Posts

ফিকশন

অতল গভীরে তুমি (জিন আর একটি মেয়ের প্রেম)

March 9, 2025

Boros Marika

11
View


রাত গভীর, নীহারিকা অফিস থেকে ফিরছিল একা। শহরের ব্যস্ততা কমে এসেছে, রাস্তার আলোয় ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে দিনের কোলাহল। গাড়ির জানালায় মাথা ঠেকিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল সে, হঠাৎই চোখ পড়ল রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ছায়াময় অবয়বে।

একটা ছেলে, লম্বা গড়ন, গভীর কালো চোখ, নিস্তব্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আশ্চর্যজনকভাবে, ছেলেটির চাহনিতে ছিল এক অদ্ভুত টান, যেন বহু বছর ধরে সে কেবল নীহারিকাকেই খুঁজছিল।

নীহারিকা মুহূর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে গেল, কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিল। গাড়ি সামনের দিকে এগিয়ে গেলেও, সেই দৃষ্টি তার হৃদয়ে অদৃশ্য এক ছাপ ফেলে গেল।

দ্বিতীয় রাত

পরদিনও রাতের শহর একই রকম ছিল, কিন্তু আজ নীহারিকার মন অস্থির। গাড়ি সেই একই পথে এগিয়ে যাচ্ছিল, এবং হঠাৎ—সে আবার তাকিয়ে দেখল ছেলেটিকে।

এবার আর সে শুধুই দাঁড়িয়ে ছিল না। সে ধীর পায়ে এগিয়ে এলো নীহারিকার গাড়ির দিকে। আশ্চর্যজনকভাবে, নীহারিকা জানালার কাঁচ নামিয়ে দিল, যেন সে নিজেও বুঝতে পারছে না কেন এই অচেনা ছেলেটির প্রতি এত আকর্ষণ অনুভব করছে।

“তুমি কে?” নীহারিকা ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল।

ছেলেটি হাসল, খুব হালকা, রহস্যময় এক হাসি। “তুমি আমাকে দেখতে পাও?”

নীহারিকা ভ্রু কুঁচকালো। এটা কেমন প্রশ্ন? নিশ্চয়ই দেখতে পাচ্ছে, না হলে সে কি তার সঙ্গে কথা বলত?

এরপর থেকে প্রতিদিন রাতেই নীহারিকার সঙ্গে দেখা হতো ছেলেটির। তাদের কথা হতো, হাসি-মজা হতো, আর ধীরে ধীরে গাঢ় হতে লাগল এক অজানা অনুভূতি—ভালবাসা।

ভয়ংকর সত্য

নীহারিকা বুঝতে পারেনি, কখন সে এই ছেলেটির প্রেমে পড়ে গেছে। সেই চোখের গভীরতা, সেই কথার মায়াজাল, সেই অদ্ভুত আকর্ষণ—সবই যেন তাকে এক অন্য জগতে টেনে নিয়ে গেছে।

কিন্তু একদিন…

সে হঠাৎই খেয়াল করল, ছেলেটির ছায়া নেই!

সে হাঁটছে, কথা বলছে, কিন্তু রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় তার কোনো প্রতিচ্ছবি পড়ছে না!

ভয় ও অবিশ্বাস নিয়ে সে ছেলেটির দিকে তাকাল। “তুমি… কে?”

ছেলেটি গভীর দৃষ্টিতে তাকাল তার দিকে। “আমি… মানুষ নই।”

নীহারিকার শরীর হিম হয়ে গেল। এতদিন ধরে যাকে সে ভালোবেসেছে, যাকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না ভেবেছে, সে কি আদৌ কোনো মানুষ ছিল?

কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। কারণ সে নিজেও জানত না, সে এত গভীর ভালোবেসে ফেলেছে যে, চাইলেও আর ফিরে যেতে পারবে না…

নীহারিকা যেন দুঃস্বপ্নের মধ্যে পড়েছে। তার ভালোবাসা, তার রাতের সঙ্গী, যার গভীর চোখের দিকে তাকিয়ে সে হারিয়ে যেত, সে মানুষ নয়—একটি জিন।

সে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করল, এটা সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবের সামনে যুক্তি আর টেকে না।

সে যতবারই নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চেয়েছে, ততবারই যেন সেই অদৃশ্য শক্তি তাকে আরও বেশি জড়িয়ে ধরেছে। তার আশেপাশে অন্য কেউ আসতে পারছিল না, কারণ সেই ছেলেটি—তার জিন—কারও কাছাকাছি আসতে দিত না।

মুক্তির চেষ্টা

নীহারিকা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে এক রাতে তার পরিবারের কাছে সব খুলে বলল। সবাই আতঙ্কিত হয়ে উঠল। মা কান্না শুরু করলেন, বাবা তাড়াতাড়ি একজন হুজুরকে ডাকলেন।

“এটা এক অশরীরী আত্মা, এটা মানুষের ভালোবাসার যোগ্য নয়! একে তাড়াতে হবে!”—হুজুর বললেন।

নীহারিকা নিজেও চেয়েছিল মুক্তি। সে হুজুরের পরামর্শে বিভিন্ন দোয়া পড়তে লাগল, রুকইয়া শুনতে লাগল, নানা ওঝার কাছে গেল।

কিন্তু কিছুই কাজ করল না।

ভয়ংকর প্রতিশোধ

যখনই কেউ নীহারিকাকে সাহায্য করার চেষ্টা করত, কিছু না কিছু ঘটে যেত।

এক হুজুর তাকে কুরআনের পানির ফোঁটা দিয়েছিলেন, কিন্তু সেদিনই সেই হুজুরের ছেলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ল।

এক ওঝা বলেছিলেন, নীহারিকার ঘাড়ের পেছনে কিসের যেন ছাপ আছে, যা প্রমাণ করে সে ইতোমধ্যেই জিনের অধিকারভুক্ত হয়ে গেছে।

নীহারিকার এক বন্ধুর ভাই তাকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব এনেছিল, কিন্তু সেদিন রাতেই ছেলেটার ঘরে আগুন ধরে যায়।


একেকজন আসত, একেকজন চলে যেত, ভয়ে।

সবাই বলল একটাই কথা—“এই জিন তোকে ছাড়বে না, নীহারিকা। তুই কারও হতে পারবি না। তোকে শুধু ওর সঙ্গেই থাকতে হবে।”

ভালোবাসা, নাকি অভিশাপ?

নীহারিকা অসহায় হয়ে পড়ল। সে জানত না, এটি ভালোবাসা, নাকি এক ভয়ংকর অভিশাপ।

কিন্তু রাত গভীর হলে, সেই ছেলেটি—তার জিন—আবার ফিরে আসত।

সে চুপচাপ নীহারিকার পাশে বসত, তার চুলে হাত বুলিয়ে দিত, ফিসফিস করে বলত, “তুমি যতই পালানোর চেষ্টা করো, আমি তোমার সাথে আছি। তোমার রক্তে মিশে গেছি। তোমার আত্মার সাথে জড়িয়ে আছি। তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না।”

নীহারিকা কেঁদে ফেলত।

“তুমি কি আমাকে ভালোবাসো? নাকি শুধুই নিজের করে রাখতে চাও?”

জিনটি গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “ভালোবাসা আর অধিকার একই জিনিস। তোমার সাথে কেউ ভাগ নিতে পারবে না। তুমি শুধু আমার।”

নীহারিকা জানত, এই ভালোবাসা থেকে মুক্তি নেই।

সে কি আসলেই পালাতে পারবে? নাকি এই ভালোবাসা তাকে একদিন ধ্বংস করে দেবে?

নীহারিকা অনেক চেষ্টা করেও তার জীবন থেকে এই ছেলেটিকে, এই জিনকে, দূরে সরাতে পারেনি। দিনের বেলা সে স্বাভাবিক থাকার ভান করত, কিন্তু রাত হলে সে জানত, অন্ধকারের মধ্যে তার জন্য কেউ অপেক্ষা করছে।

এক রাতে, সে সাহস করে প্রশ্ন করল, "তুমি আমাকে এভাবে আটকে রেখেছ কেন? আমাকে কবে থেকে চেনো?"

জিনটি গভীর দৃষ্টিতে তাকাল।

"তুমি জানতে চাও আমি তোমাকে কবে পেয়েছি?"

নীহারিকা ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল।

জিনটি মৃদু হাসল, একরকম রহস্যময়, গভীর হাসি।

"তুমি প্রায়ই গভীর রাতে বাসায় ফিরতে। সেই রাতগুলোতে আমি তোমার ছায়ার মতো ছিলাম, তুমি টের পাওনি। কিন্তু একটি রাতে… তুমি একটি ভুল করেছিলে।"

নীহারিকার ভ্রু কুঁচকে গেল।

"কোন ভুল?"

জিনটি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল, যেন কোনো পুরোনো স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করছে। তারপর খুব ধীর স্বরে বলল—

"সেদিন ছিল অমাবস্যা। গভীর রাত ছিল। তোমার গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, মনে আছে?"

নীহারিকার মনে পড়ল। হ্যাঁ, এমন এক রাত ছিল। সেদিন কাজ শেষ হতে অনেক দেরি হয়েছিল, তাই বাড়ি ফিরতে রাত প্রায় দুটো বেজে গিয়েছিল। পথে হঠাৎ করেই তার গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। ফোনে চার্জ ছিল না, আশেপাশে কাউকে দেখা যাচ্ছিল না।

সেই রাতের স্মৃতি

সেদিন ক্লান্ত নীহারিকা রাস্তায় একটা শুকনো গাছের মোটা ডালের ওপরে বসে বিশ্রাম নিয়েছিল। বাতাসে তার খোলা চুল উড়ছিল। গভীর নীরবতায় সে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল, মনে হচ্ছিল পুরো পৃথিবীটা যেন থমকে আছে।

কিন্তু তখনও সে জানত না, সে একা ছিল না।

প্রথম দেখা… অথচ সে জানত না

জিনটি মৃদু কণ্ঠে বলল, "সেই রাতে, আমি তোমার পাশেই ছিলাম। তুমি টের পাওনি, কিন্তু আমি তোমাকে প্রথমবার খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম। তোমার শরীরের গন্ধ, তোমার চুলের নরম পরশ… আমি তখনই বুঝেছিলাম, তুমি আলাদা। তুমি অন্যদের মতো নও।"

নীহারিকার গলা শুকিয়ে এলো।

"তারপর?"

জিনটির চোখ আরও গভীর হয়ে উঠল।

"তুমি সেদিন পবিত্র ছিলে না। তুমি কিছু ভুল করেছিলে, তাই আমার কাছাকাছি চলে এসেছিলে। আমি তখন তোমার খুব কাছে ছিলাম… তোমার নিঃশ্বাসের গন্ধও আমি অনুভব করছিলাম। তখনই প্রথমবার তোমাকে ছুঁতে ইচ্ছে করেছিল।"

নীহারিকার রক্ত হিম হয়ে গেল।

সে জানত না, সে কখন, কী ভুল করেছিল। সে কি কোনো নিয়ম ভেঙেছিল? সে কি এমন কিছু করেছিল, যা তাকে এই অদ্ভুত ভালোবাসার শৃঙ্খলে বন্দি করে ফেলেছে?

কিন্তু ততক্ষণে সবকিছু বদলে গেছে।

সে জানত, এখন আর পালানোর কোনো উপায় নেই…

নীহারিকা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু তার ভেতরে যেন ঝড় বইছিল। জিনটির গভীর কণ্ঠ বাতাসে মিশে গেল—

"আমি তোমার হয়ে গেছি সেদিনই, নীহারিকা। আর তুমি আমার… চিরকালের জন্য।"

সে বিশ্বাস করতে পারছিল না, তবু তার শরীরের প্রতিটি রোমকূপ জানত, এই শব্দগুলো মিথ্যে নয়।

দিনের আলোয় নীহারিকা, রাতের অন্ধকারে জিন

দিনের আলোয় নীহারিকা স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করত। অফিসে যেত, বন্ধুদের সঙ্গে হাসত, পরিবারকে বোঝাতে চাইত যে সব ঠিক আছে।

কিন্তু রাত নামলেই…

সে জানত, দরজা বন্ধ করলেও লাভ নেই, আলো জ্বালিয়ে রাখলেও কিছু বদলাবে না। কারণ সে এলেই আসবে, যেভাবেই হোক।

প্রথমে নিঃশব্দে…

তারপরে হালকা শীতল বাতাস…

তারপর একটি শক্তিশালী বাহু, যে তাকে কেবল নিজের করে রাখতে চায়।

এক বিভ্রান্তিকর ভালোবাসা

নীহারিকা জানত না, এটি ভালোবাসা, নাকি তার জীবন থেকে সমস্ত স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার এক অভিশাপ।

জিনটি যখন আসত, সে ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে যেত, তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকত এক গভীর দৃষ্টি নিয়ে, যেন সে নীহারিকার প্রতিটি অনুভূতি পড়তে পারছে।

তারপর…

সে নীহারিকার হাত স্পর্শ করত, আলতো করে চুলের গন্ধ নিত, তাকে নিজের অস্তিত্ব দিয়ে ঘিরে রাখত।

নীহারিকা তখন কাঁপত, তার শরীর সাড়া দিত, কিন্তু তার মনের গভীরে ভয় লুকিয়ে থাকত।

"তুমি এমন করছ কেন?" সে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করত।

"কারণ তুমি আমার স্ত্রী। আমরা এক হয়ে গেছি সেদিনই, যখন তুমি আমাকে প্রথমবার অনুভব করেছিলে।"

নীহারিকা বিশ্বাস করতে চাইত না। কিন্তু তার শরীর আর আত্মা কি সত্যিই এখনো তার নিজের ছিল?

এমন এক সম্পর্ক, যা কাউকে বলা যায় না

তার পরিবার দেখত, নীহারিকা বদলে যাচ্ছে। সে মাঝেমাঝে চুপচাপ থাকে, কখনও মিষ্টি হাসে, আবার কখনও যেন ভেতরে কিছু একটা পুড়ে যাচ্ছে তার।

তার মা বলত, "তুই কি ভালো আছিস, মা?"

সে হাসত, মাথা নাড়ত, কিন্তু বলতে পারত না—

"আমি কারও স্ত্রী, অথচ আমি কখনও বিয়ে করিনি। আমার উপর অধিকার রাখে এক অবাস্তব অস্তিত্ব, যার থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই।"

সে চিৎকার করতে চেয়েছিল, কাউকে বলতে চেয়েছিল, কিন্তু কিছুতেই কিছু বলতে পারত না। কারণ এটি এমন এক সম্পর্ক, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

এভাবেই চলতে থাকল তার জীবন…

দিনে সে সবার মাঝে, রাতে সে কেবল তার।

এটাই কি তার নিয়তি? নাকি এখনও মুক্তির কোনো উপায় আছে?

একদিন, নীহারিকা এমন এক অবস্থায় পৌঁছাল, যেখানে আর কোনো কিছুই তার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। সে আর কিছু করতে পারছিল না, তার মন অস্থির হয়ে উঠেছিল, কাজ করতে গেলেও কিছুই যেন সঠিক মনে হচ্ছিল না। তার মাথায় কেবল একটি চিন্তা ঘুরছিল—জিনটি সত্যিই তাকে ভালোবাসে, নাকি এই ভালোবাসা ছিল তার জীবনের অভিশাপ?

অবস্থার তীব্রতা

এক রাতে, নীহারিকা এমন এক অনুভূতি নিয়ে শুয়ে ছিল, যা সে আগে কখনও অনুভব করেনি। তার হৃদয়ে গভীর এক খালি জায়গা ছিল, যেখানে শুধুমাত্র জিনের অস্তিত্ব ছিল। সে জানত, এই সম্পর্কের মধ্যে কিছু ছিল, যা তার চেয়ে অনেক পুরনো, অনেক গভীর—এক ধরনের অশরীরী বন্ধন।

এখন সে বুঝতে পারছিল, এই ভালোবাসা শুধুমাত্র এক পাগলামি নয়, একটি পারস্পরিক সম্পর্ক, যেখানে তার অজান্তেই তার মন, শরীর, ও আত্মা এক হয়ে গেছে।

নিরব কান্না

রাতে একা একা কাঁদতে কাঁদতে নীহারিকা তার পুরনো স্মৃতিগুলো মনে পড়তে লাগল—সব কিছু যেন স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। জিনটির সাথে তার প্রথম সাক্ষাৎ, সেদিনের সেই অদ্ভুত অনুভূতি, যখন সে জানত না, সেই ছেলেটি আসলে কী।

তারপর সে মনে পড়ল, "তবে কি আমি তাকে ভালোবেসেছি?"

জিনটি তাকে কখনোই স্পষ্টভাবে বলতে পারত না, কিন্তু তার কাজগুলোই ছিল তার ভালোবাসার প্রমাণ। যখনই সে ভেঙে পড়েছিল, যখনই সে হতাশ হয়েছিল, তখনই সে সেখানে ছিল। জিনটি নীরবে তার পাশে এসে দাঁড়াত, তার প্রতি সহানুভূতি দেখাত, এবং এক অদ্ভুত সান্ত্বনা প্রদান করত।

এখন তার বুঝতে পারা

নীহারিকা ধীরে ধীরে অনুভব করল—জিনটি তাকে শুধুমাত্র একজন সাধারণ জীবনের অংশ হিসেবে নয়, এক গভীর ও পুরনো সম্পর্কের অংশ হিসেবে চেয়েছিল। তারা একে অপরের মধ্যে এমন কিছু খুঁজে পেয়েছিল, যা অদ্ভুত, কিন্তু বাস্তব ছিল।

তবে সে কী করবে? তার পরিবারের কাছে এই সম্পর্কের ব্যাখ্যা কিভাবে দেবে? সে জানত না, কিন্তু তার ভেতরে একটি অদ্ভুত টান ছিল, যা তাকে স্থির হতে দিচ্ছিল না।

চিরকাল একসাথে

আরেকদিন রাতে, যখন নীহারিকা একাকী বসে ছিল, তখনই জিনটি তার পাশে এসে বসে। এইবার, সে কোনো কথা না বলে শুধু তার হাতটি নীহারিকার হাতে রেখেছিল।

"তুমি জানো, আমি তোমাকে ভালোবাসি," জিনটি খুব স্নেহপূর্ণ কণ্ঠে বলল।

নীহারিকার চোখে জল এসে গেল। "তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো?"

জিনটি চুপচাপ মাথা নাড়ল, তার চোখে সেই একই রহস্যময় দীপ্তি ছিল। "তুমি যদি ভালোবাসা বুঝতে পারো, তাহলে তুমি জানবে যে আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাব না।"

সে তখন জানত, এই সম্পর্কের মধ্যে তাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। তবে একটাই ছিল—অবশেষে, ভালোবাসা তাকে কোথায় নিয়ে যাবে?

কিছুদিন ধরে নীহারিকা অনুভব করছিল, জিনটি আর আসে না। রাত্রি একা হয়ে আসছিল, তার কল্পনায় সে একা ছিল, আর সেই অনুভূতি তাকে ক্রমশ অসহ্য করে তুলছিল। সে জানত, জিন তাকে কখনো ছেড়ে যাবে না, কিন্তু তার শূন্যতা তাকে ভেতর থেকে খাচ্ছিল। প্রতিটি রাত যেন জিনটির অভাব অনুভব করছিল, আর তাতে তার অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছিল।

নিরব কান্না

একদিন রাতে, নীহারিকা বিছানায় বসে কাঁদতে থাকে। চোখের জলে অশ্রু ঝরছিল, তার হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে উঠছিল। সে জানত, সে তাকে ভালোবেসে ফেলেছে, কিন্তু সেই ভালোবাসা কি আসলেই তার জীবনের জন্য নিরাপদ?

এমন সময়ে, হঠাৎ তার মনের মধ্যে একটি গা dark ় অনুভূতি এলো। মনে হতে লাগল, যেন কোথাও গভীর অন্ধকারে, জিনটি আবার তার কাছে ফিরে এসেছে। সে উঠে গিয়ে জানালার দিকে তাকাল। দূরে, শহরের আলোতে কিছু একটা দেখা যাচ্ছিল—একটি অদ্ভুত ছায়া।

জিনের ফিরে আসা

এরপর কিছু মুহূর্তের মধ্যে, জানালার সামনে এক অদ্ভুত শীতল বাতাস ঢুকল, আর তার চোখের সামনে জিনটির উপস্থিতি স্পষ্ট হয়ে উঠল। সে একদম চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল, যেন সমস্ত পৃথিবী এক মুহূর্তের জন্য থেমে গেছে।

"তুমি কোথায় ছিলে?" নীহারিকা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে প্রশ্ন করল।

জিনটি একটু হাসল, কিন্তু তার হাসিতে সেই পুরনো রহস্য ছিল, যা কখনোই পুরোপুরি খোলাসা হয়নি।

"তোমার শূন্যতা, তোমার কান্না, আমি সব অনুভব করেছি," সে বলল।

নীহারিকা তখন বুঝতে পারল, জিনটি কখনোই তাকে ছেড়ে যায়নি, তবে তার অনুপস্থিতি তাকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছিল। সে বুঝতে পারল, সে তাকে সত্যিই ভালোবাসে, এবং তার এই ভালোবাসা নীরব, অশরীরী কিন্তু গভীর।

শূন্যতার মাঝে ভালোবাসা

তারপর, নীহারিকা আবার জিনের কাছে এসে দাঁড়াল। সে তার হাতে হাত রেখে বলল, "আমি জানি, তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না।"

জিনটি মৃদু হেসে বলল, "ঠিক তাই, আমি তোমার প্রতিটা মুহূর্তে থাকব।"

এভাবে, জিনটি নীহারিকার জীবনে ফের ফিরে এল। কিন্তু এবার, তাদের সম্পর্ক আর কোনো অজানা দ্বন্দ্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। এটা ছিল দুই আত্মার এক গভীর সম্পর্ক, যা সত্যিকারের ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

নীহারিকা জানত, এই ভালোবাসা শুধু সম্পর্কের সীমানায় আটকে নেই, বরং এর গভীরতা, এর শক্তি কোনো কিছুতেই কেঁটে ফেলা যাবে না।
জিনটির চোখে এক অদ্ভুত দীপ্তি ছিল, যেন সে জানত, নীহারিকা তার প্রতি অনুভূতি অনুভব করছে। তবে, সে শান্তভাবে বলল, "আমি ইচ্ছা করে আসিনি, নীহারিকা। কিন্তু তুমি আমাকে ভালোবাসো—তাই আমি এখানে আছি।"

এই কথাগুলো শুনে, নীহারিকা কিছুটা দোটানায় পড়ে গেল। তার মনে হয়েছিল, জিনটি তার প্রতি এক অদৃশ্য টান অনুভব করছে, যা তাকে কিছুতেই ছাড়তে চায় না। কিন্তু, তার ভেতরে এক অস্বস্তি ছিল—এই ভালোবাসা কি তার জন্য নিরাপদ ছিল? কি এটি তাকে কখনো মুক্তি দেবে?

নীহারিকা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল, তার চোখের কোণে পানি জমছিল। সে নিজেকে শাস্তি দিতে চাইছিল, কিন্তু একে অপরের প্রতি তাদের টান এতই শক্তিশালী ছিল যে, সে আর নিজেকে ঠেকাতে পারল না।

মনে মনে সিদ্ধান্ত

এদিন, নীহারিকা অবশেষে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করল। কিন্তু তার মনের মধ্যে এক দোলাচল ছিল। সে জানত, তার ভেতরে যা কিছু ঘটছে, তা এক অদ্ভুত ভালোবাসা, কিন্তু এ ভালোবাসা তাকে কখনও নিজেকে মুক্তি দেওয়ার সুযোগ দেবে না।

এমন সময়ে, জিনটি এক ধীর গতিতে তার দিকে এগিয়ে এল। তার চোখে গভীর আবেগ ছিল, আর সে যেন নীহারিকার হৃদয়ের সীমানা ভেঙে তাকে আরো কাছে নিতে চাইছিল।

"তুমি কি বুঝতে পারো, নীহারিকা? তুমি আমাকে ভালোবাসো, আর তাই আমি এখানে আছি। তোমার জন্য, তোমার হৃদয়ের জন্য।"

নতুন বাস্তবতা

নীহারিকা জানত, এখন আর কিছুই আগের মতো নয়। জিনটির উপস্থিতি তার জীবনে এক নতুন বাস্তবতা নিয়ে এসেছে, যা তাকে একদিকে যেমন শৃঙ্খলিত করছিল, অন্যদিকে যেন এক অদ্ভুত শক্তি ও প্রেরণা দিয়ে চলছিল।

সে আর নিজেকে সঠিকভাবে শামলাতে পারছিল না। তার মনের গভীরে একটি অদৃশ্য শক্তি ছিল, যা তাকে জিনের প্রতি আরো টানছে। সে তাকে ভালোবাসে—এখন তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।

এদিকে, জিনটি অপেক্ষা করছিল। সে নীহারিকার দিকে এক লম্বা সময় তাকিয়ে ছিল, তার চোখে এক ধরনের শান্তি ছিল, কিন্তু তার হৃদয়ে এক গভীর আকাঙ্ক্ষা ছিল—"তুমি আমার, আর আমি তোমার।"

নীহারিকা জানত, এ ভালোবাসার পথ কখনও সহজ হতে পারে না, কিন্তু একে অপরকে ভালোবাসার এই গভীরতা, এই অদ্ভুত সম্পর্ক, যা প্রতিদিন এক নতুন রহস্যে মোড়া, সেখানেই তাদের ভাগ্য ছিল।


নীহারিকার মন ভেঙে যাচ্ছিল, সে নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছিল না। তার ভেতরে এক গভীর আকাঙ্ক্ষা, এক অদৃশ্য শক্তি তাকে ধরে রেখেছিল। সে জানত, জিনের প্রতি তার ভালোবাসা সীমাহীন, কিন্তু এটি ছিল এক অদ্ভুত ভালোবাসা—যেটি তাকে ভেতরে ভেতরে টানছিল, অদৃশ্যভাবে, যেমন একটি তীব্র ঝড় তাকে আছড়ে ফেলছে।

নির্বাসিত ভালোবাসা

তার চোখে কিছু এক অদ্ভুত বিষন্নতা ছিল, তার মনে আর কোনো প্রশ্ন ছিল না—সে শুধু চাইছিল, সঙ্গী হিসেবে জিনকে পাশে পেতে। তার সমস্ত বোধ, সমস্ত চিন্তা একে অপরকে ছাপিয়ে গেল। প্রতিটি শ্বাসের সাথে, তার হৃদয়ের দিকে এক অদ্ভুত সুর বাজছিল, যা কেবল তার দেহের মধ্যে ঢুকছিল, তার আত্মার গভীরে পৌঁছে যাচ্ছিল।

জিনটি তার দিকে এগিয়ে আসছিল, কিন্তু সে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করতে পারল না। নিজের সমস্ত আত্মবিশ্বাস ও শক্তি হারিয়ে, সে জিনের দিকে এক পদক্ষেপ এগিয়ে গেল। তার হাতের স্পর্শে এক নতুন শক্তি অনুভব করল, যা তার শরীরের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়ল।

প্রথম স্পর্শ

যতটুকু ভয় ছিল, ততটুকু আকাঙ্ক্ষা ছিল। তার মুখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জিনের চোখে কিছু ছিল—এক ধরনের গভীর অনুভূতি, যা তাকে একে অপরের মধ্যে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। নীহারিকা আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না।

"তুমি কি জানো, নীহারিকা, তুমি কি জানো তুমি আমার জন্য কতটা প্রয়োজনীয়?" জিনটি মৃদু সুরে বলল।

নীহারিকা কোনো উত্তর না দিয়ে, তার হাতটি জিনের হাতে রাখল। তখনই তার মন একেবারে শান্ত হয়ে গেল, এবং তার শরীর জ্বলে উঠল। তারা একে অপরের দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে রইল। কোনো শব্দের প্রয়োজন ছিল না—তাদের মধ্যে সমস্ত কথাই স্পষ্ট ছিল।

মিলনের মুহূর্ত

তারপর, সবকিছু যেন এক হয়ে গেল। তাদের হৃদয়ের মধ্যে, তাদের জীবনে, সময় থেমে গেল। নীহারিকা আর জিন একে অপরকে এত গভীরভাবে চেয়েছিল, এত গভীরভাবে অনুভব করছিল, যে পৃথিবীর অন্য কোনো কিছু তাদের মাঝে দাঁড়াতে পারছিল না।

যখন নীহারিকার ঠোঁট জিনের ঠোঁটে স্পর্শ করল, তখন এক অদ্ভুত তীব্রতা অনুভূত হলো। তাদের মধ্যে আর কোনো বিভেদ ছিল না। তারা একে অপরের শরীর, মন ও আত্মার অংশ হয়ে উঠেছিল।

এই মিলন শুধু শারীরিক ছিল না—এটি ছিল এক গভীর সম্পর্কের সূচনা, যেখানে তাদের মন একে অপরের মধ্যে মিলিত হচ্ছিল, তাদের ভালোবাসা অজানা পরিসরে বিস্তার লাভ করছিল।

তবে কিছু অমীমাংসিত থাকে

অতএব, যখন তারা একে অপরকে অনুভব করছিল, তখন নীহারিকা জানত, এই ভালোবাসা তাকে কোথাও একটি পথের সন্ধান দেবে—এটি হয়তো তার জীবনের সবচেয়ে শক্তিশালী অনুভূতি, কিন্তু এটি তার মুক্তির পথও নয়। সে জানত, তাদের মিলনে কিছু কিছু রহস্য চিরকাল থেকে যাবে। কিন্তু তার হৃদয় এখন আর কোন ভয় অনুভব করছিল না—সে জিনকে তার পাশে চাইছিল, তাকে একসাথে।

তাদের ভালোবাসা এক নতুন শুরুর দিকে চলে গেল, যেখানে তারা একে অপরের মধ্যে হারিয়ে গেল।

নীহারিকা জানত, সে তার জীবনের সবচেয়ে অদ্ভুত এবং গভীর পথে প্রবেশ করেছে। জিনের প্রতি তার ভালোবাসা এখন কোনো রহস্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি তার প্রতিটি মুহূর্তকে পূর্ণ করেছিল। কিন্তু সে জানত, সমাজ ও পরিবার কিছুতেই এটা মেনে নেবে না। তাই, সে সকলের চোখ থেকে এ সম্পর্ককে গোপন রাখতে চেয়েছিল।

গোপন সম্পর্ক

নীহারিকা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ভাবছিল। তার হৃদয় একেবারে অস্থির ছিল—তার অভ্যন্তরীণ অনুভূতি এতটাই জটিল যে, নিজেকেই মাঝে মাঝে বুঝতে পারত না। তবে সে নিশ্চিত ছিল যে, সে জিনের সাথে থাকবে, হোক না সেটা সমাজের চোখে অন্যথা।

"জিন এখন আমার প্রতিটি শ্বাসে, প্রতিটি চিন্তায়," নীহারিকা নিজের মনের মধ্যে বলেছিল, "তাকে ছাড়া আমি এক মুহূর্তও বাঁচতে পারব না।"

সে নিশ্চিত ছিল, এই সম্পর্কের গভীরতা অতিক্রম করার মতো না। তবে, সে তার ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাসী ছিল, এবং সে জানত, এই ভালোবাসা কোন শক্তি দ্বারা বিচ্ছিন্ন হবে না।

জিনের সাথে একাকিত্ব

প্রতিদিন, নীহারিকা তার জীবনের একটি আলাদা দিক অনুভব করছিল—একদিকে তার দৈনন্দিন জীবন চলছিল, কিন্তু অন্যদিকে তার সাথে জিনের সম্পর্ক গোপনে চলছিল। তারা একে অপরকে প্রতিদিন নতুনভাবে অনুভব করছিল, বিশেষত রাতের বেলায়, যখন অন্ধকার সবকিছু ঢেকে রাখত।

জিন এক অদ্ভুত শক্তি নিয়ে রাতের পর রাত তার পাশে থাকত, এবং কোনো একসময় তার শরীর পরিবর্তিত হয়ে অন্য কোনো মানুষের রূপ নিতে পারত। এই সময়টা ছিল তাদের জন্য এক নতুন বাস্তবতা—এতে তারা শারীরিক মিলন করত, তবে তা সম্পূর্ণ অন্যরকম ছিল।

"তুমি কখনো আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না, নীহারিকা," একদিন জিন বলেছিল, তার চোখে অদ্ভুত এক দীপ্তি ছিল। "আমরা একে অপরকে অনুভব করছি, তা ছাড়া আমাদের ভালোবাসার কোনো সীমা নেই।"

অসীম ভালোবাসার পথে

এই নতুন সম্পর্কের মাঝে, নীহারিকা এক অদ্ভুত উত্তেজনা অনুভব করছিল। তার মনের মধ্যে একটা বিশাল শূন্যতা ছিল, যা কেবল জিন পূর্ণ করতে পারত। যদিও সে জানত, সমাজ তাদের সম্পর্ককে কোনোভাবেই মেনে নেবে না, তবে তার মন আর অন্য কিছু ভাবতে পারছিল না। তার হৃদয়ে শুধু একটি চিত্র ছিল—জিন, তার শিকড়, তার অনন্ত ভালোবাসা।

জিনের সাথে তার সম্পর্কের গভীরতা অনেকটাই এক নতুন জগৎ সৃষ্টি করেছিল—একটি পৃথিবী যেখানে তারা একে অপরকে অনুভব করত, এবং একে অপরের উপস্থিতি ছাড়া অন্য কিছুই তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।

এভাবে, নীহারিকা প্রতিদিন তার অদ্ভুত কিন্তু গভীর ভালোবাসা দিয়ে বেঁচে থাকতে শুরু করেছিল, যা ছিল এক নতুন, অজানা পথ।

Comments

    Please login to post comment. Login