Posts

উপন্যাস

প্রতিবাদ

March 12, 2025

MD Robiul Islam Bayzid

102
View

পর্ব-২

ইরা প্রতিদিন রবিনকে দেখে, কিন্তু কিছু বলার সাহস হয় না। সে ভাবে, "যদি বলি, আর সে আমাকে ফিরিয়ে দেয়?"

একদিন লাইব্রেরিতে বসে ইরা রবিনকে দেখল। তার সামনে অনেক বই, কিন্তু মন পড়ায় নেই। সে রবিনকে দেখছে, আর মনে মনে বলছে, "কেন তুমি এমন? কেন তুমি কারও অনুভূতি বুঝতে চাও না?"

হঠাৎ রবিন চোখ তুলে তাকায়। ইরা দ্রুত বইয়ে চোখ রাখে, যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু সে অনুভব করে, তার বুকের ভেতর যেন ঝড় বইছে।


---

রবিনের নিরাসক্ততা: কারণ কি লুকিয়ে আছে?

রবিন প্রেম থেকে এত দূরে কেন? কেউ জানে না। ইরার মনে হয়, সে শুধু ব্যস্ত না, তার ভেতরেও কিছু একটা আছে—কোনো চাপা কষ্ট, কোনো না বলা গল্প।

কিন্তু সে জানে, এই গল্প এখনই জানা যাবে না।

ইরার লুকিয়ে রাখা অনুভূতি

একদিন কলেজের মাঠে বসে ছিল ইরা। কিছু বন্ধুরা পাশেই গল্প করছিল, কিন্তু তার মন অন্য কোথাও ছিল।

রবিন মাঠের একপাশে কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে কথা বলছিল। ইরা দূর থেকে তাকিয়ে ছিল, দেখে মনে হচ্ছিল রবিন যেন একটা আলাদা জগতের মানুষ। কেউ তার কাছে আসে, সমস্যার কথা বলে, সমাধান পায়।

কিন্তু রবিনের নিজের কোনো সমস্যা কি নেই?

নীহার পাশে বসে ইরাকে খোঁচা দিয়ে বলল, "তোর কী হয়েছে? সকাল থেকে দেখছি মন খারাপ!"

ইরা একটু হাসল, "কিছু না... তোর কি মনে হয়, রবিন কখনো কাউকে পছন্দ করবে?"

নীহার কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল, তারপর বলল, "হতে পারে, কিন্তু সে সেটা সহজে প্রকাশ করবে না।"

ইরা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। "হয়তো কোনোদিন করবে না..."


রবিন অনেকের সঙ্গে মিশলেও, তার হৃদয়ের দরজা যেন বন্ধ। কেউ কি কখনো ভেবেছে, সে কেন এতটা একা থাকে?

একদিন লাইব্রেরিতে ইরা বই দেখছিল। হঠাৎ সে দেখল, রবিন এক কোণে বসে গভীর চিন্তায় ডুবে আছে। তার সামনে খোলা বই, কিন্তু সে যেন অন্য কিছু ভাবছে।

ইরা অবাক হয়ে ভাবল, "তার চোখের ভেতরে একটা চাপা কষ্ট আছে... কিন্তু সেটা কী?"

সে ইচ্ছে করেই রবিনের সামনে দিয়ে হেঁটে গেল, কিন্তু রবিন মাথা তুলেও তাকাল না। যেন সে এই জগতের কেউ নয়, অন্য কোথাও হারিয়ে গেছে।

দিন যত যাচ্ছে, ইরার মনে রবিনের জন্য অনুভূতি তত গভীর হচ্ছে। কিন্তু সে কিছুতেই বলতে পারছে না।

"আমি কি শুধু একজন সাধারণ মেয়ে, যে তার প্রতি অনুভূতি লুকিয়ে রাখবে?"

কিন্তু সে ভয় পায়।

💔 যদি রবিন ফিরিয়ে দেয়?
💔 যদি সে সত্যিই কখনো প্রেমে না পড়ে?
💔 যদি সে ইরাকে অন্য সবার মতো সাধারণ ভাবে?

এই সব ভাবনায় ইরা চুপ হয়ে যায়।

ইরা একা একা পরিকল্পনা করতে শুরু করে। এটা শুধু একটা সাধারণ প্রপোজাল হবে না—এটা হবে তার হৃদয়ের সবচেয়ে সত্যি অনুভূতির প্রকাশ।

💖 সে কলেজের পুরোনো মাঠে সব আয়োজন করবে—সেখানে যেখানে প্রথমবার রবিনকে দেখে তার ভালো লেগেছিল।
💖 কিছু ছোট লাইট, কিছু ফুল, আর হালকা মিউজিক—যেন পরিবেশটা ঠিক তার মনের মতো হয়।
💖 নীহার ও কিছু বন্ধুকে জানায়, তারা দূর থেকে দেখতে থাকবে, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসবে না।

সন্ধ্যা নামার পর, ইরা রবিনকে সেখানে ডাকল।

রবিন এল, স্বাভাবিকভাবেই অবাক হলো। "কী ব্যাপার, এত আয়োজন কিসের?"

ইরা তার দিকে তাকিয়ে হাসল, কিন্তু বুকের মধ্যে ধুকপুকানি বাড়ছিল।

সে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে এসে বলল,

"রবিন, আমি অনেকদিন ধরে এটা বলতে চাইছিলাম... আমি তোমাকে ভালোবাসি।"

রবিন চমকে উঠল, কিন্তু কিছু বলল না।

ইরা সাহস করে এগিয়ে গেল। "তুমি শুধু একজন নেতা নও, তুমি এমন একজন, যার জন্য আমার মন কাঁদে, যে আমার প্রতিটি ভাবনার অংশ। আমি চাই, তুমি আমার পাশে থাকো, শুধু একজন পথপ্রদর্শক হিসেবে নয়—একজন সঙ্গী হিসেবে।"

তার চোখে জল চিকচিক করছিল, কিন্তু সে হেসে বলল, "আমি জানি, হয়তো আমি তোমার জন্য আলাদা কেউ নই। কিন্তু তুমি আমার জন্য একদম অন্যরকম।"

সারা কলেজের যত মেয়ে রবিনকে পছন্দ করুক না কেন, ইরার ভালোবাসা সবার চেয়ে আলাদা, এটা সে বিশ্বাস করে।

রবিন কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। বাতাস কেমন যেন ভারী হয়ে গেল।

তারপর শান্ত স্বরে বলল, "ইরা, আমি তোমার অনুভূতিকে সম্মান করি। তুমি অসাধারণ, আর তোমার সাহসের প্রশংসা করি। কিন্তু..."

ইরার হৃদয় ধক করে উঠল। "কিন্তু কী?"

রবিন তাকাল, তার চোখে দুঃখের ছায়া। "আমি প্রেমের জন্য তৈরি নই। আমার জীবনে এমন কিছু আছে, যা আমাকে এই পথে যেতে দেবে না। আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও, তাই প্লিজ, এটা ভুলে যাও।"

ইরার মনে হলো, তার সমস্ত পৃথিবী ভেঙে পড়ল। সে কিছু বলার চেষ্টা করল, কিন্তু গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না।

রবিন ধীরে ধীরে বলল, "তুমি আমার একজন ভালো বন্ধু, সবসময় থাকবে। কিন্তু আমি তোমাকে সে জায়গা দিতে পারব না, যেটা তুমি চাইছো।"


ইরা আর নিজেকে সামলাতে পারল না। তার চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।

সে মাথা নিচু করে বলল, "আমি ভুল করিনি, তাই না? আমার অনুভূতিটা সত্যি ছিল... কিন্তু তুমিও সত্যি।"

তারপর সে এক দৌড়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গেল, কান্না চাপতে চাপতে।

নীহার ও বন্ধুরা দূর থেকে দেখছিল, তারা দৌড়ে ইরার কাছে গেল।

নীহার বলল, "ইরা, প্লিজ কেঁদো না... সব ঠিক হয়ে যাবে।"

কিন্তু ইরা শুধু মাথা নাড়িয়ে বলল, "না, সব ঠিক হবে না।"

সেই রাতটা ইরার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের রাত হয়ে থাকল।

রবিন জানত, তার পথ কখনো সহজ ছিল না। তবে এবার যেন চারপাশের বাতাসও ভারী হয়ে উঠেছে। কোথাও যেন একটা বিপদের আভাস আছে, কিন্তু সেটার উৎস বুঝতে পারছে না।


অদৃশ্য শত্রুর প্রথম আঘাত

কলেজের ছাত্ররা আগের মতোই তার কাছে আসে, সমস্যা জানায়, সমাধান চায়। কিন্তু সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় রবিন টের পাচ্ছে, কোথাও কিছু একটা গড়বড় হচ্ছে।

📍 একজন ছাত্র এসে অভিযোগ করল, কলেজের ফান্ড থেকে টাকা উধাও হয়েছে—আর কেউ কেউ রবিনের নাম বলছে।
📍 ক্লাসে ঢোকার সময় কিছু ছাত্র কানাঘুষা করছিল—কেউ একজন গোপনে রবিনের বিরুদ্ধে বদনাম ছড়াচ্ছে।
📍 কয়েকজন বন্ধুর আচরণও কেমন যেন বদলে গেছে, যেন তারা রবিনের ওপর সন্দেহ করতে শুরু করেছে।

কিন্তু কারা এটা করছে? কেন?

প্রপোজাল প্রত্যাখ্যানের পর থেকে ইরা কেমন যেন বদলে গেছে।

💔 সে আর রবিনের সামনে সহজ হতে পারছে না।
💔 সে কিছুটা দূরত্ব রাখছে, যদিও মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে।
💔 কিন্তু সে নিজেও টের পাচ্ছে, রবিনও বদলেছে।

একদিন ক্যান্টিনে বসে নীহার বলল, "রবিনের কী হয়েছে জানিস? আজকাল কেমন যেন চুপচাপ থাকে।"

ইরা কিছু না বলেই এক গ্লাস পানি নিয়ে বসে রইল।

"তোর কি মনে হয়, ওর জীবনে কিছু একটা হচ্ছে?" নীহার প্রশ্ন করল।

ইরা মৃদু স্বরে বলল, "হয়তো... কিন্তু ও আমাকে বলবে কেন?"

রবিনের একা লড়াই

রবিন বুঝতে পারছে, কেউ তার বিরুদ্ধে খেলায় নেমেছে।

একদিন, সে গভীর রাতে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন পেল। ওপাশ থেকে কেউ ধীরে ধীরে বলল,

"সবাই তোমাকে বিশ্বাস করে, তাই না? খুব তাড়াতাড়ি দেখবে, তোমার নিজের ছায়াও তোমার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।"

ফোন কেটে গেল।

রবিন প্রথমবার একটু ভয় পেল।

রবিনের চারপাশের পরিবেশ বদলে যাচ্ছে। একটা সময় ছিল, যখন সবাই তার পাশে থাকত, তার কথা শুনত। কিন্তু এখন, ধীরে ধীরে সেই ভরসা আর বিশ্বাস ভেঙে যাচ্ছে।

নতুন অভিযোগ, নতুন বিপদ

📌 কলেজের একদল ছাত্র হঠাৎ রবিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলল—সে নাকি কোনো এক গোপন পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত।
📌 একজন অধ্যাপক তাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করলেন, "তুমি কি সত্যিই ফান্ডের টাকা নয়ছয় করেছ?"
📌 কিছু ছাত্র তার দিকে এমনভাবে তাকাচ্ছিল, যেন সে অপরাধী!

রবিন হতভম্ব! এই মিথ্যা অভিযোগগুলো কে ছড়াচ্ছে?
 

চলবে ্্্

Comments

    Please login to post comment. Login