ঠিক কে জানে গাছের আদিম কথা, কার কাছে সঞ্চিত আছে সব তথ্য—মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল, ফল, বীজ—কোথায় আছে বৃক্ষের যাবতীয় আলাপ, কে মনে রেখেছে বৃক্ষের সকল স্মৃতি?
আমি তো বৃক্ষের সাথে কথা বলতে পারিনি, জিজ্ঞেস করতে পারিনি সে আমাকে চেনে কি না? যেমন, ভেতরে-ভেতরে কথা বলার আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে নীরব থেকেছি অপরিচিতা নারীর সামনে।
আমি তো কাউকেই কিছু জিজ্ঞেস করতে পারিনি। প্রেমিকার প্রতি প্রেম উড়ে কোথায় চলে যায়, তাও জানতে পারিনি কোনদিন। অবশ্য সেভাবে খুঁজেও দেখিনি সেসব উথাল-পাথাল প্রেমের অপমৃত্যু পরবর্তী শবদেহের কোথায় জায়গা হয়!
এদিকে আমি ফসলের সফলতা দেখেছি খাবারের টেবিলে, ভরা পেটে বুঝেছি মাংসের স্বাদ। কিন্তু যে প্রাণী খেলাম তার মনের কথা শোনা হয়নি কোনদিন। যেমন কেউ শোনেনি আমার জন্মের আগের কথা। সেসব কথা কে সঞ্চিত করে রাখে? নাকি সব ভুলে যায় সবাই কিংবা কেউ জানে না কিছু!
কিংবা এমন কিছু শব্দ—যা আসলে বেশ কঠিন শুনতে, যার ভেতরে অনেক গূঢ় অর্থ লুকানো। কিন্তু আমরা যারা কম জানি, অভিধান না ঘেটে তাদের অর্থ খুঁজে পাই না—এমন শব্দের অভাবে আর কিছু দর্শনের অভাবে, যেমন কিছু কবির কবিতা পরিপূর্ণ কবিতা হতে পারে না—তেমন আমার বোঝা হলো না গাছের নীরবতা। ফলে আমি আপাদমস্তক মূর্খই রয়ে গেলাম, কিন্তু বৃক্ষের মতো নীরব হতে পারিনি।