Posts

উপন্যাস

প্রতিবাদ

March 11, 2025

MD Robiul Islam Bayzid

113
View

পর্ব- ১

কলেজের বড় গেট দিয়ে ঢুকতেই রবিনকে চারপাশ থেকে ছেলেমেয়েরা ঘিরে ধরে। কারো স্কলারশিপ নিয়ে সমস্যা, কেউ বাস ভাড়ার প্রতিবাদ করতে চায়, আবার কেউ হোস্টেলে নিরাপত্তা না থাকায় অভিযোগ করছে।

রবিন শুধু নামেই ছাত্র নেতা নয়, সে সত্যিকারের নেতা। অন্যায় দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয় না, দুর্বলদের পাশে দাঁড়ায়। তার চেহারায় সবসময় আত্মবিশ্বাসের ছাপ। কালো চুল, গভীর চোখ, আর চওড়া কাঁধের রবিনকে দেখলে সহজেই বোঝা যায়—এ সে মানুষ, যে ভয় পায় না।

সে সবার সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে। কেউ কেউ বলে, "ভাই, হোস্টেলের খাবার এত বাজে, কিভাবে খাব?"
অন্যজন বলে, "ম্যাডাম আমাদের ঠিকমতো ক্লাস নেন না, কিছু বললে উল্টো রাগ করেন!"

রবিন ধৈর্য ধরে শোনে, তারপর বলে, "আমরা ছাত্র, কিন্তু তার মানে এই না যে আমাদের কোনো অধিকার নেই। আমি কথা বলব, সমস্যা সমাধান হবেই!"

এই কথা বলার জন্যই পুরো কলেজ তাকে ভালোবাসে। শিক্ষক থেকে শুরু করে সাধারণ ছাত্ররা পর্যন্ত জানে—যদি অন্যায় হয়, রবিন সামনে দাঁড়াবে।

ইরা নতুন ছাত্রী, মাত্র কিছুদিন হলো কলেজে ভর্তি হয়েছে। প্রথম দিন থেকেই সে রবিনের নাম শুনেছে। প্রথমদিকে ভেবেছিল, "হয়তো আর দশটা ছাত্র নেতার মতো হবে, শুধু বক্তৃতা দেবে, কাজ করবে না।"

কিন্তু পরে দেখল, রবিন সত্যিই একজন লড়াকু মানুষ। যেখানেই অন্যায় হয়, সেখানেই সে হাজির।

ইরা খুব সাধারণ একটা মেয়ে। পরিপাটি সালোয়ার-কামিজ পরে, লম্বা চুল দুই ভাগ করে বাঁধে, চোখদুটো মায়াবী। কিন্তু তার হৃদয়ে একটা ভয় লুকিয়ে আছে—সে জানে, এই সমাজে মেয়েদের একা চলতে অনেক সমস্যা হয়।

সে চুপচাপ থাকতে ভালোবাসে, কিন্তু অন্যায় দেখলে রাগও হয়। একদিন বন্ধুদের সঙ্গে বসে সে বলছিল,
"মেয়েদের সম্মান নিয়ে কেন সবসময় টানাটানি হয়? কেন আমরা ভয় নিয়ে চলবো?"

বন্ধুরা হাসে, "তুই এসব নিয়ে ভাবিস কেন? আমাদের তো এমনই চলে আসছে!"

ইরা চুপ করে যায়, কিন্তু মনে মনে ভাবে—"একদিন নিশ্চয়ই কেউ এই নিয়ম ভাঙবে!"

সেদিন বিকেলবেলা ক্লাস শেষে ইরা কলেজের পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। চারপাশটা বেশ ফাঁকা, অন্য ছাত্ররা চলে গেছে। সে একা থাকলেও চিন্তিত ছিল না, কারণ এই পথ দিয়েই প্রতিদিন যায়।

কিন্তু হঠাৎ করেই তিন-চারজন ছেলে সামনে এসে দাঁড়ায়। এদের একজন ইরাকে দেখে বাঁকা হাসে, "তুমি তো খুব স্মার্ট, তাই না? আমাদের সঙ্গে একটু গল্প করো না!"

ইরা চমকে ওঠে। সে দ্রুত পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চায়, কিন্তু ওরা পথ আটকে দাঁড়ায়। একজন হাত বাড়িয়ে দেয়, "এই ভয় কিসের? আমরা কি খেয়ে ফেলবো?"

ইরার বুকের ভেতর ধকধক করতে থাকে। সে চারপাশে তাকায়, কেউ নেই। মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরতে থাকে—"আজ যদি কেউ না আসে, তাহলে কী হবে?"

ছেলেরা হাসতে থাকে, যেন মেয়েদের ভয় দেখানো তাদের জন্য মজার কিছু।

ঠিক তখনই পেছন থেকে একটা গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে আসে—

"ওরা পিছিয়ে যাবে, নাকি আমি ব্যবস্থা নেব?"

সবাই ঘুরে দেখে, রাস্তার ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে রবিন। তার চোখ দুটো জ্বলছে, মুখে কোনো হাসি নেই।

বখাটেরা প্রথমে কিছুটা হকচকিয়ে যায়, তারপর একজন বলে, "এই তো, রবিন ভাই! আমরা তো মজা করছিলাম!"

রবিন এক ধাপ সামনে এগিয়ে আসে, "মজা? মেয়েদের ভয় দেখানো মজা? আজ তোদের মজার শেষ করে দেব!"

ওদের একজন কিছু বলতে যাবে, কিন্তু রবিন আর সুযোগ দেয় না। সে ঝটপট এক ঘুষি বসিয়ে দেয় সামনে দাঁড়ানো ছেলেটার মুখে। বাকিরা ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়।

রবিন গর্জে ওঠে, "আজ যদি তোরা এখান থেকে না পালাস, তাহলে কলেজে তো দুর্দশা হবে, থানায়ও জায়গা পাবি না!"

ছেলেগুলো দৌড়ে পালিয়ে যায়। ইরা তখনও ভয় পেয়ে কাঁপছে।

রবিন তার দিকে তাকিয়ে বলে, "ভয় পেয়ো না, তুমি নিরাপদ আছো।"

ইরা ধীরে ধীরে বলে, "তোমাকে ধন্যবাদ, যদি তুমি না থাকতে..."

রবিন থামিয়ে দিয়ে বলে, "ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। আমি চাই, একদিন কোনো মেয়েকে যেন এভাবে ভয় পেতে না হয়!"

ইরা তখন প্রথমবারের মতো রবিনের দিকে ভালো করে তাকায়। মনে হয়, এই ছেলেটা শুধু একজন নেতা নয়, সত্যিকারের নায়ক।

ইরা জানে, সে ধীরে ধীরে এক গভীর অনুভূতিতে ডুবে যাচ্ছে। প্রতিদিন কলেজে রবিনকে দেখলে তার হৃদয় একটু বেশি বেঁধে যায়, কথা বলতে গেলেই গলা শুকিয়ে আসে।

কিন্তু সে ভয় পায়—"আমি তো একা নই, পুরো কলেজের মেয়েরাই ওকে পছন্দ করে! তাহলে আমি কেন আলাদা হব?"

রবিন সবসময় ব্যস্ত থাকে। সমস্যা হলে ছুটে যায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে। হাসিমুখে সবার সঙ্গে কথা বলে, কিন্তু কেউ কি কখনো ভেবে দেখেছে—তার নিজের মনের ভেতর কী চলছে?

ইরা লক্ষ করেছে, রবিন কখনোই কারও প্রতি আলাদা করে মনোযোগ দেয় না। সবাই ওকে চায়, কিন্তু সে কারও দিকে তাকায় না। যেন তার জীবনে ভালোবাসার জন্য জায়গাই নেই।

একদিন ইরা তার বান্ধবী নীহারকে বলল, "তোর কি মনে হয়, রবিন কাউকে ভালোবাসতে পারে?"

নীহার হাসল, "হাসাস না! রবিন শুধু লড়াই করতে জানে, ভালোবাসতে না।"

ইরা চুপ করে যায়। তার মনে হয়, "তাহলে কি আমার ভালোবাসা কোনোদিনই পৌঁছাবে না?"
 

চলবে ্্্

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Jui Gaming 8 months ago

    পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।