সায়েমের প্রেমজীবন কখনোই খুব সহজ ছিল না। বন্ধুদের দেখাদেখি একদিন সে মজা করে একটা ডেটিং অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুলল। কিছুদিনের মধ্যেই পরিচয় হলো নীলা নামের এক মেয়ের সঙ্গে। মেয়েটির কথায় একটা অদ্ভুত মায়া ছিল, এমন কিছু যা সায়েমকে চুম্বকের মতো টানছিল।
দুজনের প্রতিদিন কথা বলা, রাত জেগে গল্প করা, ছোট ছোট আবেগ ভাগ করে নেওয়া—সবকিছুই এত আপন লাগছিল যে সায়েম বুঝতেই পারল না কখন মেয়েটির প্রেমে পড়ে গেছে। কিন্তু যখন সামনাসামনি দেখার কথা হলো, তখনই হুট করে নীলা জানিয়ে দিল, "আমাদের আর কথা বলা ঠিক হবে না।"
সায়েম হতবাক। এত গভীর অনুভূতির পর হুট করে এমন একটা সিদ্ধান্ত? সে অনেক চেষ্টা করল, কিন্তু নীলা কোনো ব্যাখ্যা না দিয়েই হারিয়ে গেল।
সায়েম ভেঙে পড়েছিল, কিন্তু জীবন থেমে থাকে না। পড়াশোনা শেষ করে সে একটা ভালো চাকরি পেল, নিজেকে ব্যস্ত রাখল। এর মাঝে বছর দুয়েক কেটে গেল।
ঠিক তখনই তার জীবনে এলো মেহজাবীন। মেহজাবীন ছিল একদম অন্যরকম—হাসিখুশি, বাস্তববাদী, আর অসম্ভব যত্নশীল। প্রথমে সায়েম অতটা গুরুত্ব দেয়নি, কিন্তু ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারল, এই মেয়েটার জন্যই হয়তো তার অপেক্ষা ছিল।
নতুন প্রেম শুরু হলো। সায়েম প্রথমবারের মতো মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, এবার সে নিজের ভালোবাসাকে হারিয়ে যেতে দেবে না।
চমকের শুরু
একদিন হঠাৎই সায়েম এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারল—মেহজাবীন আসলে নীলা!
সায়েম প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেনি। কিন্তু কিছু প্রমাণ, কিছু পুরনো কথা মিলিয়ে সে নিশ্চিত হলো, মেহজাবীনই সেই মেয়ে, যে একদিন তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল।
রাগে, অভিমানে, কষ্টে সায়েম নিজেকে গুটিয়ে নিল। কোনো ব্যাখ্যা শুনতে চাইলো না। সে অনুভব করল, তার ভালোবাসাকে নিয়ে খেলা করা হয়েছে।
নীলার সত্য উন্মোচন
মেহজাবীন/নীলা অনেক চেষ্টা করেও সায়েমের কাছে পৌঁছাতে পারছিল না। শেষমেশ একদিন সে চিঠি লিখল, যেখানে জানাল, কেন সেদিন সে সায়েমকে ছেড়ে গিয়েছিল।
সত্যিটা ছিল ভয়ানক।
নীলার পরিবার তার জন্য এক ধনী পাত্র ঠিক করেছিল। সে যদি সায়েমের সঙ্গে সম্পর্ক রাখত, তাহলে তার বাবা-মাকে ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতো। তাই বাধ্য হয়ে সে চলে গিয়েছিল।
কিন্তু এরপর সে কিছুতেই সায়েমকে ভুলতে পারেনি। পরিবার থেকে পালিয়ে গিয়ে নিজের জীবন নিজে গুছিয়ে নিয়েছিল, আর তখনই নতুন নামে আবার সায়েমের জীবনে আসার সাহস করেছিল।
কিন্তু এ কথা সায়েমের কানে পৌঁছানোর আগেই ঘটে গেল এক দুর্ঘটনা।
সায়েম যখন জানতে পারল সত্যিটা, তখন সে সিদ্ধান্ত নিল, আর দেরি করবে না। সে ছুটে গেল মেহজাবীনের কাছে, কিন্তু তখনই জানতে পারল, মেহজাবীন একটা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
হাসপাতালে মেহজাবীনকে দেখে সায়েমের বুক ফেটে যাচ্ছিল।
"তুমি কেন এভাবে এলে আমার জীবনে?" সায়েমের চোখ দিয়ে ঝরছিল অশ্রু।
মেহজাবীন ক্লান্ত হাসি দিয়ে বলল, "কারণ আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।"
মেহজাবীন সুস্থ হয়ে উঠল, আর সায়েম এবার আর তাকে হাতছাড়া করল না।
কিছু ভালোবাসা পরীক্ষা নেয়, কিছু ভালোবাসা ছলচাতুরীর শিকার হয়, কিন্তু যেটা সত্যি হয়, সেটা শেষ পর্যন্ত ফিরে আসে।
তাদের প্রেমের গল্পটাও ফিরে এলো—আর এবার চিরস্থায়ী হওয়ার জন্য।