শহরের একদম শেষ প্রান্তে ছিল এক রহস্যময় বন, যার নাম কালো ছায়ার বন। শহরের বৃদ্ধরা বলতো, এই বনে গেলে কেউ ফিরে আসে না। কেউ বলতো, সেখানে কিছু দানবের আত্মা ঘুরে বেড়ায়, আবার কেউ বলতো, এটি এক অভিশপ্ত জায়গা, যেখানে একবার প্রবেশ করলে মানুষ সময়ের ভেতর হারিয়ে যায়। তবে নতুন প্রজন্ম এসব গল্প বিশ্বাস করতো না, তারা ভাবতো এগুলো কেবল পুরনো দিনের মিথ।
প্রবেশ
একদিন, তিনজন বন্ধু—রাহাত, আদনান, ও সাবিক ঠিক করলো, তারা সেই বনে探险 করতে যাবে। তারা ছিলো তরুণ, ভয়ডরহীন, আর শহুরে আধুনিক ছেলেরা ভূতের গল্পে বিশ্বাস করতো না।
বিকেলবেলা, তারা তিনজন ব্যাকপ্যাক নিয়ে বনের দিকে হাঁটতে লাগলো। সূর্য তখনো পুরোপুরি ডোবেনি, কিন্তু বনের কাছে যেতেই অন্ধকার যেন ঘনিয়ে এলো। আশেপাশের বাতাস ভারী হয়ে উঠলো, আর কোনো পাখির ডাক শোনা যাচ্ছিলো না—শুধু নিস্তব্ধতা, যা ছিল ভয়ংকর।
"এটা কেমন অদ্ভুত জায়গা," সাবিক বললো।
"ধুর! এগুলো সব মানসিক ব্যাপার," আদনান বললো।
তারা এগিয়ে গেলো, আর বনের গভীরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে চারপাশের গাছগুলো আরো ঘন হয়ে উঠলো। হালকা কুয়াশা মাটির কাছাকাছি জমাট বেঁধেছিলো, আর আশেপাশের পরিবেশ কিছুটা থমথমে হয়ে উঠছিলো।
প্রথম অদ্ভুত ঘটনা
প্রায় আধা ঘণ্টা চলার পর, হঠাৎ তারা লক্ষ্য করলো, বনটা অদ্ভুত এক গোলকধাঁধার মতো লাগছে। তারা মনে করেছিলো, সোজা পথ ধরে হাঁটলে সহজেই বেরিয়ে আসতে পারবে, কিন্তু কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলো, তারা বারবার একই জায়গায় ফিরে আসছে।
"আমরা কি ঘুরে ফিরে এক জায়গায় আসছি?" রাহাত বললো, কপালে ভাঁজ ফেলে।
"আমাদের মোবাইলের GPS চেক করো," সাবিক বললো।
আদনান তার ফোন বের করে Google Maps খুললো, কিন্তু স্ক্রিনে শুধু "No Signal" দেখাচ্ছিলো। হঠাৎ করেই হাওয়ার এক ভয়ংকর ঝাপটা আসলো, যেন কেউ পাশ দিয়ে হেঁটে গেলো।
"তোমরা শুনলে?" সাবিক ফিসফিস করে বললো।
"হয়তো বাতাস," আদনান বললো, কিন্তু তার কণ্ঠে এক অজানা ভয় লুকানো ছিলো।
তারা আবার এগোতে লাগলো, কিন্তু এবার আশেপাশের গাছগুলো যেন বদলে যাচ্ছিলো। গাছের গায়ে অদ্ভুত দাগ, যেন কেউ ধারালো কিছু দিয়ে আঁচড় কেটেছে।
ছায়ামূর্তির আবির্ভাব
হঠাৎ করেই রাহাত থমকে দাঁড়ালো।
"ওটা কী?" সে আঙুল তুলে দেখালো বনের এক অংশের দিকে।
তারা সবাই দেখলো, কুয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে একটা কালো ছায়ার মূর্তি। ছায়াটির মুখ দেখা যাচ্ছিলো না, কিন্তু তার দেহ একেবারে স্থির।
সাবিক ফিসফিস করে বললো, "চলো এখান থেকে বের হই।"
কিন্তু ঠিক তখনই, ছায়াটা নড়তে শুরু করলো।
এবার তারা বুঝলো, এটি কোনো সাধারণ ছায়া নয়, এটি তাদের লক্ষ্য করছে।
বনের অভিশাপ
তারা দ্রুত দৌড়াতে শুরু করলো, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, যতই দৌড়াচ্ছিলো, ততই মনে হচ্ছিলো তারা আরও গভীরে চলে যাচ্ছে। রাস্তা শেষ হয়ে আসছিলো, আর পেছন থেকে ভেসে আসছিলো ফিসফিসানি—
"তোমরা এখানে ঢুকতে পারো, কিন্তু বের হতে পারবে না..."
হঠাৎ করেই, রাহাত চিৎকার করে উঠলো, "আমার পা! কিছু একটা ধরেছে!"
আদনান আর সাবিক দ্রুত ওর দিকে তাকালো, কিন্তু রাহাত কোথায়? সে কয়েক সেকেন্ড আগেও তাদের সামনে ছিল, কিন্তু এখন নেই!
"রাহাত!" সাবিক চিৎকার করে ডাকলো, কিন্তু কোনো উত্তর আসলো না।
শেষ মুহূর্ত
আদনান আর সাবিক নিজেদের সামলানোর চেষ্টা করছিলো, কিন্তু ঠিক তখনই, তারা বুঝতে পারলো বনের গাছগুলো তাদের চারপাশে বন্ধ হয়ে আসছে, যেন তারা কোনো এক অন্ধকার ঘরে বন্দী হয়ে পড়ছে।
শেষবারের মতো তারা শুনতে পেলো,
"তোমরা চলে এসেছো... এখন তোমাদেরও থাকতে হবে..."
এরপর সব অন্ধকার হয়ে গেলো।
পরবর্তী ঘটনা
পরদিন সকালে, গ্রামবাসীরা তাদের খুঁজতে বের হলো।
তারা বনের ধারে পৌঁছালো, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, পুরো বন একেবারে শান্ত। সেখানে কোনো দাগ নেই, কোনো চিহ্ন নেই যে গত রাতে কেউ সেখানে প্রবেশ করেছিলো।
শুধু তিনটি ব্যাকপ্যাক পড়ে ছিলো মাটির উপর...
এবং বাতাসে এক ফিসফিসানি ছিলো—
"তারা আর ফিরে আসবে না..."