Posts

চিন্তা

আশার সোনালী দিগন্ত

March 8, 2025

Katha nayak

121
View

কালিপুর গ্রামটি প্রকৃতির এক অদ্ভুত সুন্দর রূপ ধারণ করেছিল। খোলা মাঠ, সবুজ গাছপালা, এবং পাখির কিচিরমিচির গানে ভরা এক শান্ত পরিবেশ। কিন্তু এই শান্ত পরিবেশে বসবাস করেও গ্রামের কৃষকদের জীবন যেন শান্তি খুঁজে পায় না। হারুন, একজন পরিশ্রমী কৃষক, প্রতিদিন সকালে সূর্য উঠতে না উঠতেই তার মাঠে চলে যেতেন। তবে তার জীবন ছিল না-পাওয়া আর সংগ্রামের মধ্যে। আয়েশা, তার স্ত্রী, প্রায়ই তাকে সাহস জোগাতো, "হারুন, আল্লাহর উপরে বিশ্বাস রেখো, আমাদের দিন একদিন বদলাবে।"

হারুনের দুটি ছেলে ছিল—রনি আর সানি। রনি, সবচেয়ে বড় ছেলে, তার বাবা-মায়ের কঠোর পরিশ্রম দেখেই বড় হচ্ছিলো। সে জানতো, তাদের জীবনে কোনো সুখ নেই, কিন্তু বাবা-মায়ের প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা ছিল। সানি, তার ছোট ভাই, অনেকটাই আলাদা। সদা হাস্যোজ্জ্বল, সে বাবার সাথে ক্ষেতের কাজ করতে গিয়ে বেছে নিতো নিজের পথ, কিন্তু হারুন জানতো যে তার ছেলের মধ্যে কিছু গভীর চিন্তা লুকিয়ে রয়েছে।

"বাবা, তুমি কি জানো, আমাদের ক্ষেতে ফসল কেন ফলছে না?" একদিন রনি বাবাকে প্রশ্ন করেছিল, তখন হারুন চুপ হয়ে গিয়েছিলো। "হ্যাঁ, ছেলে, আমি জানি না।" তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, কিন্তু আয়েশার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, "কিন্তু পরিশ্রম ছাড়া অন্য কিছু করার নেই।"

একদিন, যখন হারুন ক্ষেতে কাজ করছিলেন, তিনি হঠাৎ একটি সোনালি রঙের পাথর দেখতে পেলেন। প্রথমে তিনি ভাবলেন, এটি হয়তো কোনো সাধারণ পাথর, কিন্তু কিছু অদ্ভুত আকর্ষণ ছিল পাথরটিতে। এটি যেন এক রহস্যময় আলো ছড়াচ্ছিল। তিনি সেটি হাতে তুলে নিয়ে মোল্লা সাহেবের কাছে গেলেন। মোল্লা সাহেব পাথরটি দেখে গভীর মনোযোগ দিয়ে বললেন, "এটি তোমার জীবনের একটি দান, হারুন। তবে মনে রেখো, পাথরটি তোমার পরিশ্রমের ফলস্বরূপ আসবে না—তোমার বিশ্বাসের শক্তিই আসল।"

মোল্লা সাহেবের কথা হারুনের মননে গভীর প্রভাব ফেললো। তিনি বুঝতে পারলেন, রিজিক কেবল পরিশ্রমের ফল নয়, বরং আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও ধৈর্যের ফলও।

অতঃপর, তার জমিতে কাজ করতে গিয়ে হারুন দেখতে পেলো, আগের চেয়ে ফসলের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। তার জমির ফসল যেন এক নতুন জীবন লাভ করলো। হারুন এখন বুঝতে পারছিলো, এই সোনালি পাথরটি তার কাছে এক বিশেষ সংকেত ছিল—প্রতিটি কঠোর পরিশ্রমের সাথে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস একসাথে মিলিত হলে সাফল্য আসে।

গ্রামের অন্যান্য কৃষকরা হারুনের পরিবর্তন লক্ষ্য করে তার কাছ থেকে কৃষির আধুনিক পদ্ধতি শিখতে শুরু করলো। হারুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছিলো—পানির সাশ্রয়ী ব্যবস্থা, উন্নত বীজ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে চলার উপায়। কৃষকরা তার কাছ থেকে শিখে, তাদের মাঠেও নতুন পরিবর্তন দেখতে পেলো।

রনি একদিন বাবাকে বললো, "বাবা, তুমি জানো? তুমি আমাদের দেখিয়েছো, পরিশ্রম আর বিশ্বাস কিভাবে আমাদের জীবন বদলাতে পারে।"

হারুন ধীরেস্থিরে মাথা নেড়ে বললেন, "ছেলে, জীবন হলো এক চলন্ত পরীক্ষা। যতটা পরিশ্রম করবে, ততটাই ফল পাবে, তবে একমাত্র আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে সেই ফল আসবে।"

সানি, হাস্যোজ্জ্বল ছোট ছেলে, তখন বললো, "বাবা, এখন আমি জানি—কেবল কঠোর পরিশ্রম আর বিশ্বাসেই জীবন বদলানো যায়।"

গ্রামের কৃষকরা এখন জানতো, পরিবর্তন শুধুমাত্র তাদের পরিশ্রমের ফল নয়, বরং আল্লাহর উপর বিশ্বাস এবং সঠিক পথে চলার ফলও। হারুনের কৃষি পদ্ধতি এবং তার জীবনের প্রতি বিশ্বাস তাদের নতুন দিগন্তের পথ দেখিয়েছে।

উপসংহার:
হারুনের জীবনের এই অভিজ্ঞতা আমাদের শেখায় যে, রিজিক আসতে সময় লাগে, তবে ধৈর্য এবং বিশ্বাসের সাথে সঠিক পথে চললে সফলতা আসবেই। সোনালি পাথরটি তার জীবনের একমাত্র পরিবর্তন ছিল না, বরং তা ছিল তার বিশ্বাস এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলস্বরূপ। "আল্লাহই সবচেয়ে বড় রিজিকদাতা," এই বিশ্বাস থেকেই হারুন তার জীবন ও পরিবারের ভাগ্য বদলাতে সক্ষম হয়েছিল। তার গল্পটি যেন আমাদের সকলের জন্য এক অনুপ্রেরণা, যে পরিশ্রম আর বিশ্বাসের সমন্বয়ে জীবনের যেকোনো দুঃখকষ্ট দূর করা সম্ভব।

Comments

    Please login to post comment. Login