দেশে অগ্রদূত হয়ে বেগম রোকেয়ারা আর আসবে না। বলবে না, 'ভগিনীরা! চুল রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন, অগ্রসর হউন! মাথা ঠুকিয়া বলো মা! আমরা পশু নই; বলো ভগিনী! আমরা আসবাব নই; বলো কন্যে আমরা জড়োয়া অলঙ্কাররূপে লোহার সিন্ধুকে আবদ্ধ থাকিবার বস্তু নই; সকলে সমস্বরে বলো আমরা মানুষ।'
লেখক: সাংবাদিক
৬ মার্চ ২০২৫