"তৃষ্ণা!"
বাড়ির পেছনের ছোট্ট লেবুগাছের নিচে বসে ছিল তৃষ্ণা, একটা বই হাতে নিয়ে। বই পড়ার সময় সে কারও দিকে তাকাত না, চারপাশের সব শব্দ যেন মিলিয়ে যেত।
আরিয়ান দৌড়ে এসে তার সামনে দাঁড়াল। "তুমি কি শোনো না? আমি আধঘণ্টা ধরে ডাকছি!"
তৃষ্ণা বইয়ের পাতা উল্টে বলল, "তুমি তো রোজই ডাকো, আমি কি রোজ শোনার জন্য বসে থাকব?"
আরিয়ান হালকা হাসল। তারপর হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বলল, "তোমাকে কিছু বলব?"
তৃষ্ণা এবার তাকাল, "বলো।"
"আমার খুব ভয় করে…"
তৃষ্ণার চোখ কুঁচকে গেল, "কিসের ভয়?"
আরিয়ান নরম স্বরে বলল, "একদিন আমরা একে অপরকে হারিয়ে ফেলব।"
তৃষ্ণা চুপ করে গেল। হঠাৎ বুকের ভেতরটা কেমন যেন হিম হয়ে এল। ছোট্ট একটা দুশ্চিন্তা, যা আগে কখনও আসেনি, আজ প্রথমবার অনুভব করল।
সে ধীরে বলল, "আমরা তো সারাজীবন বন্ধু থাকব, তাই না?"
আরিয়ান তার দিকে তাকিয়ে হাসল, কিন্তু সেই হাসির ভেতরে কোথাও যেন একটা চাপা কষ্ট ছিল।
---
ক্লাস নাইনে উঠেছে তৃষ্ণা আর আরিয়ান। সম্পর্কটা তখনও বন্ধুত্বের, কিন্তু কোথায় যেন একটু একটু বদল আসতে শুরু করেছে।
তৃষ্ণা এখন আরিয়ানকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারে না, আর আরিয়ান সবসময় তৃষ্ণার পাশে থাকতে চায়।
একদিন স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল তৃষ্ণা, বিকেলের আলো তার মুখে পড়েছিল। হালকা বাতাসে তার চুল উড়ছিল, গভীর চোখদুটো আরও মায়াময় লাগছিল।
আরিয়ান দূর থেকে তাকিয়ে থাকল। অনেকদিন ধরে সে এই অনুভূতিটা বোঝার চেষ্টা করছে—কেন তৃষ্ণার দিকে তাকালে মনে হয়, সে দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর মানুষকে দেখছে?
হঠাৎ তৃষ্ণা তাকিয়ে ফেলল, আরিয়ান দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিল।
"তুমি এতক্ষণ ধরে তাকিয়ে ছিলে কেন?"
আরিয়ান হেসে বলল, "তুমি সুন্দর লাগছিলে।"
তৃষ্ণার গাল লাল হয়ে উঠল। সে কিছু বলল না, শুধু খোলা জানালার দিকে তাকিয়ে রইল।
এটাই প্রথমবার, যখন তারা বুঝতে পারল, বন্ধুত্বের মধ্যে কোথাও একটা মৃদু ভালোবাসার অনুভূতি ঢুকে পড়েছে।
---
সবকিছু খুব সুন্দর চলছিল। কিন্তু জীবনে কি কিছুই স্থায়ী থাকে?
তৃষ্ণার বাবা হঠাৎ চাকরির কারণে ঢাকায় বদলি হলেন। তাদের পুরো পরিবার এক মাসের মধ্যে শহর ছাড়বে।
খবরটা শুনে আরিয়ান হতবাক হয়ে গেল।
"তুমি চলে যাচ্ছ?"
তৃষ্ণা মুখ নিচু করে বলল, "হ্যাঁ।"
আরিয়ান কিছু বলল না। কয়েক সেকেন্ড নীরব থাকার পর ধীরে বলল, "আমি কি তোমাকে চিঠি লিখতে পারব?"
তৃষ্ণা তাকিয়ে বলল, "তুমি লিখবে?"
"হ্যাঁ, আর তুমি উত্তর দেবে?"
তৃষ্ণা হেসে মাথা নাড়াল। "অবশ্যই দেব।"
কিন্তু হঠাৎ তৃষার বাবা বললো না আমার ট্রান্সফার হবে না। অনেক কষ্ট করে বসকে বুঝিয়ে ট্রান্সফার বাতিল করিয়েছি।
এই কথা শুনে তৃষা এক মুহুর্ত দেরি না করে আরিয়ান কে জানালো। আরিয়ান খবরটা শুনে খুব খুশি হলো।
কিন্তু তারা তখনও জানত না, জীবন কখনো আমাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে দেয় না।