একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে কুয়াশার ঘন চাদর। গ্রামের শেষ প্রান্তে থাকা পুরনো বাড়িটা আজও আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে। বাড়িটা দেখতে ভয়ঙ্কর। জানালাগুলো ভাঙা, দরজা হালকা খোলা। বাড়ির সামনে থাকা বাগানটা জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। গাছের ডালপালা বাড়ির দিকে বাড়তে চায় যেন।
রহিম বাড়িটার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার বন্ধুরা তাকে ডেরেছে এই বাড়িতে রাত কাটাতে। সবাই বলে বাড়িটা ভূতুড়ে। কিন্তু রহিম বিশ্বাস করে না ভূত-প্রেতে। সে বাড়ির দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ভেতরে ঢুকতেই একটা ঠাণ্ডা হাওয়া তার গায়ে লাগে। বাড়ির ভেতরটা অন্ধকার। রহিম টর্চ জ্বালায়। আলো পড়তেই সে দেখে দেয়ালে কয়েকটা ছবি টাঙানো। ছবিগুলো খুব পুরনো। ছবিতে থাকা মানুষগুলোর চোখ যেন তাকিয়ে আছে রহিমের দিকে।
রহিম এগিয়ে যায়। বাড়িটা তিন তলা। সে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। সিঁড়ি ভাঙা। প্রতি পা ফেলতেই শব্দ হয়। রহিম উপরে উঠে একটা ঘরে ঢোকে। ঘরটা খালি। শুধু একটা আয়না দেয়ালে টাঙানো। রহিম আয়নার দিকে তাকায়। আয়নায় তার প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতেই সে দেখে আয়নায় আরেকটা মুখ দেখা যাচ্ছে। মুখটা কালো, চোখ দুটো লাল। রহিম পেছনে ফিরে তাকায়। কেউ নেই। কিন্তু আয়নায় ওই মুখটা এখনও আছে। মুখটা হাসছে।
রহিম দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। সে নিচে নামতে শুরু করে। কিন্তু সিঁড়ি যেন শেষই হচ্ছে না। সে দৌড়াতে থাকে। কিন্তু নিচে নামতে পারছে না। হঠাৎ সে শুনতে পায় পেছনে কারো পায়ের শব্দ। রহিম পেছনে তাকায়। কেউ নেই। কিন্তু পায়ের শব্দটা কানে আসছে। রহিম আরও দ্রুত দৌড়াতে থাকে। কিন্তু সিঁড়ি শেষ হচ্ছে না। পায়ের শব্দটা আরও জোরে শোনা যাচ্ছে। রহিম চিৎকার করে। কিন্তু কেউ তাকে শুনতে পায় না।
হঠাৎ রহিমের পা পিছলে যায়। সে সিঁড়ি থেকে পড়ে যায়। নিচে পড়ে সে জ্ঞান হারায়। যখন জ্ঞান ফেরে, সে দেখে বাড়িটা আগের মতোই আছে। কিন্তু এখন দিন। রহিম বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। সে গ্রামে ফিরে যায়। কিন্তু গ্রামে কেউ তাকে চিনতে পারে না। সবাই তাকে অচেনা ভাবে। রহিম বুঝতে পারে, সে এখন আর এই জগতের নয়। বাড়িটা তাকে গ্রাস করে ফেলেছে। আর সে এখন চিরকালের জন্য আটকা পড়ে গেছে সেই ভূতুড়ে বাড়িতে।