নভা যে ঘরটাতে থাকত, সেটা একেবারে নিরিবিলি, ছোট একটা কুটির ছিল, যে কুটিরটা একটা ঘন অরণ্যের পাশে ছিল। দিনের আলোতে সবকিছু শান্ত, কিন্তু রাতে এক অদ্ভুত শীতলতা এসে জড়িয়ে ধরত। কোনো মানুষজন খুব একটা আসত না সেখানে, আর তাছাড়া নভা একা থাকত, তাই এক ধরনের নিঃসঙ্গতা ঘিরে থাকত তাকে।
একদিন, নভা অনুভব করল যে কিছু একটা অস্বাভাবিক চলছে। রাতের পর রাত, ঘরের কোণে এক ধরনের অদ্ভুত ফিসফিস আওয়াজ শুনতে পেত। প্রথমে সে কিছুই বুঝতে পারেনি, হয়তো বাতাসের শব্দ, অথবা কোনো পাখির কন্ঠ। কিন্তু দিন দিন আওয়াজটা বাড়তে থাকল। এক সময়, সে শুনল তার নাম ডাকছে। খুব মৃদু, কিন্তু পরিস্কার -"নভা…নভা…"
এটা কেবলই একটি ভূতুড়ে আওয়াজ মনে হচ্ছিল, কিন্তু নভা ভাবল, “হয়তো আমি খুব ক্লান্ত, তাই ভুল শুনছি।” কিন্তু রাতে ঘরটা একদম নিস্তব্ধ থাকত, তবে সেই ফিসফিস আওয়াজ ক্রমশ পরিস্কার হতে থাকল। একদিন, সে শুনল কেউ বলে উঠল -" নভা…আমরা তোমার অপেক্ষা করছি"…
এই শব্দগুলো তার ভেতর এক অদ্ভুত শিহরণ সৃষ্টি করল। নভা সিদ্ধান্ত নিল, তাকে এই রহস্যের সমাধান করতে হবে। রাতে সে মোমবাতি জ্বালিয়ে নিজের ঘরের কোণ টিতে পা রাখল। ঘরটা সাসপেন্স এ ভরা ছিল। কেমন যেন অন্ধকার। মোমবাতির ছোট্ট লাল আলো তার চারপাশে নড়ে উঠছিল।
সে মোমবাতির আলোয় আরও একটু এগিয়ে গিয়ে লক্ষ্য করল, ঘরের এক কোণে কিছু একটা অদ্ভুত ছায়া পড়ে ছিল। কিছু একটা যেন সেদিকে তাকিয়ে ছিল, কিন্তু তা পরিষ্কার ছিল না। সে ধীরে ধীরে কোণটার কাছে এগিয়ে গেল, এবং হঠাৎ, সেই ফিসফিস আওয়াজ আরো কাছাকাছি শুনতে পেল।
আওয়াজটা স্পষ্ট হল -"নভা…তুমি আমাদের কাছে আসবে, না কি আমরা তোমাকে খুঁজে নেব" মোমবাতির আলো তখন একেবারে নিভে গেল। ঘরটি অন্ধকারে ডুবে গেল। নভার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল। সে এক মুহুর্তের জন্য হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, কিন্তু এক অদ্ভুত আকর্ষন তাকে সেই কোণের দিকে টানছিল। আরো কিছুই ভাবতে না পেরে, নভা ঘরের একেবারে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রইল, তারপর হঠাৎ পেছন থেকে ঠান্ডা একটা হাত তার কাধে পড়ল। একটা তীব্র শিহরণ তার সারা শরীরে দাঁড়িয়ে পড়ল। সে ঘুরে দেখল, কিন্তু কোনো মানুষের উপস্থিতি ছিল না। শুধু সেই অদ্ভুত, শীতল হাত, যেন বাতাসের অংশ হয়ে তার শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। আধ ঘন্টা পর সব কিছু একসাথে হঠাৎ নিঃশব্দ হয়ে গেল। একটা ভয়ানক নীরবতা ঘিরে ফেলল, যেন পৃথিবী থেমে গেছে।
নভা তখন বুঝতে পারল, ঘরের কোণটায় কিছু আছে, কিছু অন্ধকার শক্তি, যা তাকে ঘিরে রেখেছে। কিন্তু তার মধ্যে এক ধরনের বিরক্তি ও ভয় ও ছিল - কি হতে চলেছে তার সাথে ?
তারপর, দূর থেকে একটা ঝাঁঝালো শব্দ শোনা গেল, যেন গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। নভা কাঁপতে কাঁপতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল, আর সেই শব্দগুলো একে একে থেমে গেল। দিনটা ফিরল, কিন্তু নভা জানত, সে আর কখনোই তার শান্তিপূর্ণ জীবনে ফিরে যেতে পারবে না। সেই অন্ধকার ছায়া, সেই ফিসফিস আওয়াজ, তাকে অনুসরণ করবে চিরকাল।
সমাপ্ত -